আপনারা যারা পাসপোর্ট সংশোধন করা নিয়ে বিভিন্ন ভোগান্তিতে পড়েন এবং বিভিন্ন চিন্তায় পারেন অর্থাৎ দালাল ছাড়া কিভাবে পাসপোর্ট সংশোধন করা যায়।
আরো পড়ুন: পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়ম।
এছাড়াও পাসপোর্ট এর তথ্য সংশোধন করার ক্ষেত্রে কোন কোন ডকুমেন্ট প্রয়োজন এবং কিভাবে সেগুলো সংগ্রহ করবেন এবং কোথায় সাবমিট করবেন এবং কত টাকা লাগতে পারে ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পারবেন আজকের এই পোস্টে।
পাসপোর্ট সংশোধন
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
- পাসপোর্টের ভুল তথ্য পরিবর্তন/সংশোধন এই সংক্রান্ত আবেদন ফরম (ফরম নং ১৯০১) টি অনলাইন থেকে প্রথমে ডাউনলোড করে নিবেন।
- পুরাতন পাসপোর্টের ফটোকপি
- পরিবর্তন করতে চাওয়া তথ্যের প্রমাণপত্র (যেমন, নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বিবাহনামা/তালাক নামা, ঠিকানা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পুলিশ সার্টিফিকেট ইত্যাদি)
- অন্যান্য:
- জরুরি পরিষেবার জন্য, সরকারি/আধাসরকারি/স্বায়ত্তশাসিত/রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের অনাপত্তি সনদ
- অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকুরীজীবীদের ক্ষেত্রে অবসর সনদ
ধাপসমূহ:
- https://www.epassport.gov.bd/ এ যান এবং “আবেদন করুন” ক্লিক করুন।
- “পাসপোর্ট রিনিউ/তথ্য পরিবর্তন/সংশোধন” নির্বাচন করুন।
- নির্দেশাবলী অনুসরণ করে অনলাইনে আবেদনপত্র পূরণ করুন।
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের স্ক্যান করা কপি আপলোড করুন।
- প্রযোজ্য ফি মোবাইল ব্যাংকিং/ক্রেডিট/ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে প্রদান করুন।
- আবেদন জমা দিন।
আবেদন যাচাই হওয়ার পর, আপনাকে একটি নির্ধারিত তারিখে পাসপোর্ট অফিসে যেতে হবে। সেখানে, আপনার আবেদনপত্র যাচাই করা হবে এবং জৈবমিত্রিক তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
তথ্য পরিবর্তন/সংশোধনের ধরণের উপর নির্ভর করে, পাসপোর্ট ডেলিভারিতে ৭–১৫ কার্যদিবস সময় লাগতে পারে।
বিঃদ্রঃ:
- জরুরি পরিষেবার জন্য, আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পর দ্রুততম সময়ে পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করুন।
- অনলাইনে আবেদন করার সময় কোন ভুল তথ্য দেবেন না। ভুল তথ্যের কারণে আপনার আবেদন বাতিল হতে পারে।
- আরও তথ্যের জন্য, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট https://dip.gov.bd/ দেখুন।
মনে রাখবেন:
- আমি আপনাকে সরাসরি সহায়তা করতে পারছি না কারণ আমি একটি ভার্চুয়াল সহকারী।
- যেকোনো তথ্য সংশোধনের জন্য, আপনাকে অবশ্যই নির্ধারিত পাসপোর্ট অফিসে যেতে হবে।
- আপনার আবেদন সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থাকলে, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের হটলাইনে যোগাযোগ করুন।
পাসপোর্ট এর যেকোন তথ্য সংশোধন করার জন্য পাসপোর্ট রি ইস্যু আবেদন করতে হবে। অর্থাৎ একটি পাসপোর্ট নতুনভাবে আবেদন করার প্রক্রিয়া যেরকম টি করতে হয় ঠিক তেমন, দুটি প্রক্রিয়ায় একিই। তবে পাসপোর্ট সংশোধন করার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত একটি সংশোধন ফরম পূরণ করতে হয়।
পাসপোর্ট সংশোএর জন্য আবেদন করার পূর্বে যা যা করবেন
আপনাকে একটি নির্দিষ্ট ডকুমেন্ট অনুযায়ী পাসপোর্ট সংশোধন আবেদন করতে হবে সেটা হতে পারে জন্ম নিবন্ধন অথবা এনআইডি তবে সংশোধন করা ক্ষেত্রে দুটি ডকুমেন্টের প্রয়োজন। আপনার যদি এনআইডি বা জন্ম তারিখ এর বিভিন্ন তথ্য যেমন বাবা মায়ের নাম বা জন্ম তারিখ ভুল থাকে তাহলে অবশ্যই পাসপোর্ট এর সংশোধন আবেদন করার পূর্বেই এনআইডি কার্ড/জাতীয় পরিচয় পত্র ও জন্ম তারিখ সংশোধন করে নিবেন।
