ডোমেইন এবং হোস্টিং কি? এগুলো কি কাজে ব্যবহৃত হয় সেটা একজন ব্লগার মাত্রই জাানেন। তো আজ আমি আমার এই আর্টিকেল এ আপনাদের সাথে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ডোমেইন এবং হোস্টিং
ডোমেইন এবং হোস্টিং যে কোন ওয়েব সাইট তৈরি এবং চালানোর প্রধান উপাদান। এ দুটি উপাদান ছাড়া আপনি কখনোই একটি ওয়েবসাইট চালাতে পারবেন না।
ডোমেইন: ডোমেইন হলো একটি ওয়েবসাইটের ভার্চুয়াল ঠিকানা বা আইপি ঠিকানা। এটি একটি ওয়েবসাইটকে সবার নিকট পরিচিত করে তোলে এবং এর সাহায্যে লোকজন খুব সহজেই কাঙ্খিত ওয়েবসাইটে পৌঁছে যেতে পারে। ডোমেইনের উদাহরণ হিসেবে, “example.com” বা “google.com” উল্লেখ করা যেতে পারে।
হোস্টিং: ওয়েবসাইটের তথ্য সংরক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য স্থান প্রদান করা হয়। অর্থাত হোস্টিং হলো কোন ওয়েবসাইটের তথ্য বা সকল ডাটা রাখার জায়গা। এটি ওয়েবসাইটের ফাইল সংরক্ষণ, সার্ভার সংযোজন, ব্যবহারকারীদের অ্যাক্সেস সরবরাহ ইত্যাদির জন্য ব্যবহৃত হয়। সাধারণত এটি অনলাইনে রাখা হয় এবং সার্ভারের মাধ্যমে ওয়েবসাইট প্রসারিত হয়।
ব্যবসায়িক বা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ওয়েবসাইট তৈরী করাি হয়। ওয়েবসাইট তৈরী করতে হলে ডোমেইন এবং হোস্টিং কিনতে হবে। যদিও ব্লগস্পট সাইটে ব্লগিং করার ক্ষেত্রে ডোমেইন হোস্টিং না হলেও সমস্যা নেই। তবে প্রফেশনাল হবার ক্ষেত্রে অবশ্যই ডোমেইন হোস্টিং থাকা বাঞ্চনীয়। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সকল দেশে হাজার হাজার ডোমেইন এবং হোস্টিং প্রভাইডার আছে্। যারা মাসিক বা বাৎসরিক টাকার বিনিময়ে ডোমেইন এবং হোস্টিং সার্ভিস দিয়ে থাকে।
এতো এতো প্রভাইডারের ভিড়ে সবাই সমান ভালো সাভিস প্রদান করে না। কারো হোস্টিং সার্ভিস ভালো তো কাস্টোমার সার্ভিস খারাপ। কারো কাস্টোমার সার্ভিস ভালো তো হোস্টিং খারাপ। আবার কারো হোস্টিং এবং কাস্টমার সার্ভিস দুটোই খারাপ। তাই হুট করে যে কারো কাছ থেকে ডোমেইন, না কেনাই ভালো। হোস্টিং কেনার আগে আপনাকে কিছু বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
ডোমেইন কেনার আগে যা যা খেয়াল রাখতে হবে
১) কোন ধরনের ওয়েবসাইট করতে চাচ্ছেন সেটা আগে ভালো করে প্লান করুন এবং ডোমেইন নেম কি নিবেন সেটা নিয়ে ভালো করে চিন্তাভাবনা করুন।কারণ একটি ভালো ডোমেইন নেম আপনার সাইটের পুরো সৌন্দর্যই বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই আগে ভালো একটি নাম ঠিক করুন।
