চ্যাট জিপিটি: প্রযুক্তির এক নতুন দিগন্তের ‍উন্মোচন।

Last Updated On:

চ্যাট জিপিটি

চ্যাট জিপিটি তৈরি পর নামীদামি যত প্রতিষ্ঠান আছে সবাই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সম্পন্ন রোবট বানানোর জন্য রীতিমত প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এটাকে প্রতিযোগিতা না বলে যুদ্ধ বললেও ভুল বলা হবে না।

চ্যাট জিপিটি কি?

চ্যাট জিপিটি (ChatGPT) হলো একটি নিউরাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং (NLP) মডেল, যা বিভিন্ন ধরনের ভাষায় লেখা টেক্সট সম্প্রদান করতে পারে এবং উত্তর প্রদান করতে সক্ষম। এটি মূলত প্রশ্ন এবং উত্তরের সম্প্রদান করতে ব্যবহৃত হয়, কিন্তু প্রায় যেকোনো ধরণের টেক্সট ভিত্তিক কাজে ব্যবহার করা যায়। চ্যাট-জিপিটি সাধারণত প্রচলিত ভাষায় আলাপে ব্যবহৃত হয় কিন্তু প্রিয় ভাষাতেও সেবা প্রদান করা যায়। এটি নিউরাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বানানো হয়েছে যা ভাষার সংজ্ঞা বোঝে এবং সাম্প্রতিক প্রযুক্তিগত উন্নতির উপর ভিত্তি করে এটিকে তৈরি করা হয়েছে।

আরো পড়ুন: ডেভিন : প্রযুক্তির নতুন বিস্ময়।

বর্তমান তরুণ তরুনী থেকে শুরু করে প্রযুক্তিপ্রেমীদের কাছে  সেনসেশন এক অপর নাম এখন চ্যাট-জিপিটি। যেখানে চ্যাটের মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যেই কাঙ্খিত ফলাফল পাচ্ছেন গ্রাহকরা। এদিকে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মত বসে নেই টেক জায়ান্ট গুগলও। মূলত চ্যাট-জিপিটি তার যাত্রা শুরু করার পর গুগল বেশ নড়েচড়ে বসেছে। কারন তার উদ্ভাবনের শক্তি দিয়ে গুগলকে রীতিমত চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে।

চ্যাট জিপিটি

আর তাই খুব বেশি দেরি না করে চ্যাট-জিপিটিকে নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যেই তাদেরকে টেক্কা দিতে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান এলফাবেটও নতুন একটি চ্যাটবোট লাঞ্চ করেছে। যেটার নাম দেয়া হয়েছে বার্ড তথা গুগল বার্ড।  অন্যদিকে গুগলের নতুন লঞ্চের কয়েক মিনিটের মাথায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই নিয়ে গবেষণার জন্য ওপেন এআই এর সঙ্গে অংশীদারিত্ব চুক্তির মাধ্যমে কয়েক বিলিয়ন ডলারের এক দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে চ্যট জিপিটি এর অন্যতম অংশীদার মাইক্রোসফট।

এর আগে গুগল বনাম মাইক্রসফট এর ক্রোম বনাম ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার বা জিমেইল বনাম হটমেইল এর মধ্যে যে প্রতিযোগিতা শুরু হয় সেরকমই একটি দুর্দান্ত প্রতিযোগিতা দেখতে যাচ্ছে গোট বিশ্ব। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন চ্যাট জিপিটি উন্মুক্ত হওয়ার পর গোটা বিশ্বের প্রযুক্তি দুনিয়ায় এক ধরনের ঝড় বয়ে যায়। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বজুড়ে সাধারণ মানুষ চ্যাটের মাধ্যমেই কবিতা ও উপন্যাস থেকে শুরু করে জোক এমনকি চলচ্চিত্রের জন্য স্ক্রিপ্ট বানিয়ে নিচ্ছেন কেউ কেউ। এক কথায় সৃজনশীলতার সবটুকুই ঢেলে দিচ্ছে চ্যাট জিপিটি। শুধুমাত্র চ্যাটের মাধ্যমেই দীর্ঘমেয়াদে অনেক কাজ করিয়ে নিচ্ছেন বিভিন্ন দেশের

