ন্যানো টেকনোলজি এই শব্দটি শুনলে আমাদের মনে এমন কিছু চিত্র চলে আসে যা আমাদেরকে অনেকটা কল্পনার জগতে নিয়ে যায়। অনেক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে।
ন্যানো টেকনোলজি
ন্যানো টেকনোলজি হলো এমন একটি প্রযুক্তি যা অত্যন্ত ছোট মাপের উপাদান ব্যবহার করে তৈরি হয়। এই প্রযুক্তিতে উপাদানগুলির সাইজ অনেক কম হয় এবং তারা একে অপরের সাথে কিছুটা যোগাযোগ করতে পারে। নেনো প্রযুক্তির ব্যবহার বিভিন্ন ক্ষেত্রে হয়, যেমন ইলেকট্রনিক্স, ফিজিক্স, রসায়ন ও তারপরের বিজ্ঞানে।
আরো পড়ুন: ডেভিন প্রযুক্তি কি প্রোগ্রামারদের জন্য হুমকি স্বরুপ?
এই প্রযুক্তিতে কাজ করা হয় অত্যন্ত কঠিন এবং স্বচ্ছন্দভাবে সম্পাদন করা যায় না। তবে, এই প্রযুক্তির উপযোগী প্রকাশ্য ফলাফল আমাদের বিশ্বের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে।
এ বিষয়টি এমন যে ন্যানো টেকনোলজির মাধ্যমে যেকোন অসম্ভবকে সম্ভব করা যাবে। তবে সকল অসম্ভবকে সম্ভব করা না গেলেও ইতিমধ্যে অনেক কিছুই সম্ভব হয়েছে এই ন্যানো টেকনোলজি মাধ্যমে। যেমন আইবিএম এর মাধ্যমে তৈরি করা প্রথম কম্পিউটার হারবার্ড মার্ক (Harvard Mark 1) যা লম্বায় ছিল প্রায় ৫০ ফুট ওজন ছিল প্রায় পাঁচ টন অর্থাৎ একটি কম্পিউটার একটি ঘরের সমান ছিল সেটা ভাবতে পারেন কিন্তু বর্তমানে আমরা প্রথম কম্পিউটারের চেয়েও শক্তিশালী স্মার্টফোন আমরা অনেকেই পকেটে নিয়ে ঘোরাফেরা করে যা সম্ভব হয়েছে এই টেকনোলজির মাধ্যমে। এছাড়াও আমরা নিজেদের অজান্তে টেকনোলজির অনেক সুবিধায় ভোগ করছি।
ন্যানো টেকনোলজি আসলে কতটা ছোট বা ক্ষুদ্র?
ন্যানো টেকনোলজির ন্যানো আসলে কতটা ছোট সেটা দেখা যাক। ন্যানোমিটার হচ্ছে এক মিটারের ১০০ কোটি ভাগের এক ভাগ। অবশ্য এভাবে বললে ন্যানোমিটার যে কত ছোট সেটা অনেকেই উপলব্ধি করতে পারবে না। একটা মানুষের চুলের ব্যাস কত ন্যানোমিটার হতে পারে। মানুষের চুলের ব্যাস গড়ে আশি হাজার নেনোমিটার। রক্তে থাকা লোহিত রক্ত কণিকার ব্যাস প্রায় ১০০০০ নানোমিটার এবং এইচআইভি ভাইরাসের ব্যাস প্রায় একশো নোমিটার তাহলে কিছুটা ধারণা পেয়েছেন যে ম্যানোমিটার আসলে কতটা ছোট হতে পারে। বিষয়টাকে একটু অন্যভাবে ব্যাখ্যা করা যাক। আমরা একজন মানুষের উচ্চতাকে যদি এক নেলিমিটার ধরে নেই তাহলে পৃথিবীর সকল মানুষের মোট উচ্চতা হবে মাত্র ৮ মিটার মানে ৮ মিটারের কাছাকাছি। সুতরাং ন্যানোমিটার যে কত ক্ষুদ্র সেটা আসলে আশা করি বুঝতে পারছেন এত ছোট পরিসরের টেকনোলজি কেন মানুষের জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলো তো আজকে আপনাদের সাথে আমি সে বিষয়টাই শেয়ার করতে যাচ্ছি।
ন্যানো টেকনোলজির যাত্রা
সর্বপ্রথম যে ব্যক্তি ক্ষুদ্র স্কেলের টেকনোলজি নিয়ে ভেবেছিলেন তিনি হচ্ছেন রিচার্ড ফিলিপস ফাইন ম্যান। 1959 সালে আমেরিকার ফিজিক্যাল সোসাইটির একটি মিটিং তিনি ন্যানো টেকনোলজির সম্পূর্ণ কনসেপ্ট উপস্থাপন করেন। তার লেকচারের শিরোনাম ছিল Plenty of Room at the Bottom.তার এই লেকচারেই ইন্ডিভিজুয়াল এটমকে ম্যানুপুলেট করে বিভিন্ন সুবিধা নিতে পারার কথা উল্লেখ ছিল। এই লেকচারের সম্পন্ন পিডিএফ ফাইল এর লিংক এখানে। পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালে সর্বপ্রথম ন্যানো ট্রাম টি সামনে নিয়ে আসেন জাপানের সাইন্টিস্ট Norio Taniguchi.
