ই পাসপোর্ট করার নিয়ম নিয়ে অনেকেরই ভুল ধারণা আছে। অনেকেই মনে করে থাকেন ই পাসপোর্ট করার নিয়ম বেশ জটিল ও কঠিন। তাই অনেকেই ই পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে বেশ অনগ্রহী। আজকে আমি আপনাদের সাথে ই পাসপোর্ট করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আরো পড়ুন- জাতীয় পরিচয় পত্র ফর্ম নম্বর ভুল দেখালে করণীয়।
আজকের আলোচনায় আমি আপনাদেরকে ই পাসপোর্ট কি, কিভাবে 10 বছর মেয়াদী ই পাসপোর্ট করা যায়, ই পাসপোর্ট করতে কি কি ডকুমেন্টস লাগে এবং সঠিক আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। ওকে তো চলুন কথা না বাড়িয়ে মূল কাজ শুরু করা যাক।
প্রবাসী হয়ে বিদেশে গেলে দীর্ঘমেয়াদী পাসপোর্টের প্রয়োজন হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে ই পাসপোর্ট কার্যক্রম চালু রয়েছে। তাই দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের জন্য- ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম অনুযায়ী পাসপোর্ট করতে হবে। আবেদন থেকে শুরু করে পাসপোর্ট হাতে পাওয়া পর্যন্ত সকল তথ্য থাকছে এই আলোচনায়।
ই পাসপোর্ট করার নিয়ম
ই-পাসপোর্ট করার জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে –
- ই পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণ করুন।
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি সংগ্রহ করুন।
- ই পাসপোর্ট ফি জমা দিন।
- পাসপোর্ট ফরম এবং সংযুক্তি সত্যায়িত করুন।
- আবেদন ফরম পাসপোর্ট অফিসে জমা দিন।
- বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান করুন।
- পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করুন।
- পাসপোর্টের স্ট্যাটাস চেক করুন।
- পাসপোর্ট সংগ্রহ করুন।
ই পাসপোর্ট করার জন্য epassport.gov.bd ওয়েবসাইটে ভিজিট করে রেজিস্টার করুন। তারপর ‘Apply for a new passport’ অপশনে গিয়ে আবেদন পত্র পূরণ করে সাবমিট করুন। অনলাইনে বা এ চালানোর মাধ্যমে পাসপোর্ট ফি পরিশোধ করার মাধ্যমে আবেদনপত্র টি প্রিন্ট করুন। এরপর নিকটস্থ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে বায়োমেট্রিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন।
পুলিশ ভেরিফিকেশন
পাসপোর্ট আবেদন জমার পর পুলিশ ভেরিফিকেশন করুন এবং আবেদনটি ট্রাক করুন। নির্ধারিত ডেলিভারির ধরনে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে আপনার পাসপোর্টটি সংগ্রহ করতে পারবেন। এভাবে খুব সহজেই আপনার পাসপোর্ট করতে পারবেন।
ই পাসপোর্ট করার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
অনেকেই হয়তো জানেন না যে, MRP পাসপোর্টের থেকে ই পাসপোর্টের ক্ষেত্রে কাগজপত্র কম লাগে। তাছাড়া ই পাসপোর্ট এর ক্ষেত্রে ডকুমেন্টসগুলো সত্যায়িত করারও প্রয়োজন হয় না। ১০ বছর মেয়াদি ই পাসপোর্ট করার নিয়ম অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুলো গুলো হলো-
- এনআইডি কার্ড বা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ। ( বয়ষ ২০ বছরের কম হলে জন্ম নিবন্ধন দিয়ে আবেদন করতে পারবেন , ২০ এর বেশি হলে আইডি কার্ড দিয়ে আবেদন করতে হবে। )পাসপোর্ট ধারীর পিতা অথবা মাতার যে কোন একজনের জাতীয় পরিচয়পত্র (আবেদনের সময় নমিনি / জরুরী যোগাযোগের তথ্য দিতে) জমা দিতে হবে।