গুগল বার্ড ও চ্যাট জিপিটির মধ্যে পার্থক্য

অনেকে google ও চ্যাট জিপিটির মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন না। তাদের উদ্দেশ্যে বলি গুগল হলো একটি সার্চ ইঞ্জিন যেখানে আপনি যে কোন প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন এবং অন্যদিকে চ্যাট জিপিটি এটা আপনাকে আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পাশাপাশি মানুষের মত আচরণ করবে অর্থাৎ একজন মানুষ আপনাকে যেভাবে বিস্তারিত উত্তর প্রদান করে বা উত্তর প্রদানের সময় যেমন আচরণ করে এটিও আপনার সাথে ঠিক তেমন আচরণ এর ভঙ্গিতে উত্তর দিবে

চ্যাট জিপিটি বনাম গুগল বার্ড

বড় বড় প্রযুক্তি প্রেমীরা। তাই দিন দিন আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসছে এই ওপেন এআইভিত্তিক প্রযুক্তি চ্যাট জিপিটি। বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ওপেন এ আই এ সফল হওয়ার দৌড়ে তাদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে ।

চ্যাট জিপিটি বা গুগলের বার্ড যে পরিষেবা গুলো দিচ্ছে তা মোটামুটি একই রকম। ব্যবহারকারীরা বার্ড বা চ্যাট জিপিটিকে বিভিন্ন প্রশ্ন ছুড়ে দেয়। প্রত্যুত্তরে বার্ড বা চ্যাট জিপিটি ব্যবহারকারীদের প্রশ্নের অনেকটা সচেতন মানুষের মতোই অনুযায়ী  উত্তর দিচ্ছে। microsoft এবং google তাদের সার্চ পরিষেবাকে আরো শক্তিশালী করার জন্য আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর দিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে এখন। বার্ড ও চ্যাট জিপিটি উভয় প্রযুক্তিই জটিল তথ্য এবং একাধিক দৃষ্টিকোণকে খুব সহজেই গ্রহণ করতে পারে।

তবে দুটির মধ্যে সবচেয়ে স্পষ্ট পার্থক্য হল সাম্প্রতিক ঘটনার সন্নিবেশ ঘটানো। আর এক্ষেত্রে google অর্থাৎ বার্ড এগিয়ে আছে বলে জানিয়েছেন প্রযুক্তিপ্রেমীরা। আর এই এগিয়ে থাকার মূল কারণ হলো বার্ড সাম্প্রতিক কালের প্রায় সকল তথ্যই ব্যবহারকারীর কাছে সরবরাহ করতে পারে কিন্তু চ্যাট জিপিটির কাছে যে তথ্য আছে তা ২০২১ সাল পর্যন্ত। যদিও এখন পর্যন্ত এটা পরিষ্কার নয় যে কে কোন দিকে গুরুত্ব দিয়ে তাদের অনন্য ঘোষনা করবে। তবে আলফাবেট তার তথ্যভাণ্ডার বাড়ানোর চেষ্টা করবে বলে জানিয়েছেন। বার্ড সরাসরি ইন্টারনেটের এক্সেস নিয়ে গ্রাহককে সেবা দেয় অন্যদিকে চ্যাট জিপিটির তথ্য ভান্ডার ২০২১ সাল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ।