তবে ন্যানো টেকনোলজির ধারণা বাস্তবে রূপ নেয় ১৯৮১ সালে যখন স্ক্যানিং টানেলিং মাইক্রোস্কোপি তৈরি করা হয়। যার মাধ্যমে মানুষ পরমাণুকে সত্যিকার অর্থে ইন্ডিভিজুয়ালি বা আলাদা আলাদা করে দেখতে সক্ষম হয। এই মাইক্রোস্কোপ আবিষ্কারের জন্য Gerd Binning এবং Heinrich Rohrer ১৯৮৬ সালে সালে ফিজিক্সে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে Gerd Binning, Calvin Quate, Christoph Gerber এটোমিক ফোর্স মাইক্রোস্কোপ তৈরি করেন। যার মাধ্যমে অ্যাটমিক স্কেলে মনিকিউলকে দেখা পরিমাপ করা ম্যানুপুলেট করা সম্ভব ছিল। এভাবে সময়ের সাথে সাথে শেষমেষ আমরা দেখলাম এটোমিক এনিমেশন। এখানে প্রত্যেকটি ডট আসলে এক একটি ইন্ডিভিজুয়াল অ্যাটম।
ন্যানো টেকনোলজি আসলে কি?
এখন প্রশ্ন হচ্ছে ন্যানো টেকনোলজি বলতে আসলে কি বোঝানো হচ্ছে? আমাদের চারপাশের যা কিছু রয়েছে সবকিছুই পরমাণু দিয়ে তৈরি। এটা আমরা সবাই জানি। যা আমরা খাচ্ছি তা পরমাণু দিয়ে তৈরি। যে জামা কাপড় পড়ছি সেটাও পরমাণু দিয়েই তৈরি। আবার আমাদের বাসা বাড়ি যা দিয়ে তৈরি করছি সেটাও পরমাণু দিয়ে তৈরি একইভাবে আমাদের শরীরেও আসলে ওই পরমাণু দিয়েই তৈরি। কথা হচ্ছে সবকিছু যদি পরমাণু দিয়েই তৈরি হয় তাহলে একেক জিনিসের বর্ণ বৈশিষ্ট্য এক এক রকম কেন। এর উত্তর হচ্ছে এক পরমাণু অন্য পরমাণুর সাথে কিভাবে যুক্ত আছে এটা নির্ধারণ করে ওই বস্তুর বৈশিষ্ট্য কি হবে। যেমন একটি গাড়ির কথা বিবেচনা করুন। গাড়িতে অনেক ধরনের যন্ত্রাংশ থাকে। এই সকল যন্ত্রাংশগুলোকে সঠিক নিয়মে সঠিক স্থানে স্থাপন করলেই সেটি একটি গাড়ির রূপ ধারণ করবে এবং গাড়ির মত কাজ করবে।
এখন যন্ত্রাংশ গুলোকে যদি সঠিকভাবে না সাজিয়ে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে সাজানো হয় তবে কিন্তু তা গাড়ি না হয়ে অন্য কিছু হয়ে যাবে। ঠিক তেমনি ভাবে পরমাণুর বিভিন্ন এরেঞ্জমেন্ট এর জন্যই বিভিন্ন ধরনের বস্তুতে পরিণত হয়। কোন ক্ষেত্রে কাপড়, কোন ক্ষেত্রে খাবার, কোন ক্ষেত্রে রাবার ইত্যাদ। বিষয়টি অনেকটা lego blocks এর মত। lego blocks কে বিভিন্নভাবে সাজিয়ে আমরা বিভিন্ন কাঠামো তৈরি করতে পারি। যেমন গাড়ি, বাড়ি, এয়ারপ্লেন বা সেখানে যে ধরনের কাঠামো তৈরি করার সিস্টেম থাকে সে ধরনের কাঠামো তৈরি করতে পারি। এখানে সব ধরনের কাঠামো তৈরি করতে কিন্তু একি lego blocks ব্যবহার করা হয়েছে।
কিন্তু lego blocks গুলির অ্যারেঞ্জমেন্টের গুলোর ভিন্নতার কারণেই কিন্তু বিভিন্ন কাঠামো তৈরি হয়েছে। ঠিক একইভাবে আমরা যদি পরমাণু কে ম্যানুপুলেট করতে পারি অর্থাৎ আমাদের ইচ্ছা মতো যদি সাজাতে পারি তবে তার মাধ্যমে আমরা আমাদের চাহিদা অনুযায়ী যে কোন কিছু তৈরি করতে পারব। এই যে পরমাণুকে ম্যানুপুলেট করার কথা বলা হচ্ছে একেই বলা হয় ন্যানে। টেকনোলজি। সাধারণত ১ থেকে ১০০ নেনোমিটার স্কেলের কাজকে ন্যানো টেকনোলজি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ন্যানো টেকনোলজি কি ব্যবহার করা সম্ভব?