২) ব্যবসা বা ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটের জন্য .com ডোমেইন ই ভালো। তবে নেটওয়ার্কিং বিজনেস হলে সেক্ষেত্রে .net নিতে পারেন। আবার আপনার প্রতিষ্ঠান নন-প্রফিটেবল হলে .org নিতে পারেন।
৩) ডোমেইনটি যত ছোট করা যায় ততই ভালো। এতে আপনার ভিজিটররা আপনার ওয়েবসাইটের নাম বা ঠিকানা খুব সহজে মনে রাখতে পারবে। সুন্দর ওয়েবসাইট নেম একটি ভালো সম্পদ। একটি ডোমেইন অনলাইন ব্যবসার জন্য সবচেয়ে বড় অ্যাসেট।
৪) ডোমেইন নেম ইউনিক নেয়ার চেষ্টা করবেন। যেন অন্য বড় কোন ব্রান্ডের সাথে গুলিয়ে না যায়। কারণ বড় কোন কোম্পানির সাথে গুলিয়ে বা মিলে গেলে সেক্ষেত্রে আপনার সাইট টি বড় কোম্পানীর সাথে প্রতিয়োগিতা করে টিকে থাকার সম্ভাবনা অনেক কম।
ডোমেইন কোথা থেকে রেজিস্ট্রেশন করবেন
১) একজন বাংলাদেশী হিসেবে কোন বাংলাদেশি প্রভাইডারের কাছ থেকেই ডোমেইন নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে কারন প্রথমত আপনি বিদেশি কোম্পানীর চেয়ে দেশি কোম্পানি থেকে ভালো সার্ভিস পাবেন। এরকম অনেক প্রতিষ্ঠানই এখন বাংলাদেশে আছে। তাছাড়া বিদেশি কোম্পানীর কাছে ডোমেইন নিতে আপনাকে ডলারে পেমেন্ট করতে হবে। যেখানে বাংলাদেশি প্রভাইডারের কাছ থেকে নিলে আপনি টাকাতেই পেমেন্ট করতে পারবেন।
২) ডোমেইনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশি বা বিদেশী কোম্পনীর কোন ডিফারেন্স নেই। বিদেশী কোম্পানী আপনাকে যেখান থেকে ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন করিয়ে দিবে বালাদেশী কোন কোম্পানীও আপনাকে সেখান থেকেই রেজিস্ট্রেশন করিয়ে দিবে।
আরো পড়ুন: ডেভিন কি? এটা প্রোগ্রামারদের জন্য কতটুকু সহায়ক বা ভয়ের।
৩) বাংলাদেশী প্রভাইডারের কাছে ডোমেইন নিলে একটি কথা তাকে আগে জিজ্ঞাসা করে নিবেন, সেটা হলো সে কি আপনাকে ডোমেইনের ফুল কন্ট্রোল প্যনেল দিবে কিনা? আপনি কি যেকোনো সময় আপনার সার্ভিসটি অন্য কোম্পানিতে ট্রান্সফার করতে পারবেন কিনা? ফুল কন্ট্রোল প্যানেল না দিলে আপনি তার কাছ থেকে ডোমেইন কিনবেন না।
৪) ডোমেইন এবং হোস্টিং একটি আরেকটির সাথে রিলেটেড। তাই হোস্টিং যে কোম্পানী থেকে নিবেন চেষ্টা করবেন সেখান থেকেই ডোমেইন নেয়ার। তাতে আপনি ডোমেইন এবং হোস্টিং সার্ভিস একই সাথে পাবেন। কোনো সমস্যা হলেও তারা ভালো ভাবে সেটি দেখতে পারবেন।
৫) কোন লোভনীয় অফারে ডোমেইন হোস্টিং কিনতে হলে আগে ভালো করে অফার সম্পর্কে ধারনা নিন। অফারে সস্তায় নিতে গিয়ে আবার প্রোভাইডার এর কাছে ধরা না খান। তার কাছে আটকে না পড়েন।
৬) একটি ডোমেইনের মূল্য সাধারণত ৮০০-১২০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। এই দামের নিচে আপনাকে কেউ ডোমেইন অফার করলে আগে ভালো করে জিজ্ঞাসা করুন তার কি কি কন্ডিশন আছে।
