ভিডিও এডিটিং কি? কিভাবে প্রফেশনাল ভিডিও এডিটর হবেন? আজকের লেখায় ভিডিও এডিটিং সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
আরো পড়ুন- ডিপফেক প্রযুক্তি কি বিস্তারিত জানুন।
বর্তমান বিশ্বে ভিডিও এডিটিং অনেক আনন্দের এবং সম্ভাবনাময় একটি পেশা। এখানে আপনি আপনার ক্রিয়েটিভ কাজে লাগিয়ে অনলাইন থেকে হিউজ অর্থ আয় করতে পারবেন। ভিডিও কন্টেন্ট এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বৃদ্ধির সাথে সাথে ভিডিও এডিটরদের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে কিন্তু পর্যাপ্ত অভিজ্ঞ লোক না থাকায় দেশে এবং বিদেশে ভিডিও এডিটিং প্রফেশনালদের কদর বাড়ছে। আমাদের ভিডিও এডিটিং কি, ভিডিও এডিটিং কিভাবে করা হয়, কিভাবে ভিডিও এডিটর হওয়া যাবে এবং ইন্ডাস্ট্রিতে এর ভবিষ্যৎ কেমন সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
ভিডিও এডিটিং
কোন ভিডিও ফুটেজকে নিজের পছন্দমতো এডিট করে একটি গল্প ফুটিয়ে তোলাকে ভিডিও এডিটিং বলে। কোন কিছুর স্মৃতি মনের মধ্যে ধরে রাখার জন্য বা কোন বিষয় বাস্তবের মত ফুটিয়ে তোলার জন্য ভিডিও অনেক কাজের একটি মাধ্যম।
আমরা যখন কোন দৃশ্য ধারণ করি তখন তা অগোছালো এবং বিচ্ছিন্নভাবে থাকে। একজন এডিটর সেই “র” ফুটেজ গুলোকে একটির সাথে আরেকটি জোড়া লাগিয়ে তাতে কালার কারেকশন করে এবং সুন্দর আউটপুট তৈরি করে।
মোটকথা, কোন ভিডিও এডিটর সফটওয়্যার ব্যবহার করে মোবাইল বা ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও পরিমার্জন করে দর্শকদের দেখার ব্যবস্থা করে দেওয়ার পদ্ধতিকে ভিডিও এডিটিং বলে।
কিভাবে প্রফেশনাল ভিডিও এডিটর হবেন?
দেখুন প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং অনেক দামি একটি পেশা। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ এই পেশায় যোগ দিচ্ছে। এখানে আপনি প্রতিদিন নিত্য নতুন মানুষের সাথে কাজ করার যেমন সুযোগ পারবেন তেমনি অনেক বেশি পরিমাণে আয়ও করতে পারবেন। তবে এটা মনে রাখতে হবে যে, যে কোনো সেক্টরে প্রফেশনাল হতে গেলে পরিশ্রম করতে হয়। ভিডিও এডিটিং যেহেতু একটি ক্রিয়েটিভ পেশা সেহেতু চেষ্টা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে এই পেশা আয়ত্ত করতে হবে। নিচে একজন প্রফেশনাল ভিডিও এডিটর হওয়ার জন্য কি কি করতে হবে তা বর্ণনা করা হলো।
ভিডিও এডিটিং
ক্রিয়েটিভ হতে হবেঃ ভিডিও এডিটিং ইন্ডাস্ট্রি হলো গ্রাফিক্স ইন্ডাস্ট্রি এর মতই ক্রিয়েটিভ। অর্থাৎ এখানে কপি পেস্ট করে চালিয়ে দেওয়ার মত কিছু নেই। এডিটিং করার সময় আপনি যত বেশি ক্রিয়েটিভ হবেন আপনার ভিডিও তত মানুষ পছন্দ করবে।
আরেকজনের তৈরি করা ভিডিও সামান্য এডিট করে কাজ চালাতে চাইলে এই সেক্টরে বেশিদিন টেকা যাবে না। কারণ দর্শক সবসময় চায় ভিডিও দেখে যেন নতুন কিছু শেখে বা জানে। এই কারণে সায়েন্স ফিকশন বা অ্যাডভেঞ্চার মুভিগুলো এত বেশি জনপ্রিয়তা পায়।
ধৈর্যশীল হতে হবেঃ এডিটিং অনেক ধৈর্যের একটি কাজ। এখানে প্রতিটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ের উপর নজর দিতে হয়। তা না হলে সামান্য গ্লিচ পুরো ভিডিও এক্সপেরিয়েন্স নষ্ট করে দিতে পারে। প্রতিটি ফুটেজ বার বার দেখতে হবে সেখান থেকে ও প্রয়োজনীয় জিনিস বাদ দিতে হবে। ভিডিও নেওয়ার সময় কোন সমস্যা হলে তা এডিটিং এর মাধ্যমে ঠিক করে দিতে হবে।