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এত ছোট স্কেলে কি কাজ করা সম্ভব। যা খালি চোখে দেখা যায় না। এমনকি সাধারণ মাইক্রোস্কোপ দিয়েও দেখা সম্ভব নয়। তার ওপর আবার এটমিক স্কেলে রয়েছে কোয়ান্টাম ইফেক্ট যা সাধারন ফিজিক্স এর নিয়মের সম্পূর্ণ বিপরীত। এর উত্তর হচ্ছে সম্ভব এবং আমরা আমাদের নিজেদের অজান্তেই ন্যানোটেকের বিভিন্ন সুবিধা আমরা ভোগ করছি। যার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে মোবাইল ফোন। আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন যে কম্পিউটারের যত বেশি সুইচ থাকে সেটি তত বেশি পাওয়ারফুল হবে।
ন্যানো টেকনোলজির প্রথম ধাপ হলো ট্রানজিস্টার।
মর্ডান বা আধুনিক কম্পিউটারে সুইস হিসেবে ব্যবহার করা হয় ট্রানজিস্টর। কিন্তু প্রথম দিকের কম্পিউটার এ সুইচ হিসেবে ব্যবহার করা হতো ভ্যাকিউম টিউব। যেগুলো ছিল বিশাল। মাত্র কয়েক হাজার ভ্যাকিউম টিউব এর জন্য একটি ঘরের সমপরিমাণ জায়গার প্রয়োজন ছিল। যেখানে ৩ হাজার ভ্যাকিউমটিউব মানে হচ্ছে ৩০০০ বিট বা 0.000375 mb মাত্র। এই ০.০০০৩৭ mb স্টোরেজ বর্তমান সময়ের জন্য খুবই নগণ্য। বর্তমানে আমরা পকেটে যে মোবাইল ফোন রাখছি তাতে কয়েক শত গিগাবাইট স্টোরে থাকে। এটা সম্ভব হয়েছে সুইস হিসেবে ভ্যাকিউম টিউবের পরিবর্তে সিলিকন দিয়ে তৈরি ট্রানজিস্টর ব্যবহার করার ফলে।
এখন সিলিকন হচ্ছে ম্যাটারিয়াল এবং কোন একটি ম্যাটারিয়ালকে ছোট করা হলেও তার বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন আসে না। যেমন আপনি একটি লোহাকে যদি কেটে অর্ধেক করেন সেটা একটু লোহায় থাকবে। সেই লোহাকে যদি আবার কেটে অর্ধেক করেন তবে সেটিও সেই লোহায় থাকবে। ফলে দিনে দিনে ট্রানজিস্টার ছোট হয়েছে। সাথে সাথে ইলেকট্রনিক ডিভাইস শক্তিশালী হয়েছে। iphone-13 থাকা এ ফিফটিন বায়োনিক প্রসেসরে ট্রানজিস্টরের সাইজ মাত্র ৫ ন্যানোমিটার অর্থাৎ চুল পরিমান স্থানে ১৬ হাজার ট্রানজিস্টার বসানো হয়েছে। A50 বায়োনিক প্রসেসর এ প্রায় ১৫ বিলিয়ন বা দেড় হাজার কোটি ট্রানজিস্টার রয়েছে।
