জমি খারিজ কি বা জমি খারিজ করার পদ্ধতি বলতে আসলে কি বোঝায়। আজ আমি আপনাদের সাথে এসকল বিষয় অর্থাত জমি খারিজ বলতে কি বোঝায় তথা জমি খারিজ করার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তো চলুন শুরু করা যাক।
আরো পড়ুন- অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম।
জমি খারিজ কি। জমি খারিজ করার পদ্ধতি
জমি খারিজ করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানার আগে জমি খারিজ বলতে আমরা কি বুঝি সেটি জানা জরুরি। তো বিষয়টি যদি সহজভাবে বলি তাহলে যা দাড়ায় তা হলো, কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বৈধভাবে কোন সম্পত্তির মালিক হওয়ার পর সরকারি রেকর্ড সংশোধন করে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে রেকর্ড হালনাগাদ করাকে জমি খারিজ বলা হয়। ”জমি খারিজ” এই নামটি বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নামে পরিচিত। কোথাও নাম জারি নামে পরিচিত, কোথাও নাম কর্তন নামে আবার কোথাও মিউটেশন নামেও পরিচিত অর্থাৎ অঞ্চলভেদে জমি খারিজ নামটি বিভিন্ন নামে পরিচিত।
জমি খারিজ কেন করতে হবে । জমি খারিজ করার পদ্ধতি
জমির বা যেকোন ভূসম্পত্তির বৈধ মালিকা প্রমাণের জন্য খারিজ করতে হয়। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বৈধভাবে কোন সম্পত্তির মালিকানা অর্জন করার পর অবশ্যই সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ঐ সম্পত্তির বিপরীতে নাম জারি বা জমি খারিজ করতে হবে। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যখন তার জমির খারিজ বা নাম জারি করে তখন তাকে একটি খতিয়ান সরবরাহ করা হয়। এই খতিয়ানকে সম্পত্তির মালিকানা সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত হিসাব বিবরণীও বলা হয়। কারণ এই খতিয়ানে সদ্য মালিকানাভুক্ত সম্পত্তি কোন জেলার, কোন থানার, কোন মৌজার, সম্পত্তির প্রকৃত মালিক কে, সম্পত্তির দাগ নাম্বার কত, সম্পত্তির খতিয়ান নাম্বার কত, সম্পত্তির পরিমাণ কত, খাজনা কত টাকা প্রভৃতি বিষয় উল্লেখ থাকে অর্থাৎ একটি সম্পত্তির অধিকাংশ তথ্যই এই খতিয়ানের মধ্যে থাকে।
জমি খারিজ করার পদ্ধতি
জমি খারিজ করার পদ্ধতি মোটেই কঠিন কোন কাজ নয়। আপনি চাইলে ঘরে বসেই অনলাইনে নিজে নিজেই আপনার মালিকানাভূক্ত জমির খারিজের কাজটি করে ফেলতে পারেন। অনলাইনে জমি খারিজ করার পদ্ধতি বেশ সহজ। যদি আপনি নিজের জমির খারিজটি নিজেই করতে চান সেই ক্ষেত্রে মাত্র ১১৭০ টাকা খরচ করেই কিন্তু আপনি আপনার জমির খারিজ এর কাজটি করতে পারেন। বিষয়টি আপনার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে? অবিশ্বাস্য মনে হলেও বিষয়টি সত্যি।
আপনি যদি অন্যের দ্বারস্থ না হয়ে নিজেই নিজের জমির খারিজের কাজটি করতে চান সেক্ষেত্রে আপনি আমার দেখানো জমি খারিজ করার পদ্ধতি এর প্রতিটি পদক্ষেপ অনুসরণ করতে পারেন। আশা করি আপনি উপকৃত হবেন। আমি যে প্রসেসের কথা বলব তাতে মাত্র ১১৭০ টাকা খরচ করেই (2024 সালে) নিজেই নিজের জমির নাম জারি বা খারিজটি করতে পারবেন। তার জন্য প্রথমে আপনাকে যা করতে হবে তা হলো নিন্মরুপ-
১. সর্বপ্রথম কাজ হচ্ছে আপনি যে সম্পত্তিটি আপনার নামে নাম জারি করবেন সেই সম্পত্তির মালিকানা সংক্রান্ত সকল ডকুমেন্টস সংগ্রহ করবেন।
২. আপনি যদি ক্রয় সূত্রে সম্পত্তির মালিক হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে ক্রয়সূত্রে সৃষ্টি হওয়া দলিলের সার্টিফাইড কপি সংগ্রহ করবেন।