- শিশুর ক্ষেত্রে পিতা ও মাতা উভয়েরই জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি আবশ্যক।
- অনলাইনে আবেদনের প্রিন্টেড কপি।
- পাসপোর্ট ফি পরিশোধের চালান কপি।
- পূর্ববর্তী পাসপোর্ট থাকলে তার ফটোকপি।
- পাসপোর্ট আবেদনের নির্বাচিত পেশা অনুযায়ী পেশা সনদ।
- আবেদনের পর পুলিশ ক্লিয়ারেন্স করতে ইউটিলিটি বিলের কপি/ চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট প্রয়োজন।
ই পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে
ই পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে এর উত্তর এক কথায় বা সরাসরি দেওয়া সম্ভব নয় কারণ পাসপোর্টের পাতার সংখ্যা, মেয়াদ ও ডেলিভারির ধরন অনুযায়ী ই পাসপোর্ট ফি বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। একটি ১০ বছর মেয়াদে ই পাসপোর্ট করার জন্য নিয়ম অনুযায়ী ফি এর তালিকা নিচে দেওয়া হলো
পাসপোর্টের পাতার সংখ্যা | পাসপোর্ট ডেলিভারির ধরন | |||||||||||||||||
সাধারণ (Regular) | জরুরি (Express) | অতি জরুরী (Super Express) | ||||||||||||||||
৪৮ পাতা | ৫৭৫০ | ৮০৫০ | ১০৩৫০ | |||||||||||||||
৬৪ পাতা | ৮০৫০ | ১০৩৫০ | ১৩৮০০
|
উল্লিখিত ১০ বছর মেয়াদি ই পাসপোর্ট করার জন্য যথাযথ নিয়ম অনুযায়ী ফি এর সাথে ১৫% ভ্যাট সহ তথ্য লিপিবদ্ধ রয়েছে।
ই পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণ করার নিয়ম
ই পাসপোর্ট আবেদন করার জন্য অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। ই পাসপোর্ট আবেদন ফরম পেতে প্রথমেই, E-Passport Online Registration Portal ভিজিট করুন। ই পাসপোর্ট এর জন্য কিভাবে আবেদন ফরম পূরণ করবেন তা বোঝার জন্য নিচে ছবিসহ ধাপগুলো অনুসরণ করতে পারেন
আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ও স্থানীয় থানা নির্বাচন করতে হবে।
আবেদনের শুরুতেই সংশ্লিষ্ট এলাকায় এই পাসপোর্ট কার্যক্রম চালু আছে কিনা সেটা জানতে হবে। সংশ্লিষ্ট অপশন এর ড্রপডাউন মেনুতে গিয়ে আপনার বর্তমান ঠিকানা বিভাগ জেলা থানা এক কথায় যাবতীয় প্রয়োজনীয় তথ্য নির্বাচন করুন। তারপর নেক্সট বা কন্টিনিউ বাটনে ক্লিক করুন
ই পাসপোর্ট করার নিয়ম
ই পাসপোর্ট ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন
ওয়েবসাইটের রেজিস্ট্রেশন করার জন্য আপনার ইমেইল এড্রেস দিন। পরবর্তী পেজে, পাসওয়ার্ড, আবেদনকারীর Given name ও Surname লিখুন। মোবাইল নাম্বার দিয়ে ও ক্যাপচা পূরণ করে Create Account অপশনে ক্লিক করে একাউন্ট খুলুন।
ই পাসপোর্ট করার নিয়ম
সাইন ইন ও সিলেক্ট পাসপোর্ট টাইপ
একাউন্ট ভেরিফাই হওয়ার পর আপনার ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে একাউন্টে সাইন ইন করুন। ‘Apply for a new passport’ অপশনটিতে ক্লিক করে ”পাসপোর্ট টাইপ” সিলেক্ট করুন। ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম অনুযায়ী সাধারণ পাসপোর্টের জন্য Ordinary Passport বাটনে এ ক্লিক করুন।
পার্সোনাল ইনফরমেশন
এই ধাপে এসে আপনার লিঙ্গ, আপনার সম্পূর্ণ নাম, আপনার ধর্ম, মোবাইল নাম্বার ও আপনার জাতীয়তা কি এই সকল তথ্য দিয়ে Save and Continue বাটনে ক্লিক করুন।
বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা
আবেদনকারীর স্থায়ী ঠিকানার যাবতীয় চাহিত তথ্য লিখুন। কোন তথ্য ভূল দেয়া যাবে না। দিলে পরবর্তীতে আপনারই ক্ষতি। এনআইডি কার্ড অনুযায়ী নিজ জেলা, নিজ গ্রাম, নিজ সড়ক, পোস্ট অফিস ও নিজ পোস্ট কোডটি লিখুন। সর্বশেষ আপনার নিকটস্থ পুলিশ স্টেশন টি বাছাই করুন। বর্তমান ঠিকানা ও পুলিশ স্টেশন একই ঠিকানায় হলে চেক বক্সে ক্লিক করুন।
ই পাসপোর্ট করার নিয়ম
ID Documents-ই পাসপোর্ট করার নিয়ম
এই ধাপে এসে আপনার পূর্ববর্তী কোন MRP / ePP পাসপোর্ট আছে কিনা তা সিলেক্ট করতে হবে। নিচে জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার দিয়ে save and continue বাটনে ক্লিক করুন।
প্যারেন্টাল ইনফরমেশন-ই পাসপোর্ট করার নিয়ম
আবেদনকারীর পিতা-মাতার নাম, আবেদনকারীর পেশা, জাতীয়তা ও জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর প্রভৃতি লিখুন। এরপর অভিভাবক সিলেক্ট করুন। ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম জরুরি যোগাযোগের তথ্য দিন।
Passport Option ও Delivery Option-ই পাসপোর্ট করার নিয়ম
পাসপোর্ট অপশনে পাসপোর্ট এর পাতার সংখ্যা (৪৮/৬৪) সিলেক্ট / উল্লেখ করুন। ডেলিভারি অপশনে গিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী Regular Delivery / Express Deliveryঅপশন সিলেক্ট করে দিন।
আবেদন পত্র সাবমিট ও পেমেন্টে-ই পাসপোর্ট করার নিয়ম
এই ধাপে এসে, আপনি আবেদনের সকল তথ্য দেখতে পাবেন। কোথাও কোন ভুল-ত্রুটি থাকলে তা Edit অপশনে ক্লিক করে সঠিক করুন। এবার সকল তথ্য পূরণের পর আবেদন পত্রটি Submit করে পেমেন্ট অপশনে যান।
ই পাসপোর্ট করার নিয়ম
এরপর ১০ বছর মেয়াদি ই পাসপোর্ট করার নিয়ম অনুযায়ী আবেদনের প্রিন্ট কপি জমা দিতে হয়।
নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে বায়োমেট্রিক আবেদন
অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন ও ফি পরিশোধ করতে পারলেও মূল কার্যক্রম হবে নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে। সেখানে বায়োমেট্রিকের জন্য পাসপোর্ট আবেদনের সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে উপস্থিত হতে হবে। আপনার ই-পাসপোর্ট আবেদনের সময় স্বশরীরে নির্ধারিত আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে উপস্থিত হন। সেখানে অবশ্যই- আবেদনের প্রিন্টেড কপি, চালান এর কপি ও এনআইডি কার্ডের কপি নিয়ে যেতে হবে।
বায়োমেট্রিক অফিসে উপস্থিত হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করবে। সেখানে আপনার হাতের ফিঙ্গারপ্রিন্ট, চোখ স্ক্যান ও পাসপোর্ট এর জন্য ছবি তোলা হবে। সর্বশেষে পাসপোর্ট ডেলিভারি স্লিপ পাবেন। এবার অনলাইনে চেক করে ডেলিভারির জন্য প্রস্তুত হয়েছে কিনা জানুন। এবং ১০ বছর মেয়াদি ই পাসপোর্ট সংগ্রহ করুন।
ই পাসপোর্ট ফি পরিশোধ করার নিয়ম
অনলাইনে বা সরাসরি ব্যাংকে এ-চালান এর মাধ্যমে ই পাসপোর্ট ফি পরিশোধ করা যায়। Sonali bank, Dutch Bangla Bank, Islami Bank, First Security Islami Bank সহ আরো অনেক ব্যাংক পাসপোর্ট ফি দিতে পারবেন। এ চালানের মাধ্যমে ফি দেওয়ার জন্য আবেদনের সময় একটি এপ্লিকেশন আইডিসহ পেমেন্ট স্লিপ পাবেন। ব্যাংক কর্মকর্তার কাছে সেই স্লিপসহ ফি জমা দিলে তা পরিশোধ করে চালান এর কপি দিবে।
শেষ কথা-
ই পাসপোর্ট করার নিয়ম
Leave a Comment