এখন ট্রানজিস্টার কথাটা ছোট করা যাবে তার কিন্তু একটা সীমারেখা রয়েছে। ট্রানজিস্টার কে ছোট করতে করতে খুব বেশি ছোট করলে সেখানে শর্ট সার্কিট হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। ফলে ট্রানজিস্টার এর কার্যকারিতা নষ্ট হয়। এর এর ফলে বিজ্ঞানীরা যেটা করেছেন সেটা হচ্ছে সিলিক বেস ট্রানজিস্টর কে প্রসেসরে স্তরের মতো সাজিয়েছেন। যার ফলে ছোট্ট প্রসেসর ট্রানজিস্টরের সংখ্যা কোটি কোটি তে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। বিষয়টা অনেকটা এরকম যে ছোট ছোট বাড়ি না বানিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণ করার মত। ফলে স্বাভাবিকভাবে এই প্রক্রিয়ায় প্রসেসরের ট্রানজিস্টরের সংখ্যা বহু গুণ করানো সম্ভব হয়েছে। তবে সিলিকন বেস ট্রানজেস্টার কতটা ছোট করা যাবে এরও কিন্তু একটি সীমারেখা রয়েছে।
তাহলে এখানে একটা সন্দেহ তৈরি হয় সিলিকন বেস ট্রানজিস্টারের যেহেতু একটি সীমাবদ্ধতা রয়েছে একটা সময় আমাদের কম্পিউটিং সক্ষমতার অগ্রগতি থেমে যাবে। এমন সন্দেহ তৈরি হওয়াটাই খুব স্বাভাবিক। তবে ভবিষ্যতে সম্ভবত এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই কারণ ট্রানজিস্টরের সীমাবদ্ধতা সমাধান হতে পারে গ্রাফিন। গ্রাফিন সম্পর্কে আরো জানতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন। বর্তমানে প্রায় সকল ক্ষেত্রেই ন্যানোটেক ব্যবহার হচ্ছে। ন্যানোটেক ব্যবহার করে জেনেটিক্যালি মডিফাইড করে ফসল তৈরি করা হচ্ছে।
যেমন ব্রকলি হচ্ছে ফুলকপির একটি জেনেটিক্যাল মডিফাইড ভার্সন অর্থাৎ ফুলকপির ডিএনএ তে যে জেনেটিক কোড রয়েছে সেখানে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এবং এই পরিবর্তনের মাধ্যমে ফুলকপির একটি নতুন ভার্সনব্রকলি তৈরি করা হয়েছে। একইভাবে ন্যানোটেকনোলজি সাহায্যে বিভিন্ন ফসলকে বিভিন্নভাবে মডিফাইড করে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করা হচ্ছে সেই সাথে গাছের উৎপাদন সক্ষমতাও বৃদ্ধি করা হচ্ছে। চিকিৎসা ক্ষেত্রেও ন্যানোটেকনোলজির ব্যবহার রয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও ব্যাপক পরিসরে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
ভেবে দেখুন সামনের সময় যদি ন্যানো সাইজের রোবট বা মেশিন তৈরি করা সম্ভব হয় তাহলে তা মানুষের রক্তের মধ্যে দিয়ে দেহের যে কোন স্থানে যেতে পারবে এবং ক্যান্সার বা অন্য যেকোন সমস্যার জন্য দায়ী এলেমেন্ট শনাক্ত করতে পারবে এবং তা ধ্বংস করতে পারবে। আর আমরা যদি এর চেয়েও বেশি ভিশনারি চিন্তা করি তবে বলা যায় মানুষের বয়স বৃদ্ধির ফলে কোষের যে পরিবর্তন আসে ন্যানোটেকের মাধ্যমে সেটাকে সনাক্ত করে এবং সমাধান করা সম্ভব হবে।