৩. আপনি যার কাছ থেকে সম্পত্তিটি ক্রয় করেছেন তার নামে যে দলিল দস্তাবেজ রয়েছে, তার নামে যে খাজনাখারিজ রয়েছে সেই ডকুমেন্টগুলো সংগ্রহ করা।
৪. সর্বশেষ রেকর্ডকৃত খতিয়ান সংগ্রহ করা ।
৫. এছাড়াও সম্পত্তির মালিকানা বিষয়ক অন্যান্য যে সকল ডকুমেন্টস রয়েছে (যেমন- এস এ খতিয়ান, সি এস খতিয়ান, আর এস খতিয়ানসহ অন্যান্য যে সকল বায়া খতিয়ান গুলো রয়েছে প্রয়োজন অনুযায়ী সে সকল ডকুমেনটস সংগ্রহ করে নিবেন) সকল কাগজ ডকুমেন্টস আপনাকে সংগ্রহ করতে হবে অর্থাৎ উক্ত সম্পত্তির মালিকানার যে সকল ডকুমেন্টগুলো রয়েছে সেই ডকুমেন্টগুলো সর্বপ্রথম আপনাকে সংগ্রহ করতে হবে।
৬. এর সঙ্গে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র কপি লাগবে।
৭. আপনার এক কপি ছবি লাগবে এবং
৮. আপনার মোবাইল নাম্বার কিন্তু অবশ্যই লাগবে।
এ সকল ডকুমেন্টস গুলো সংগ্রহ করে তারপর আপনাকে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির খারিজের জন্য আবেদন করতে হবে।
জমি খারিজের আবেদন কোথায় করবেন
জমি খারিজ করার পদ্ধতি এর ধারাবাহিকতায় প্রথমেই যে বিষয়টি আসে তা হলো জমি খারিজের আবেদনটি কোথায় করবেন? ধরা যাক আপনি সকল ডকুমেন্ট সংগ্রহ করেছেন। এখন জমি খারিজের জন্য আবেদন করার পালা। আপনি আবেদনটি কোথায় করবেন। আবেদন করার জন্য আপনাকে বাংলাদেশ সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়ের www.land.gov.bd ওয়েব সাইটে প্রবেশ করে নামজারি বা মিউটেশন অপশনে গিয়ে আপনাকে খারিজের জন্য আবেদন করতে হবে।
জমি খারিজ করার পদ্ধতি
এখানে জমি খারিজের জন্য নিদৃষ্ট একটা ফর্ম রয়েছে। যাকে জমি খারিজ ফরম বলে। সেই ফর্মে পর্যায়ক্রমে যে সকল তথ্য গুলা চাইবে সে সকল তথ্য গুলো সেখানে ইনপুন দিতে হবে।
পাশাপাশি জমির মালাকানা সংক্রান্ত সকল ডকুমেন্টস স্ক্যান করে পিডিএফ করে সেখানে আপলোড দিতে হবে এবং আপনাকে অবশ্যই অনলাইন আবেদন ফ্রি এবং নোটিশ জারি ফি ৭০ টাকা সেটিও কিন্তু পরিশোধ করতে হবে। এটি আপনি অনলাইনেই পরিশোধ করতে পারবেন। এর জন্য বিকাশ, নগদ বা রকেটসহ যে সকল মাধ্যমে রয়েছে (যে গুলোর মাধ্যমে অনলাইন ট্রানজেকশন হয়) সেগুলো ব্যবহার করে টাকাটা পরিশোধ করতে পারবেন।
আপনি আবেদন করলেন, অনলাইনে যে আবেদন ফি এবং নোটিশ জারি বাবদ টাকা জমা দেওয়ার কথা রয়েছে সেটিও পরিশোধ করলেন। অর্থ পরিশোধ করার পর আপনার আবেদনটি কমপ্লিট হবে। কমপ্লিট হলে আপনার মোবাইলে একটি মেসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে এবং আপনি যে ৭০ টাকা পরিশোধ করেছেন সেটি চালানের মাধ্যমে যখন জমা হবে সেই ইনফরমেশনটিও আপনার মোবাইলে মেচেজের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে। আবেদন করা যখন কমপ্লিট হবে তখন আবেদনের একটি কপি ডাউনলোড করে প্রিন্ট দিতে হবে। প্রিন্ট দেওয়ার পরে আবেদন করার সময় আপনি যে সকল ডকুমেন্টস অনলাইন সাবমিট করেছেন সে সকল ডকুমেন্টসের এক সেট ফটোকপি এই আবেদনের সহিত সংযুক্ত করে সংশ্লিষ্ট এসি ল্যান্ড অফিসে জমা দিতে হবে।