আবার ভিডিও এর সাথে অডিও মিলিয়ে সেকেন্ড বাই সেকেন্ড কাজ করতে হবে। একটি ১০ মিনিটের ভিডিও এডিট করতে যে পরিশ্রম করতে হবে তা দেখে ভয় পেলে এডিটিং ছেড়ে দেওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। আপনি যত সূক্ষ্মভাবে ভিডিও এডিট করতে পারবেন আপনার আউটপুট তত সুন্দর হবে।
এডিটিং সফটওয়্যার সম্পর্কে জানতে হবেঃ প্রতিটি এডিটিং সফটওয়্যার আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য নিয়ে তৈরি। যদিও সেগুলোর মধ্যে কিছু কিছু কমন টুলস থাকে তবে ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে আপনি আলাদা আলাদা সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারবেন।
যাইহোক, প্রফেশনালভাবে ভিডিও এডিট করার জন্য আপনাকে কোন এন্টারপ্রাইজ ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার সম্পর্কে অভিজ্ঞ হতে হবে। আপনি কোন ভিডিও কেমন এডিট করবেন তা অনেকটা নির্ভর করে আপনি কোন কোন টুল এবং ফিচার সম্পর্কে ধারণা রাখেন তার উপর।
যেমন শুধু ফুটেজ কাট করে সবগুলো জোড়া লাগিয়ে মিউজিক অ্যাড করে দিলেই ভিডিও এডিটিং হয় না। এখানে সফটওয়্যার দ্বারা এর টুল গুলো ইউজ করে ক্রিয়েটিভ আউটপুট তৈরি করাই হচ্ছে আসল উদ্দেশ্য।
এডিটিং সিক্রেটস জানতে হবেঃ প্রফেশনাল লেভেলে আপনাকে জানতে হবে কীভাবে কম কাজ করেই ভালো আউটপুট তৈরি করা যায়। অর্থাৎ অন্যান্য সেক্টরের ন্যায় ভিডিও এডিটিং সেক্টরেও অনেক এডিটিং সিক্রেটস বিদ্যমান। এই ট্রিক্স গুলো জানলে আপনি দ্রুত এবং উচ্চমানের এডিটিং করতে পারবেন।
স্ক্রিপ্ট সম্পর্কে ধারণা- একজন এডিটরের প্রথমেই স্ক্রিপ্ট সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। সুস্পষ্ট ধারণা না থাকলে “র” ফুটেজ থেকে একটি কমপ্লিট গল্প তৈরি করা কখনই সম্ভব না। আপনি নিজে স্ক্রিপ্ট সম্পর্কে ধারণা রাখলে ভিডিও অ্যাঙ্গেল, কালার গ্র্যাডিয়েন্ট, স্পেশাল ইফেক্ট ইত্যাদি সঠিকভাবে অ্যাপ্লাই করতে পারবেন যা আপনার ভিডিওকে করবে আরও দৃষ্টিনন্দন।
স্পেশাল ইফেক্ট জানতে হবেঃ একটি সাধারণ ভিডিও ফাইলকে স্পেশাল ইফেক্টের মাধ্যমে ওয়ার্ল্ড ক্লাস বানানো সম্ভব। বর্তমান সময়ে আমরা Green Screen এবং VFX সম্পর্কে জানি যা এডিটিং এ স্পেশাল ইফেক্টস হিসেবে যোগ হয়।
আমরা যারা মারভেল সিনেমাটিক স্টুডিও বা ডিসি স্টুডিও এর মুভি গুলা দেখি তারা স্পেশাল ইফেক্ট সম্পর্কে বেশ ভালোই ধারণা রাখি। সেখানকার প্রায় প্রতিটি দৃশ্য গ্রিন স্ক্রিনে VFX এর মাধ্যমে তৈরি করা হয়।
প্রোজেক্ট করতে হবেঃ আপনি যখন বুজতে পারবেন যে, ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার সম্পর্কে আপনার ধারণা হয়ে গেছে তখন চেষ্টা করবেন প্রোজেক্ট বানাবার। নিজে নিজে প্রোজেক্ট করার পাশাপাশি অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্ন হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতা বাড়িয়ে নিবেন।
এতে করে আপনার পোর্টফলিও আরো অনেক বেশি শক্তিশালী হবে যা পরবর্তীতে আপনাকে চাকরি পেতে বা ফ্রিল্যান্সিং করতে সাহায্য করবে।
আপ টু ডেট থাকতে হবেঃ এডিটিং ইন্ডাস্ট্রি দিন দিন উন্নত হচ্ছে। আপনাকে নিয়মিতভাবে এডিটিং ট্রেড সম্পর্কে আপ টু ডেট থাকতে হবে। না হলে আপনি সাম্প্রতিক প্রযুক্তি ও অন্যান্য বিষয়ে পিছিয়ে পরবেন।
জনপ্রিয় কিছু ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার
ভিডিও এডিটি করার সফটওয়্যার গুলো সাধারণ প্রিমিয়াম ধরণের হয়ে থাকে। এই সফটওয়্যার গুলো একেকটি ফিজিক্যাল স্টুডিও এর মত হয়ে থাকে। অনেক ফিচার আর বিশেষ সুবিধা থাকতে হয় জন্য এগুলো তৈরি ও পরিচালনা করা ব্যয়বহুল। নিচে কিছু জনপ্রিয় ভিডিও এডিটি সফটওয়্যার সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হলো।
Wondershare Filmora
এই ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার যারা নতুন এডিটিং শুরু করছে তাদের জন্য সেরা। কারণ এর ইন্টারফেস এবং ফাংশনালিটি অনেক সোজা এবং সাবলীল। আপনি সাধারণ ভিডিও এডিট থেকে শুরু করে নাটক, শর্টফিল্ম, মুভি ইত্যাদি এই সফটওয়্যার দ্বারা এডিট করতে পারবেন। ফিলমোরা সফটওয়্যার সব অপারেটিং সিস্টেমে কাজ করে।
Adobe After Effects
আফটার ইফেক্টসকে এডিটিং দুনিয়ায় অনেক সম্মানের সহিত দেখা হয়। অ্যাডোবি গ্রাফিক্স সফটওয়্যার বানানোর জন্য বিশ্বে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তাদের এই ক্রিয়েশন ভিডিও ইন্ডাস্ট্রিকে বদলে দিয়েছে। কোন ভিডিওকে স্পেশাল ইফেক্টস দেওয়ার জন্য এই সফটওয়্যার অনেক বেশি কার্যকরী।
Adobe Premiere Pro
”Adobe Premiere Pro প্রিমিয়ার প্রো” একটি প্রফেশনাল মানের এবং সব থেকে ভালো ভিডিও এডিটি সফটওয়্যার। আপনি যে কোন ধরনের প্রোজেক্ট করার জন্য এই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করতে পারবেন। ভিডিও করার জন্য সে সকল টুলস বা ফিচার থাকা দরকার তার সব কিছুই প্রিমিয়ার প্রোতে পেয়ে যাবেন।
Vegas Pro একটি ইন্ডাস্ট্রি গ্রেড মানের এডিটিং সফটওয়্যার। অর্থাৎ বিভিন্ন প্রোডাকশন কোম্পানি তাদের প্রজেক্টগুলো তৈরি করার জন্য এই সফটওয়্যারটি বহুল পরিমানে ব্যবহার করে থাকে। কারণ Vegas Pro তে সকল ধরনের হার্ডওয়্যার সাপোর্ট আছে সেগুলো দিয়ে প্রিমিয়াম কোয়ালিটি ভিডিও এডিট করা যায়।
Camtasia
ক্যামটাসিয়া একটি বেসিক লেভেলের ভিডিও এডিটর। সাধারণত ইউটিউব বা সোশ্যাল মিডিয়ার ভিডিও এডিট করার জন্য এই অ্যাপ অনেক কার্যকরী। তাছাড়া অনেক লো কনফিগারেশনের কম্পিউটারে রান করা যায় জন্য অনেক মানুষ এটি ব্যবহার করে।
ভিডিও এডিটিং ক্যারিয়ার
ভিডিও এডিটিং হলো একটি গতিশীল ও পরির্তনশীল ইন্ডাস্ট্রি। সময়ের সাথে সাথে দক্ষ এডিটরদের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। ইউটিউব, ফেসবুক, টিকটক বা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে এর চাহিদা হুহু করে বাড়ছে।
আপনার পারফর্মেন্স যদি দিন দিন ভালো থেকে আরো ভালো হতে থাকে তবে খুব সহজেই হেড অফ ভিডিও এডিটিং এবং তারপর পুরো প্রোডাকশন হাউজের ভিডিও এডিটিং ম্যানেজার পদে উন্নীত হওয়া যায়।
উক্ত পদগুলোর বেতন সীমানা আমাদের কল্পনারও বাইরে। আপনি যদি অনলাইন এবং অফলাইনে স্মার্ট ক্যারিয়ার গড়তে চান তাহলে ভিডিও এডিটিং আপনাকে কাঙ্ক্ষিত সাফল্যে নিয়ে যাবে।
অনলাইন এবং অফলাইনে প্রচুর কাজের সুযোগ থাকায় ভিডিও এডিটিং একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্যারিয়ার চয়েজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে। আমরা নিয়মিত অনুশীলন, পরিশ্রমের মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যেই একজন প্রফেশনাল ভিডিও এডিটর হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবো।
Leave a Comment