সে ক্ষেত্রে হয়তো মানুষ স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশিদিন জীবিত থাকবে অর্থাৎ মানুষের বয়স বৃদ্ধির প্রক্রিয়াটি ধীর গতির করা সম্ভব হবে। এ তো গেল ভিশনারি চিন্তা। তবে বর্তমানে কিন্তু মেডিসিন থেকে শুরু করে বিভিন্ন মেডিকেল ডিভাইসে নেনোটেকের ব্যবহার শুরু হয়েছে। যেমন ন্যানোপাটিকেলের সাহায্যে চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি জীবনমুক্ত রাখা হচ্ছে। বিভিন্ন মেডিসিন তৈরিতেও ন্যানোটেক ব্যবহার করা হচ্ছে। তাছাড়া বর্তমানে খুবই ছোট সাইজের রোবট তৈরি করা হয়েছে। যেগুলো হয়তো ন্যানো সাইজের পর্যায়ে যায়নি তবে অনেকটা কাছাকাছি যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
আরো পড়ুন: চ্যাট জিপিটি: প্রযুক্তির এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন।
এভাবে যদি আমরা ন্যানো সাইজের রোবট তৈরি করতে পারি তাহলে আমাদের চিকিৎসা ক্ষেত্রে আমুল পরিবর্তন হয়ে যাবে। এভাবে আমাদের জীবনের প্রায় সকল ক্ষেত্রেই ন্যানোটেক এর ব্যবহার বর্তমানে রয়েছে। যেমন নন স্টিক ফ্রাইপেন এ যে কোটিং দেওয়া থাকে যার কারণে খাদ্য পুড়ে গেলেও পেনে লেগে যায় না সে কোটিং কিন্তু তৈরি করা হয়েছে ন্যানোটেক এর সাহায্যে। তাছাড়া টেনিস, রেকেট, বাইসাইকেল, লাগেজ এয়ারপ্লে,ন, স্পেসশিপ সকল ক্ষেত্রেই ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার রয়েছে। যার মাধ্যমে এগুলো আগের চেয়ে পাতলা এবং আগের থেকে অনেক বেশি শক্ত মজবুত হয়েছে। গ্লাসেও ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার রয়েছে। যার মাধ্যমে গ্লাস আগের থেকেও বেশি মজবুত হয়েছে। যা কিনা ব্ল লাইট, ইউ ভি লাইট আটকে দিতে পারছে।
তাছাড়া বিভিন্ন মোবাইলের যে ডিসপ্লে থাকে সেই ডিসপ্লে গুলোকেও স্ক্র্যাচ ফ্রী, ডাস্ট ফ্রি এবং আগের থেকে আরও বেশি মজবুত করে দিচ্ছে এই ন্যানো টেকনোলজি। আসলে বর্তমানে আপনি এমন কোন ক্ষেত্র খুঁজে পাবেন না যেখানে ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার হচ্ছে না বা ব্যবহার নেই। মনে করুন বিশেষ একটি কাজের জন্য আপনার এমন একটা মেটেরিয়াল দরকার যেটি হবে ওজনে হালকা এবং সবচেয়ে শক্তিশালী সেই সাথে ইলাস্টিক প্রোপার্টি থাকতে হবে। আবার এটিকে স্বচ্ছ হতে হবে এবং ভালো বিদ্যুৎ সুপরিবাহী হতে হবে সেই সাথে মনে করেন আরো কিছু স্পেসিফিক বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে। তো আপনি বিশেষ জিনিস প্রকৃতিতে খুঁজে পাবেন না।
তখন আপনি স্বাভাবিকভাবেই কোন একটি ম্যাটেরিয়াল নিয়ে তার মধ্যে ওই বৈশিষ্ট্য গুলো এড করতে হবে এবং এটা করতে হলে আপনাকে ওই ম্যাটেরিয়াল এ থাকা পরমাণুগুলোকে বিভিন্ন ভাবে মডিফাই করতে হবে এবং এই মডিফাই করার এই বিষয়টি হচ্ছে ন্যানো টেকনোলজি। কিছুদিন পর মানুষ হতে এমন সব কাপড় ব্যবহার করবে যা ডাস্ট এবং ওয়াটারপ্রুফ অর্থাৎ সে ক্ষেত্রে কাপড় ধোয়ার কোন প্রয়োজন পড়বে না কারণ কাপড়ে যদি ময়লাই না লাগে তাহলে তা আর ধোয়ার দরকার কি। ব্যাপারটা এমন নয় যে এটা খুবই কাল্পনিক কিছু। বর্তমানে এমন কাপড় আপনি খুঁজে পাবেন যে গুলা ডাস্ট ফ্রি এবং ওয়াটারপ্রুফ যদিও এ ধরনের কাপড় মার্কেট এভেইলেইবল না। কারণ এগুলো এখনো যথেষ্ট পরিমানে ডিউরেবল নয়। তবে ভবিষ্যতে হয়তবা পেয়ে যাবেন।