আবেদন জমা দেওয়ার দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে আপনার আবেদনটি সুষ্ঠ তদন্তের জন্য এসিল্যান্ড মহোদয় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিসে প্রেরণ করবেন। যখন আপনার আবেদনটি এসি ল্যান্ড সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিসে প্রেরণ করবেন তখন আপনাকে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়ে তহশীলদারকে আপনার সম্পত্তির মালিকানার সকল কাগজপত্র দেখাতে হবে। তাফসিলদার আপনার সম্পত্তির মালিকানা সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করবেন এবং তার কাছে যে রেকর্ডগুলো রয়েছে সেগুলো যাচাই বাছাই করবেন। যাচাই বাছাই করে যদি সব কিছু ঠিক থাকে তখন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিস এর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা থেকে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট এসিল্যান্ড বরাবর প্রেরণ করবেন। এর সাথে কিন্তু সংশ্লিষ্ট খসড়া খতিয়ানও দিয়ে দিবেন।
এসিল্যান্ড মহোদয় প্রস্তাবনা ও খসড়া খতিয়ান পাওয়ার পরে কানুঙ্গ প্রতিবেদনের জন্য এবং শুনানির জন্য একটি তারিখ নির্ধারণ করবেন। সংশ্লিষ্ট এসিল্যান্ড মহোদয় যখন আপনার নাম জারি কেসটির শুনানির জন্য তারিখ নির্ধারণ করবেন সেই তারিখটি অবশ্যই আপনার মোবাইলে এসএমএস এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে। তাহলে যে তারিখটি থাকবে আপনার নামজারী কেসটি শুনানির জন্য সেই তারিখে অবশ্যই আপনাকে আপনার মূল কাগজপত্র নিয়ে সংশ্লিষ্ট এসিল্যান্ড অফিসে উপস্থিত থাকতে হবে। সংশ্লিষ্ট এসিল্যান্ড আপনার উপস্থিতিতে আপনার কাজগপত্র পর্যালোচনা করবেন এবং আপনার সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিস যে প্রস্তাবনা দিয়েছেন সেটিও পর্যালোচনা করবেন। কানুঙ্গ যে প্রতিবেদন দিয়েছেন সেটিও পর্যালোচনা করবেন
সবকিছু ঠিক থাকলে সংশ্লিষ্ট এসিল্যান্ড বা সহকারী কমিশনার ভূমি আপনার নামজারি কেসটিক মঞ্জুর করে দিবেন। যা এসএমএস এর মাধ্যমে আপনাকে জানিয়ে দেয়া হবে। আপনি এসএমএস পাওয়ার পরে যখন জানলেন যে আপনার নামজারি কেসটি মঞ্জুর হয়েছে এর দুই থেকে তিন দিনের মাথায় পুনরায় আপনাকে সংশ্লিষ্ট ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এসএমএস দেওয়া হবে যে আপনার নামজারি কেসটি মঞ্জুর হয়েছে এবং আপনাকে বলা হবে তার এগেনস্টে অর্থাত নামজারি কেস এর বিপরীতে ডিসিএ র ফিস পরিশোধ করুন। যখন আপনি এই এসএমএসটি পাবেন তখন আপনাকে ওই আগে যে সিস্টেমটির কথা উল্লেখ করেছি সেই সিস্টেমে ওয়েবসাইটে ঢুকে আপনার নামজারির পরিপ্রেক্ষিতে যে ডিসিএ ফিস রয়েছে ১১০০ টাকা সেটি আপনাকে পরিশোধ করতে হবে।
সেটিও আপনাকে অনলাইনে যে মাধ্যমগুলোর রয়েছে বিকাশ, নগদ বা রকেট ইত্যাদি ব্যবহার করে পরিশোধ করতে হবে। ১১০০ টাকা ডিসিআর ফিস পরিশোধ করলে এটি চালান হবে। এটি হতে সাধারণত ০২-০৩ দিন লাগে। চালান হয়ে যাওয়ার পরে অনলাইন থেকেই আপনার খতিয়ান ও ডিসিআর ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। আমি যে প্রসেসের কথা বলেছি মূলত এই প্রসেস এপ্লাই করেই জমির নামজারি বা খারিজ করা হয়। আপনি যদি নিজেই আপনার জমির নামজারি বা খারিজের কাজটি করতে চান সেক্ষেত্রে কিন্তু আপনি নিজেই তা করতে পারবেন। অন্যের দ্বারস্থ হওয়ার কোন প্রয়োজন নাই।
এটি একদম সহজ কাজ। আপনি শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো সংগ্রহ করে জাস্ট আমার দেখানো নিয়ম ফলো করে আবেদনটি করে দেন। আবেদন যখন আপনি করে দিবেন তখন বাকি কাজগুলো অনেকটা অটোমেটিক একটা সিস্টেমে হয়ে যাবে। আপনাকে আর তেমন কোন সমস্যায় পড়তে হবে না। আর আপনি যদি নিজ করতে না পারেন সেক্ষেত্রে নিকটস্থ কোন কম্পিউটারের দোকানে যান অথবা এসিল্যান্ড অফিসের আশেপাশে অনেক কম্পিউটারের দোকান থাকে সেই কম্পিউটার এর দোকান গুলোতে যান। কম্পিউটার দোকানে গিয়ে আপনি আবেদনটি করেন।