হোস্টিং কেনার আগে যে সকল বিষয় বিবেচনা করতে হবে
ডোমেইন ক্রয় করার পর আপনাকে হোস্টিং ক্রয় করতে হবে। হোস্টিং ছাড়া শুধু ডোমেইন দিয়ে একটি ওয়েবসাইট লাইভ করতে পারবেন না। ডোমেইন সার্ভিস সকল কোম্পানী প্রায় একই রকম দিয়ে থাকে কিন্তু প্রায় বেশিরভাগ কোম্পানীর হোস্টিং বিভিন্ন ধরনের এবং বিভিন্ন মানের। তাই হোস্টিং কেনার আগে আপনাকে নিচের বিষয়গুলো অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে।
বাজেট: ডোমেইন এবং হোস্টিং
ওয়েবসাইট করার আগে ডোমেইন হোস্টিং এর পেছনে একটা বাজেট করতে হয়। এই সময়ে হোস্টিং এর পেছনে ভালো বাজেট করবেন। আপনি কোন ধরনের সাইট করবেন। সাইটে ডেইলি ভিজিটর সংখ্যা কেমন থাকবে এটার উপর হোস্টিং বাজেট ঠিক করতে হবে। বাজেট ঠিক করার পর সেইম বাজেটে আপনাকে ভালো মানের হোস্টিং যে কোম্পানী প্রভাইড করবে তার কাছ থেকে নিবেন।
হোস্টিং স্পেস:ডোমেইন এবং হোস্টিং
আপনার ওয়েবসাইট করতে কত পরিমান স্পেস প্রয়োজন সেটা ঠিক করে সে অনুযায়ী হোসিং প্যাকেজ বা প্ল্যান ক্রয় করুন।
ব্যন্ডউইথ: ডোমেইন এবং হোস্টিং
আপনার ওয়েবসাইটে যত পরিমান ডাটা বা ফাইল থাকবে এবং যত পরিমান ভিজিটর আসবে তার উপর ব্যন্ডউইথ খরচ হবে। পার ভিজিটর এবং পার পেইজ ভিউ অনুযায়ী ব্যন্ডউইথ খরচ হতে থাকবে। মনে করেন ১ জিবি ব্যন্ডউইথে আপনার সাইটে ১০০০ ভিজিটর আসতে পারবে । তাহলে সাইটে ভিজিটর অনুযয়ী ব্যন্ডউইথ নিতে হবে। আপনার সাইটে ১০-১০০ জিবি ব্যন্ডউইথ নিয়ে নিতে পারেন। প্রয়োজনে আনলিমিটেড ও নিতে পারেন।
হোস্টিং আপটাইম: ডোমেইন এবং হোস্টিং
হোস্টিং এর ক্ষেত্রে আপটাইম খুবই গুরুত্বর্পূন একটি বিষয়। হোস্টিং আপটাইম অনুযয়ী আপনার সাইট লাইভ থকবে। ৯৯.৯% এবং ১০০% আপটাইম দেখে আপিনি হোস্টিং নির্বাচন করবেন। অনেক কোম্পনী আপনাকে বলবে ৯৯.৯% আপটাইম কিন্তু প্রকৃতপক্ষে অপনি সেটা পাবেন না। তাই হোস্টিং কেনার আগে আপনাকে হোস্টিং আপটাইম চেক করে নিতে হবে। এজন্য কোম্পানীর ইউজেস পলিসি পেজ দেখতে পারেন।
মানি ব্যক গ্যারান্টি: ডোমেইন এবং হোস্টিং
হোস্টিং এর ক্ষেত্রে মানি ব্যক প্যারান্টি একটি গুরুত্ববহ বিষয়। আনেক কোম্পনীই ৩০ দিন বা তার বেশি মানি ব্যক গ্যারান্টি দিয়ে থাকে। এটা দেখে নিবেন। সাধারনত মানি ব্যক গ্যারান্টি দেয়া কোম্পানীগুলো সার্ভিস ভালো দিয়ে থাকে।
হোস্টিং কোম্পানীর অবস্থা: ডোমেইন এবং হোস্টিং