কার্বন ন্যানোটিউভ এর নাম হয়ত অনেকেই শুনেছেন। যা গ্রাফিনের মাধ্যমে তৈরি করা হয়। এই কার্বন-নানো টিউবের খুবই খুবই পাতলা একটি তন্ত্র কিন্তু আপনার শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়েও ছিড়তে পারবেন না। কার্বন ন্যানো টিউব এতটাই শক্তিশালী সেই সাথে পাতলা এবং খুব ভালো বিদ্যুৎ সুপরিবাহী। ফলে ভবিষ্যতে কার্বন ন্যানো টিউবমাধ্যমে হয়তো এস্পেস এলিভেটর এর স্বপ্ন বাস্তবে হলেও হতে পারে।
বর্তমান বিশ্বে সুপেয় পানের একটি বড় সমস্যা রয়েছে। নেনোটেকনোলজির মাধ্যমে চেষ্টা করা হচ্ছে যে সকল এলিমেন্টের কারনে পানি দূষিত হচ্ছে তা নষ্ট করে দিবে এমন নেনো পার্টিকেল তৈরি করা। তাছাড়া ন্যানোটেকের মাধ্যমে আমরা কার্বন ডাই অক্সাইডের যে সমস্যা রয়েছে সেটিও সমাধান করার চেষ্টা চলছে। সেক্ষেত্রে ন্যানো পার্টিকেল বায়ুমন্ডলে থাকা কার্বন ডাই অক্সাইড গুলোকেশোষণ করে নেবে যার ফলে পরিবেশের কার্বন ডাই অক্সাইড এর পরিমান কমে আসবে।
বর্তমানে রঙকে সোলার প্যানেল হিসেবে ব্যবহার করা যায় কিনা তা নিয়ে চলছে যথেষ্ট গবেষণা। সেই ক্ষেত্রে রঙের মধ্যে ন্যানো পার্টিকেল দিয়ে সে ন্যানো পার্টিকেলের মাধ্যমে সৌরশক্তিতে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তর করার চেষ্টা চলছে এবং এক্ষেত্রে অনেকটা সফলতা পাওয়া গেছে। সাউদার্ন ক্যালিফোর্ণিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. রিচার্ড Brutchey এবং গবেষক ডেবিট এইচ উয়েভার ন্যানো ক্রিস্টাল ব্যবহার করে পেইন্ট তৈরি করেছেন অর্থাৎ এক ধরনের রং তৈরি করেছেন যা সোলার চ্যানেলের মত কাজ করবে অর্থাৎ আপনি যদি আপনার বাড়িতে কিংবা গাড়িতে যদি এই রং ব্যবহার করেন তবে তা থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে।
তবে এটি এখনো মার্কেটে এভেলেবেল না কারণ এই পেইন্টে বিষাক্ত ক্যাডমিয়াম ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে ভবিষ্যতে হয়তো বা ক্যাডমিয়াম এর পরিবর্তে অন্য মেটেরিয়াল ব্যবহারের মাধ্যমে সোলার পেইন্ট তৈরি করা সম্ভব হবে। আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন নতুন নতুন টেকনোলজির কথা জানতে পারি এই সকল টেকনোলজির পেছনে কিন্তু কোন না কোন ভাবে ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার রয়েছে এবং ভবিষ্যতের সকল টেকনোলজি মূলত হবে এই ন্যানোটেকনোলজি ভিত্তিক এর মাধ্যমে যা বর্তমানে স্বপ্ন মনে হচ্ছে তা ভবিষ্যতে বাস্তব হয়ে যেতে পারে ।
Leave a Comment