আবেদন করার পরে আপনি যে ট্রাকিং নাম্বারটা পাবেন সেটি সংগ্রহ করেন এবং পর্যায়ক্রমে এসএমএস এর মাধ্যমে যে ইনফরমেশন গুলো দেওয়া হবে অথবা আমি যে সিস্টেম এর কথা বলেছি সেই সিস্টেম ফলো করে আপনি নিজেই নিজের সম্পত্তির নামজারির কাজটি করতে পারবেন মাত্র ১১৭০ টাকা খরচ করে। এক্সট্রা কোন টাকা খরচ করার কোন প্রয়োজন হবে না যদি আপনার সম্পত্তির মালিকানার সকল কাগজপত্র ঠিক থাকে। সম্পত্তির মালিকানা যদি নিষ্কণ্টক হয়।
জমি খারিজ করতে কতদিন সময় লাগতে পারে-
এখানে আপনাদের সাথে আরো একটি তথ্য শেয়ার করি সেটি হলো আমি যে নামজারির প্রসেসটির কথা আপনাদের বলেছি এটি সম্পন্ন হতে সময় লাগে মাত্র ২৮ দিন। ২৮ দিনের মধ্যেই কিন্তু নামজারি হয়ে যায়। আবার আমরা অনেক সময় দেখি এর চেয়েও কম সময়ে কাজটি হয়ে যায়। ২১ দিন বা ২২ দিন বা ২৩ দিনের মাথায় কিন্তু নাম জারি হয়ে যায়। এটি কিন্তু সম্ভব। তাই আপনি অন্যের দ্বারস্থ না হয়ে নিজেই নিজের জমির নাম জারির কাজটি করতে পারেন।
ভবিষ্যতের ঝামেলা এড়াতে খতিয়ানের ভূমিকা-
দেখুন একজন মানুষ বিভিন্নভাবে জমির মালিক হতে পারে। দান-সূত্রে জমির মালিক হতে পারেন, ওয়ারিশন সূত্রে জমির মালিক হতে পারেন। তো আপনি যেকোনো বৈধ উপায়েই জমির বা সম্পত্তির মালিক হন না কেন সম্পত্তির মালিক হওয়ার পরে অবশ্যই আপনার উচিত খারিজ করে রেকর্ডটি হালনাগাদ করে নেওয়া। এতে করে ভবিষ্যতে আপনি সংশ্লিষ্ট জমির মালিকানা নিয়ে কোন সমস্যায় পড়বেন না। নয়ত আপনার সম্পত্তি নিয়ে যে কোন সমস্যায় পড়তে পারেন। সম্পত্তিটি পূর্বে যার নামে রেকর্ড ছিল সেই রেকর্ডটি পরিবর্তন করে বা সেই রেকর্ড থেকে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি কর্তন করে আপনার নামে হালনাগাদ করে নিবেন বা আপনার নামে নতুন একটি খতিয়ান সৃষ্টি করবেন। মনে রাখবেন সম্পত্তির মালিকানার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস হচ্ছে এই খতিয়ান বা খাজনা খারিজ।
জমির মালিকানা নিশ্চিতকরণে খতিয়ানের ভূমিকা-
জমিটির নতুন মালিকানা প্রাপ্ত হওয়ার পর খারিজ করে যে খতিয়ান দেওয়া হয় সেই খতিয়ানের মাধ্যমেই সরকার নিশ্চিত হয় যে, সম্পত্তিটি বর্তমানে কার কাছে রয়েছে বা সম্পত্তির প্রকৃতি কি, সম্পত্তির খাজনা কত টাকা এ সকল সার্বিক বিষয় সরকার অবগত হয়। আমরা অনেকেই মনে করি যে সাবকবলা দলিল বা দলিলের মাধ্যমে সম্পত্তি ক্রয় করলেই মনে হয় কাজ শেষ।
নাম জারি বা খতিয়ান আর করতে হবে না। এটা সম্পূর্ণ ভুল একটি ধারণা। আপনি যখনই কোন বৈধ উপায়ে সম্পত্তির মালিক হবেন তখন অবশ্যই আপনাকে পূর্বের খতিয়ানটি সংশোধন করে আপনার নামে নামজারি বা খারিজ করে হালনাগাদ করে নিবেন। কারণ আপনিই যে সম্পত্তির বর্তমান মালিক বা আপনি যে সম্পত্তিটি গ্রহণ করেছেন সেটি সরকারকে বুঝাতে হবে। অর্থাত সরকারিভাবে আপনার নামে ঐ সম্পত্তিটি থাকতে হবে। আর সরকারিভাবে কোন সম্পত্তি আপনার নামে থাকা মানে আপনার নামে ঐ সম্পত্তির খতিয়ান থাকা। সরকার খতিয়ানের মাধ্যমে বুঝবে যে সম্পত্তিটি আসলে আপনার।
FAQ’S
প্রশ্ন- জমি খারিজ করতে কি কি কাগজ লাগে?
