আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই। আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি। আজ আপনাদের সাথে আলোচনা করবো ১৭ ডিজিটের এনআইডি সম্পর্কে।
আরো পড়ুন: nid ছবি পরিবর্তন বা nid ছবি পরিবর্তন ফরম।
যারা ১০ সংখ্যার NID থেকে ১৭ সংখ্যার এনআইডি বের করতে চান তাদের জন্য আমার আজকের আর্টিকেলটি খুবই গুরুত্ত্বপূর্ণ হতে চলেছে। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে কাজ শুরু করা যাক।
১৭ ডিজিটের এনআইডি
১৭ ডিজিটের এনআইডি বা জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর হলো বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য একটি অনন্য সংখ্যাসূচক পরিচয়পত্র। এটি ১৯৭৩ সালে প্রথম চালু করা হয়েছিল এবং ২০২২ সালে ১০ ডিজিটের নতুন স্মার্ট এনআইডি কার্ড চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়েছিল।
১৭ ডিজিটের এনআইডি কার্ডের বিন্যাস:১৭ ডিজিটের এনআইডি
- প্রথম ৪ টি সংখ্যা: জন্ম সাল
- পরবর্তী ১৩ টি সংখ্যা:
- প্রথম ৭ টি সংখ্যা: জেলা কোড, উপজেলা কোড, ইউনিয়ন/পৌরসভা কোড এবং ওয়ার্ড/মৌজা কোড
- পরবর্তী ৬ টি সংখ্যা: ক্রমিক নম্বর
১৭ ডিজিটের এনআইডি ব্যবহার:১৭ ডিজিটের এনআইডি
- ভোটদান
- সরকারি সেবা গ্রহণ
- ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা
- মোবাইল ফোন সিম কার্ড কেনা
- জমি-জমা রেজিস্ট্রেশন
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি
- চাকরির আবেদন
১৭ ডিজিটের এনআইডি থেকে ১০ ডিজিটের স্মার্ট এনআইডি নম্বর বের করার নিয়ম:
- ১৭ ডিজিটের এনআইডি থেকে প্রথম ৪ টি সংখ্যা (জন্ম সাল) বাদ দিন।
- বাকি ১৩ টি সংখ্যা আপনার ১০ ডিজিটের স্মার্ট এনআইডি নম্বর হবে।
উদাহরণ:১৭ ডিজিটের এনআইডি
ধরুন আপনার ১৭ ডিজিটের এনআইডি নম্বর হলো ১৯৮০০১০১০০০০০০০০১।
- প্রথম ৪ টি সংখ্যা (১৯৮০) বাদ দিলে,
- আপনার ১০ ডিজিটের স্মার্ট এনআইডি নম্বর হবে ০১০১০০০০০০০১।
১০ ডিজিটের NID থেকে ১৭ ডিজিটের এনআইডি বের করার নিয়ম।
স্মার্ট আইডি কার্ড বিতরণ করার সময় পুরাতন ১৭ সংখ্যা এবং ১৩ সংখ্যার জাতীয় পরিচয় পত্র গুলো জমা নিয়ে নেয়া হয়। এর ফলে পরবর্তী সময়ে আমাদের পুরাতন লেমেনেটিং আইডি কার্ডের নাম্বারটি যখন কোন কারণে প্রয়োজন হয় তখন বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। আপনার কাছে থাকা ১০ ডিজিটের NID card থেকে ১৭ ডিজিটের এনআইডি নাম্বার বের করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে দেখতে পারেন।
আপনি যেহেতু এই লেখাটি পড়ছেন তার মানে আপনার কোননা কোন কাজে আগের ১৭ সংখ্যার অথবা ১৩ সংখ্যার এনআইডি নাম্বারটি প্রয়োজন। আগের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে কাহজ পত্র করে থাকলে বর্তমান সমেয়ে যদি হালনাগাত অথবা ডকুমেন্ট যাচাই করার প্রয়োজন হয় তাহলে তাছাড়া আরো নানান কাজে পুরাতন ভোটার আইডি কার্ডের নাম্বার প্রয়োজন হয়ে থাকে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-