NID এর সাথে মিল রেখে হলফনামা তৈরি করুন
আপনার পাসপোর্টে যদি নিজের নাম বাবা মায়ের নাম এবং জন্মতারিখ ভুল থাকে তাহলে একজন উকিলের কাছে গিয়ে হলফনামা বা এফিডেভিট করতে হবে। পাসপোর্টের ভুল সংশোধন করার ক্ষেত্রে এটি অবশ্যই দরকার পড়বে।
আরো পড়ুন: ই পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশন।
আপনি একজন উকিলের কাছে গেলেই বা কি কাজ সে করে দিবে এজন্য আপনাকে তাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করতে হবে সেটা হতে পারে 2000 বা 3000।
পাসপোর্ট সংশোধন করার নিয়ম
এটি করার জন্য পাসপোর্ট সংশোধন ফরম পূরণ করতে হবে। এরপরে পাসপোর্ট রি ইস্যু করার জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হবে এবং প্রিন্ট কপি সংগ্রহ করতে হবে। পাসপোর্ট সংশোধন ফি প্রদান করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসমূহ সংযুক্ত করতে হবে। উক্ত নথিগুলো নিয়ে নির্ধারিত তারিখে বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে যেতে হবে।
নিচের স্টেপ গুলো পুরোপুরি ফলো করুন
সংশোধন ফরম পূরণ করুন
পাসপোর্ট সংশোধণ এর জন্য আবেদন করতে হলে অবশ্যই সংশোধন ফরম টি পূর্ণাঙ্গভাবে পূরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে কোন ভুল ত্রুটি পরবর্তীতে আপনাকে অনেক ঝামেলায় ফেলতে পারে। উক্ত ফরমটি আপনি অনলাইন থেকেই ডাউনলোড করতে পারবেন এবং যেকোন কম্পিউটার দোকান থেকে প্রিন্ট করে নিয়ে কলম দিয়ে পূরণ করে নেবেন।.
নিচের ছবিতে দেখানো রেড মার্ক করা গুলো অবশ্যই বেশ সতর্কতার সহিত পূরণ করতে হবে। অর্থাৎ আপনার পাসপোর্ট রি-ইস্যু করার জন্য প্রয়োজনীয় ফি প্রদান করার তথ্য যেমন, ব্যাংক নেম, ব্যাংক শাখার রশিদ নাম্বার ইত্যাদি সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। এটা অনলাইন আবেদন করা শেষে যখন আপনি ব্যাংকে টাকা জমা দিবেন ব্যাংক থেকেজবা রশিদটি সংগ্রহ করে সেই অনুযায়ী তথ্য গুলো পূরণ করবেন।
এবং নিচে দেখানো পাসপোর্ট বর্তমানে প্রদর্শিত এর ঘরে আপনার বর্তমানে ভুল তথ্যটি লিপিবদ্ধ করুন এবং ডান পাশে সংশোধিত ঘরে সংশোধনকৃত তথ্যটি লিপিবদ্ধ করুন। অর্থাত আপনি এখন যেটি দিতে চান সেটি লিখুন। যেমন ধরুন আপনার নামের বানানটি ভুল রয়েছে। মনে করুন আপনার নাম হবে সবুজ হাওলাদার। কিন্তু আপনার নামটি ভুল ভাবে স্রুজ হাওলাদার নামে লেখা আছে। এখন স্রুজ হাওলদার তথ্যটি বর্তমানে প্রদর্শিত তথ্যের ঘরে এবং সংশোধিত তথ্যের ঘরে সঠিক নামটি লিপিবদ্ধ করুন। এভাবে আপনি যে কয়টি তথ্য সংশোধন করতে চান তা লিপিবদ্ধ করতে হবে।
পাসপোর্ট সংশোধন
অনলাইন আবেদন করুন
সংশোধন ফরম পূরণ করার পরে আপনাকে অনলাইনে ই-পাসপোর্ট অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে এবং সেখান থেকে নতুন করে ই পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করতে হবে। এই কাজটি আপনি যে কোনো কম্পিউটার দোকানে করতে পারেন অথবা আপনি চাইলে নিজে নিজেও মোবাইল অথবা কম্পিউটার দিয়ে করতে পারেন। ই পাসপোর্ট ওয়েবসাইট লিংক
পাসপোর্ট ইস্যুর জন্য আবেদন করার সময় আপনার পেমেন্ট মেথড টি অবশ্যই অফলাইন পেমেন্ট হিসেবে সিলেক্ট করে নিন। এতে করে আপনি বেশ সুবিধা পাবেন। সেটি হলো পরবর্তীতে আপনি অফলাইন পেমেন্ট ধরে যে কোন ব্যাংকে চালানের মাধ্যমে ফি প্রদান করতে পারবেন।