উত্তর-
- নির্ধারিত আবেদনপত্র।
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের (NID) ফটোকপি।
- আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- জমির দলিলের (রেজিস্ট্রি, মোkabala ইত্যাদি) ফটোকপি।
- খতিয়ানের ফটোকপি।
- ভূমি উন্নয়ন কর প্রদানের রসিদের ফটোকপি।
- ওয়ারিশান সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
- বন্টননামা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
- কর্তৃপক্ষ (VDC/DB/RA) কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যের challan (যদি প্রযোজ্য হয়)।
- আইনজীবীর ক্ষেত্রে, আইনজীবীর ভিসিটিং কার্ড ও ক্ষমতাপত্রের ফটোকপি।
- অতিরিক্ত কাগজপত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
- যৌথ মালিকানাধীন জমি খারিজের ক্ষেত্রে, সকল সহমালিকের সম্মতিপত্র।
- দানের মাধ্যমে জমি খারিজের ক্ষেত্রে, দানপত্র।
- উত্তরাধিকারসূত্রে জমি খারিজের ক্ষেত্রে, উত্তরাধিকার সনদ পত্র।
প্রশ্ন- জমি খারিজ করতে কত টাকা লাগে?
উত্তর- জমি খারিজ করতে সর্বমোট ১১৭০ টাকা জমা দিতে হয়।
প্রশ্ন- জমি খারিজ না করলে কি হয়?
উত্তর- বৈধভাবে কোন জমি বা সম্পত্তি ক্রয় করার পর লিখিতভাবে এবং আইনগতভাবে ঐ সম্পত্তির উপর অধিকার স্থাপনের জন্য আইনগতভাবে যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তাকে জমির বা সম্পত্তির খারিজ বা নামজারি (মিউটেশন) বলে। কোন জমির বা সম্পত্তির নাম খারিজ বা নামজারি না করলে বিক্রেতা যেকোনো সময় আইনগতভাবে ঐ জমির উপর পুনরায় তার অধিকার দাবি করতে পারে। এর ফলে ক্রেতা টাকা এবং সম্পত্তি দুটি থেকে বঞ্চিত হবে। কারণ ঐ সম্পত্তি যে পরবর্তী ক্রেতার তার কোন বৈধ ডকুমেন্টস নেই। সুতরাং জমির নামজারি করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয়।
প্রশ্ন- জমি খারিজ করতে কতদিন সময় লাগে?
উত্তর- জমি খারিজ করতে সাধারণত ২৮ দিন সময় লাগে। তবে কখনো কখনো এর থেকে কম বা বেশি সময়ও লাগতে পারে।
শেষ কথা- জমি খারিজ করার পদ্ধতি সম্পর্কে আপনাদেরকে আমি সর্বোচ্চ পরিমাণ তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আপনারা যদি অনলাইনে আরো কোথাও এ বিষয়ে ঘাটাঘাটি করেন তাহলে এর থেকে বেশি তথ্য হয়ত পাবেন না। তারপরও আপনারা চাইলে ঘেটে দেখতে পারেন। জমি খারিজ করার পদ্ধতি সম্পর্কে যদি আপনাদের আর কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে আমাকে নির্দির্ধায় জানাতে পারেন। আমার অর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
এই পোস্টটি আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল। ধন্যবাদ।
Leave a Comment