- সিম রিপ্লেস করতে (পুরাতন আইডি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন হলে)
- মোবাইল ব্যাংকিং তথ্য হালনাগাত
- দলিল অনুসারে মালিকানা নিশ্চিত করনে
এছাড়াও যে সব কাজে পূর্বের আইডি কর্ড ব্যবহার করা হয়েছিলো সেসব ক্ষেত্রে কোন তথ্য যাচাই করন প্রয়োজন হলে Old NID Number প্রয়োজন হয়ে থাকে।
নতুন এনআইডি থেকে পুরাতন আইডি কার্ডের নাম্বার দেখুন
আপনার নতুন ১০ সংখ্যার এনআইডি কার্ড হতে পুরাতন ১৭ সংখ্যার বা ১৩ সংখ্যার নাম্বার বের করার জন্য NID কার্ডের পিছনে থাকা Bar Code স্ক্যান করতে হবে। বার কোড স্ক্যান হয়ে গেলে বেশ কিছু কোড দেখতে পাবেন। তার মধ্যে <pin></pin> টেগের মধ্যে যে সংখ্যা দেখতে পাবেন সেটাই আপনার পুরাতন এনআইডি কার্ডের নাম্বার।
এখানে ১৭ সংখ্যার নাম্বার থাকে যা পুরাতন এনআইডি আইডি কার্ডের নাম্বার। যদি খেয়াল করেন তাহলে দেখতে পারবেন নাম্বার গুলোর প্রথম চারটি সংখ্যা হলো আপনার জন্ম সাল, এই ১ম চারটি ডিজিট বাদ দিয়ে অবশিষ্ট ১৩টি সংখ্যা বা ডিজিট হলো আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার।
স্মার্ট কার্ড থেকে লেমোনেটিং আইডি কার্ডের নাম্বার
প্রথম দিকে ভোটার আইডি কার্ডে ১৩ সংখ্যার নাম্বার দেয়া থাকত। পরবর্তী NID Card নাম্বার ১৭ সংখ্যার করা হয়েছে। বর্তমানে স্মার্ট কার্ড অথবা অনলাই কপি সব ক্ষেত্রেই ১০ সংখ্যার এনআইডি নাম্বার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আপনি যদি স্মার্ট কার্ড দিয়ে পুরানো ভোটার আইডি কার্ডের নাম্বার জানতে চান তাহলে স্মার্ট কার্ডের পেছনের অংশে থাকা Bar Code টি স্ক্যান করুন। এটি স্ক্যান করার জন্য গুগল প্লে স্টোর থেকে QR কোড স্ক্যানার নামক এপটি ডাউনলোড করে নিন। তারপর অ্যাপটি ওপেন করে কোড স্ক্যান করুন।
আরো পড়ুনঃ অনলাইন থেকে এনআইডি কার্ড ডাউনলোড।
সফল ভাবে স্ক্যান হয়ে গেলে আপনার পুরাতন এন আইডি কার্ডের নাম্বার, ইংরেজি অক্ষরে নাম এবং জন্ম তারিখ দেখতে পাবেন। আর <p>ID_Number</p> এর মধ্যে যে সংখ্যা গুলো থকবে তাই হচ্ছে পুরাতন লেমেনেটিং করা আইডি কার্ডের নাম্বার।
১৭ সংখ্যার NID Card নাম্বার
আমারা আমাদের পরিচয় পত্রের পেছনের অংশে থাকা QR কোডটি হয়ত সবাই লক্ষ করেছি। কিন্তু এটা স্ক্যান করলে যে আমাদের পুরাতন ১৭ ডিজিট কিংবা ১৩ ডিজিটের আইডি নাম্বার বের হয় সেটা হয়তো খুব কম মানুষের জানা।
আপনি যখন জাতীয় পরিচয় পত্রের পেছনের বারকোডটি স্ক্যান করবেন তখন সেখানে কিছু টেক্সট দেখতে পাবেন। এই ট্যাক্সট গুলোর মধ্যে <p></p> যে সংখ্যা গুলো থাকবে সেটি আপনার old NID number
১৩ সংখ্যার এনআইডি নাম্বার