হোস্টিং কেনার আগে তাদের প্রতিষ্ঠানের অবস্থা জানার চেস্টা করুন। তাদের কাস্টমার কেয়ারের সাথে কথা বলুন। তাদের নিজস্ব অফিস আছে কি না সেটা জানুন। নিজেস্ব অফিস এবং ওয়ার্কার টীম না থাকলে তারা ভালো সার্ভিস এন্ড সাপোর্ট দিতে পারবে না। তাদের সার্ভিস ব্যবহার করে এমন করোর ফিডব্যক নিতে পারলে ভালো হয়। তাদের সার্ভারের অবস্থান জানুন। সকল কিছু বিবেচনা করে ফাইনাল অর্ডার করুন।
সাপোর্ট: ডোমেইন এবং হোস্টিং
হোস্টিং এর জন্য সাপোর্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবটি বিষয়। কারণ আপনার হোস্টিং এ কোন প্রকার সমস্যা দেখা দিলে তাদের কাছ থেকে সাপোর্ট নিতে হবে। সাপোর্ট পেতে কয়েকদিন সময় লাগলে আপনি আপনার সাইটের লক্ষ লক্ষ ভিজিটর হারাবেন। আর আপনি রিসেলার হলে তো কথাই নাই। আপনার ক্লাইন্ট আপনাকে সমস্যা জিজ্ঞাসা করবে কিন্তু আপনি কোন উত্তর দিতে পারবেন না।
হোস্টিং এর ধরন: ডোমেইন এবং হোস্টিং
আপনার কাজে কোন ধরনের হোস্টিং প্রয়োজন সে অনুযায়ী অর্ডার করুন। উইন্ডোজ এবং লিনাক্স হোস্টিং এর মধ্যে আপনার কোনটি দরকার সেটা আগে ভালো করে জেনে নিন কারণ নেয়ার পরে আর তেমন কিছু করার বা বলার থাকে না।
ফিচারসমূহ: ডোমেইন এবং হোস্টিং
হোস্টিং নেয়ার আগে তাদের প্রদানকৃত ফিচারসমূহ ভালো করে জেনে নিন। আপনার প্রয়োজনের সাথে মিল হলে তখন আপনি সেখান থেকে হোস্টিং ক্রয় করুন। এক্ষত্রে ঠকার সম্ভাবনা খুবই কম।
লিমিটিশন: ডোমেইন এবং হোস্টিং
ছোট কোন প্যকেজ নিলে সকল লিমিটেশন আপনার প্যাকেজে উল্লেখ থাকবে নিন্তু আনলিমিটেড প্যাকেজ নিলে আপনাকে লিমিটেশন জেনে নিতে হবে। মানে রাখবেন পৃথিবীতে সব কিছুরই একটা লিমিট আছে। আপনার কাছে আনলিমিটেড হবে সেটাই যেটার লিমিট আপনি ক্রোস করতে পারবেন না।
শেষ কথা
ডোমেইন এবং হোস্টিং যেকোনো একটি ওয়েবসাইটের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আপনি যে প্রতিষ্ঠান থেকে এগুলো ক্রয় করবেন অবশ্যই সেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আগে থেকেই ভালোভাবে খোঁজখবর নিবেন কারণ এমন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা বিক্রির পূর্বে অনেক জাতকদের বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে যার ফাঁদে পড়ে অনেকেই এগুলো ক্রয় করে কিন্তু পরবর্তীতে দেশ ঝামেলায় পড়ে যান।
আমি একটি ডোমেইন এবং হোস্টিং প্রোভাইড সরবরাহকারী সংস্থার নাম জানি যাদের সম্পর্কে বেশ ভালো রিভিউ পেয়েছে সেখান থেকে আপনারা চাইলে ডমিন এবং পোস্টিং কিনতে পারেন হোস্টনিন উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো খেয়াল করে ডোমেইন এবং হোস্টিং কিনলে আপনাকে ঠকতে হবে না। আশাকরি ভালো মানের হোস্টিং এবং ডোমেইন সার্ভিস পাবেন।
Leave a Comment