সঠিকভাবে অনলাইনে আপনার আবেদন পত্রটি সাবমিট করার পরে আপনাকে দুটি ডকুমেন্টস দেখানো হবে। ১. Print Summary ও ২. Application Form for printing. উক্ত দু’টি ডকুমেন্টস কম্পিউটারে ডাউনলোড করে নিবেন এবং যে কোনো কম্পিউটার দোকান থেকে প্রিন্ট করে নিবেন।
সংশোধন ফি প্রদান করুন
উপরোক্ত দুটি ডকুমেন্ট থেকে Print Summary ডকুমেন্ট প্রিন্ট করে ব্যাংকে গিয়ে আপনার নির্ধারিত ফি প্রদান করবেন এবং সেখান থেকে একটি জমা রশিদ সংগ্রহ করবেন। যেসব ব্যাংকের মাধ্যমে পাসপোর্ট সংশোধন ফি প্রদান করতে পারবেন
DHAKA BANK, SONALI BANK, TRUST BANK, BANK ASIA, ONE BANK, PREMIER BANK, A-CHALLAN
বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে নথিগুলো সাবমিট করুন
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট নিয়ে বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে চলে যান এবং সেখানে গিয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং বিভিন্ন বায়োমেট্রিক ডাটা সাবমিট করুন এবং আপনার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসও।
পাসপোর্ট সংশোধন ফি
৪৮ পৃষ্ঠা এবং ৫ বছর মেয়াদ সহ পাসপোর্ট
- নিয়মিত বিতরণ: ৪,০২৫ টাকা
- জরুরী বিতরণ: ৬,৩২৫ টাকা
- অতীব জরুরী বিতরণ: ৮,৬২৫ টাকা
৪৮ পৃষ্ঠা এবং ১০ বছর মেয়াদ সহ পাসপোর্ট
- নিয়মিত বিতরণ: ৫,৭৫০ টাকা
- জরুরী বিতরণ: ৮,০৫০ টাকা
- অতীব জরুরী বিতরণ: ১০,৩৫০ টাকা
৬৪ পৃষ্ঠা এবং ৫ বছর মেয়াদ সহ পাসপোর্ট
- নিয়মিত বিতরণ: ৬,৩২৫ টাকা
- জরুরী বিতরণ: ৮,৬২৫ টাকা
- অতীব জরুরী বিতরণ: ১২,০৭৫ টাকা
৬৪ পৃষ্ঠা এবং ১০ বছর মেয়াদ সহ পাসপোর্ট
- নিয়মিত বিতরণ: ৮,০৫০ টাকা
- জরুরী বিতরণ: ১০,৩৫০ টাকা
- অতীব জরুরী বিতরণ: ১৩,৮০০ টাকা
পাসপোর্ট সংশোধন করতে যেসব কাগজপত্র লাগবে
- আবেদনপত্রের প্রিন্ট কপি (সারংশের) অ্যাপয়েন্টমেন্টসহ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
- অনলাইন আবেদনপত্রের প্রিন্ট কপি
- সংশোধন এর আবেদন ফর্ম
- সনাক্তকরণ ডকুমেন্টসসমূহ (জাতীয় পরিচয় পত্র / অনলাইন জন্ম নিবন্ধন – মেইন কপি ও ফটোকপি)
- পেমেন্ট স্লিপ।
- পূর্ববর্তী পাসপোর্ট এর অরিজিনাল কপি এবং ডাটা পেজের প্রিন্ট কপি।
- সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে GO / NOC
তথ্য সংশোধনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্ৰ
- বিবাহিত – নিকাহনামা
- ঠিকানা – বিদ্যুৎ বিলের মূল/ফটো কপি / টেলিফোন বিলের কপি / পুলিশ ক্লিয়ারেন্স।
- পেশা – কর্মক্ষেত্রের প্রত্যয়নপত্র
- নিজের নাম / বয়স – হলফনামা, সার্টিফিকেট
- পিতা মাতার নাম – হলফনামা, সার্টিফিকেট, পিতা মাতার NID – মেইন কপি ও ফটোকপি
- পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে – GD এর মুল কপি ও ফটোকপি
- বয়স ১৮ বছরের নিচে হলে নিজের অনলাইন জন্ম সনদ ও পিতা মাতার NID – মেইন কপি ও ফটোকপি।
- ০৬ বছর বয়সের নিম্নের আবেদনের ক্ষেত্রে (3R Size) সাইজের ( ল্যাব প্রিন্ট গ্রে ব্যাকগ্রউন্ড ) ছবি।
- ১৫ বছরের নিচে হলে পিতা মাতার পাসপোর্ট সাইজের ছবি ।
- চেয়ারম্যান প্রত্যয়ন পত্ৰ
আপনাদের যাদের পাসপোর্ট তথ্য সংশোধন কিভাবে করতে হয় বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে তারা নিচের ভিডিওটি দেখতে পারেন আশা করি সম্পূর্ণ ক্লিয়ার হয়ে যাবেন।
সংশোধিত পাসপোর্ট কতদিন পর পাওয়া যায়?
যেহেতু এটি আপনি দালাল ছাড়া করতে যাচ্ছেন তাহলে অবশ্যই সংশোধন করার ক্ষেত্রে পাসপোর্ট তৈরি তৈরি হতে অনেকটা সময় লেগে যেতে পারে আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে। আর সাধারণভাবে একটি নতুন পাসপোর্ট তৈরি করা ক্ষেত্রে পাসপোর্ট রি ইস্যু সময়টা অনেক বেশি হয়ে থাকে।
Leave a Comment