১৭ সংখ্যার আইডি নাম্বারে জন্ম সাল যুক্ত থাকে অন্য দিকে ১৩ ডিজিটের মধ্যে থাকে না। তাই উপরের নিয়ম অনুসারে প্রথমে সতেরো ডিজিটের Old NID number বের করুন। তারপর প্রথম চারটি ডিজিট বাদ দিয়ে বাকি সংখ্যা গুলোই ১৩ সংখ্যার আইডি নাম্বার নির্দেশ করবে।
১৭ ডিজিটের এনআইডি
উপরের ছবিতে মার্ক করে দেখানো হয়েছে তেরো সংখ্যার আইডি কার্ডের জন্য কোন অংশটুকু নিতে হবে। আর যদি সতেরো সংখ্যার ID নাম্বার নিতে চান তাহলে প্রথম দিকের চারটি সংখ্যা সহকারে নিলে হয়ে যাবে।
১৭ সংখ্যার আইডি নম্বর কেন প্রয়োজন
আপনার বিকাশ, নগদ বা রকেট একাউন্ট টি যদি পুরনো ১৭ সংখ্যার কিংবা ১৩ সংখ্যার আইডি কার্ড দিয়ে নিবন্ধন করা থাকে তাহলে সে একাউন্ট এর তথ্য হালনাগাদ করার ক্ষেত্রে ১০ সংখ্যার নতুন জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর গ্রহণ করা হয় না। এর জন্য পূর্বের আইডি কার্ড প্রয়োজন হয়।
এমনকি আপনার হারিয়ে যাওয়া কোন সিম কার্ড (SIM Card) পুনরায় উঠাতে চাইলেও পুরাতন nid নাম্বার প্রয়োজন হবে। আপনার কাছে পুরাতন এনআইডি কার্ডের ফটোকপি বা ছবি থাকলে সেটি দিয়ে কাজ চালাতে পারবেন।
শেষ কথাঃ ১৭ ডিজিটের এনআইডি
১৯৭৩ সালে সর্বপ্রথম শুরু হওয়া ১৭ ডিজিটের এনআইডি কার্ড, বাংলাদেশের প্রত্যোক নাগরিকের পরিচয়ের প্রতীক হিসেবে দীর্ঘ ৪৯ বছর যাবত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ভোটদান, যে কোন সরকারি সেবা, ব্যাংকিং, শিক্ষা, চাকরি এমনকি জমি-জমা রেজিস্ট্রেশনের মতো জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই এর ব্যবহার ছিল অপরিহার্য। ২০২২ সালে ১০ ডিজিটের স্মার্ট এনআইডি কার্ড চালু হওয়ার পর, ১৭ ডিজিটের এনআইডি কার্ডের ব্যবহার কমে এলেও, এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। এই কার্ডের কিছু উল্লেখযোগ্য দিক: জাতীয় পরিচয়পত্র এর যাত্রা: ১৭ ডিজিটের এনআইডি কার্ড ছিল বাংলাদেশের সর্বপ্রথম জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবস্থা। গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা: দীর্ঘ ৪৯ বছর ধরে এটি নাগরিকদের পরিচয় প্রমাণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
ঐতিহাসিক মূল্য: বাংলাদেশের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সাক্ষী এই কার্ড। ১৭ ডিজিটের এনআইডি কার্ড, যদিও এখন আর সক্রিয় নয়, তবুও এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং অবদান অস্বীকার করা যায় না। এই কার্ডের মাধ্যমে আমরা: জাতীয় পরিচয় ব্যবস্থার ক্রমবিকাশে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অনুধাবন করতে পারি। প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে আমাদের পরিচয় ব্যবস্থার উন্নয়ন লক্ষ্য করতে পারি। ভবিষ্যতের জন্য আরও উন্নত ও নিরাপদ পরিচয় ব্যবস্থার প্রত্যাশা পোষণ করতে পারি। ১৭ ডিজিটের এনআইডি কার্ড, বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
Leave a Comment