গুগলের বার্ড মূলত ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল ফর ডায়লগ এপ্লিকেশন (language model for dialogue applications) বা সংক্ষেপে ল্যামডা প্রযুক্তি নির্ভর। প্রযুক্তি নির্ভর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে এই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটির একজন বিজ্ঞানীর মতে এটি অত্যন্ত সংবেদনশীল অর্থাৎ এটি এটি অনুভব করতে পারে বলে দাবি করেন। যদিও অন্যান্য বিজ্ঞানীরা এই দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। অন্যদিকে ওপেন এআইয়ের জিপিটি বা জেনারেটিভ প্রি-ট্রেইনড ট্রান্সফর্মার (Generative Pre-Trained Transformer) ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো উন্মোচন করা হয় এবং জিপিটির ৩.৫ সিরিজের কাজ শেষ হয় ২০২২ সালের প্রথম দিকে।

ওপেন এআই জানিয়েছে চ্যাট জিপিটি কখনো কখনো যুক্তিসঙ্গত কিন্তু ভুল বা অর্থহীন উত্তর দেয়। গেল বছরের ত্রিশ নভেম্বর সবার ব্যবহারের জন্য  উন্মুক্ত করা হয় চ্যাট জিপিটি। তবে বার্ড বর্তমানে শুধুমাত্র প্রযুক্তি প্রেমী পরিক্ষকদের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। আলফাবেট এর সিইও সুন্দর পিচাই জানিয়েছেন চ্যাট ভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সেবাটর সামনের দিনগুলোতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হবে। চ্যাট জিপিটি চালু হওয়ার পরের দুই মাসে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ওপেন এআই প্রযুক্তি দ্বিগুণ করেছে। গুগলের মত চীনের সার্চ ইন্জিন প্রতিষ্ঠান বাইদু এ বিষয়ে তাদের কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। তাদের প্রযুক্তির নাম আর্নি।

উপরের আলোচনা থেকে হয়ত আপনি বুঝে গেছেন কোনটি আপনার ব্যবহার করা উচিত। নিচে আমি চ্যাট জিপিটি ও বার্ডের মধ্যে কিছু পার্থক্য তুলে ধরবো যার মাধ্যমে আপনি আরো স্পষ্ট হয়ে যাবেন যে আপনার আসলে কোনটি ব্যবহার করা উচিত।

কাজের ধরণ

চ্যাট জিপিটি এবং বার্ড উভয় ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল দ্বারা তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন প্রযুক্তি। যেখানে google-এর চ্যাটবোর্ড তথা বার্ড সৃষ্টিশীল লেখায় বেশি পারদর্শী। সে আপনাকে সুন্দর করে কবিতা লিখতে পারবে অন্যদেরকে চ্যাট জিপিটি সেও আপনাকে কবিতা লিখে দিতে পারবে। তবে সেটা অনেকটা সাধারণ মানুষের লেখা বলে মনে হবে। চ্যাট জিপিটির একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল এটা বিস্তারিত ও তথ্য সমৃদ্ধ লেখা লিখতে পারে যা বার্ড এখনো সেই পর্যায়ে যেতে পারেনি।

বার্ড সে পর্যায়ে যেতে না পারার কারণ হলো বার্ড অনেক পরে তার ওপেন এর প্রযুক্তিকে ভাষা শেখানোর কাজ শুরু করেছে যা জিপি বহু পূর্বেই শুরু করেছিল যে কারণে এই দিক থেকে চ্যাট জিপিটি বেশ এগিয়ে। তবে অদূর ভবিষ্যতে বার্ড চ্যাট জিপিটিকে ছাড়িয়ে দেওয়ার সময় সম্ভাবনা আছে। কারণ google এর কাছে যে তথ্যভাণ্ডার আছে ওপেন এ আই এর কাছে সেই পরিমাণ তথ্য নেই।

আচরনগত পার্থক্য:

চ্যাট জিপিটি অনেকটা শিক্ষকের মত আচরণ করে। শিক্ষককে কোন প্রশ্ন করলে সে ঠিক যেভাবে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করে চ্যাট জিপিটিও ঠিক একই ভাবে ব্যবহারকারীকে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করে। পাশাপাশি চ্যাট জিপিটি আপনাকে বিভিন্ন ধরনের কবিতা লিখে দিতে পারে এমনকি চ্যাট জিপিটিকে যদি আপনি বলেন যে আমাকে তুমি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বা জীবনানন্দ দাশের মতো করে কোন প্রেমের কবিতা লিখে দাও তবে সে আপনাকে সেভাবে কবিতাও লিখে দিতে পারবে। অপরদিকে বার্ডও এই কাজটা করে দিতে পারে তবে বার্ড এর কাজ কিছুটা শৈল্পিক পর্যায়ের।

বার্ড আপনাকে যে শব্দ চয়নের মাধ্যমে লিখে দিবে সেটা বুঝতে আপনার বেশ কষ্ট হতে পারে কিন্তু চ্যাট-জিপিটি সবকিছু খুব সহজে উপস্থাপন করতে পারে। মনে করুন আপনি উভয় চ্যাটবোটকে প্রশ্ন করলেন যে, ঢেউ কাকে বলে? সেক্ষেত্রে google বার্ড হয়তো সাগরের ঢেউ কেমন সেটুকুতেই তার বক্তব্য শেষ করে দেবে কিন্তু চ্যাট-জিপিটি আরো বিস্তারিত তথ্য দিবে। সে আপনাকে উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি খুব সহজভাবেই আপনার সামনে উপস্থাপন করবে।

ট্রেইনিং ডেটা

আপনার কাছে মনে হতে পারে যে এই প্রযুক্তিগুলি কিভাবে কাজ করে অর্থাৎ তারা এত কিছু কিভাবে জানে। আপনি যেই প্রশ্নই করছেন কিভাবে এই প্রযুক্তি গুলি সেই প্রশ্নের উত্তর এত কম সময়ের মধ্যেই দিয়ে দিচ্ছে। আসলে এগুলো সবই সম্ভব হচ্ছে এই কারণে যে এ সকল প্রযুক্তিগুলোকে দিনের পর দিন বিভিন্ন বিষয়ে ট্রেনিং দেয়া হয়েছে। বলতে পারেন তাদেরকে বিভিন্ন তথ্য গেলানো হয়েছে। এমনকি এখনো ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে দেওয়া হচ্ছে।

ইন্টারনেটে যত তথ্য আছে যত জিজ্ঞাসা আছে সব কিছুই এদেরকে শেখানো হচ্ছে এবং এরা সকল তথ্য সকল প্রশ্ন নিজেদের ডাটাবেসে জমা রাখছে। যখন কেউ প্রশ্ন করছে তখনই এই প্রযুক্তি গুলি তাদের সংরক্ষণাগারে থাকা তথ্য থেকে উত্তর প্রদান করছে। যদিও সকল এ আই প্রযুক্তির ট্রেনিং প্রদানের পদ্ধতি এক নয়। যেমন গুগল বার্ডের ক্ষেত্রে প্রতিদিন এখানে চ্যাট করা বা ভাষা বোঝার জন্য এটি ব্যবহার করা হয় না।

ব্যবহারকারীকে আকৃষ্ট করার ক্ষমতা

আপনি যখন চ্যাট-জিপিটি অথবা গুগল  বার্ড ব্যবহার করবেন তখন একটা সূক্ষ্ম জিনিস লক্ষ্য করে থাকবেন সেটা হল কে আপনাকে বেশি আকৃষ্ট করছে এই বিষয়টা আমি আমার ব্যক্তিগত মতামত যদি দেই তাহলে এটা বলতে পারি যে আমি যখন google বার্ড ব্যবহার করি তখন খুব বেশিক্ষণ ব্যবহার করার ইচ্ছা থাকে না কারণ গুগল বার্ড এর ভাষা বোঝা বেশ কষ্টসাধ্য। অন্যদিকে চ্যাট-জিপিটি খুব সহজ ভাষায় কাঙ্খিত তথ্য উপস্থাপন করতে পারে। চ্যাটের ভিডিও উপস্থাপনা বেশাবলীর ও বিস্তারিত অন্যদিকে গুগল ওয়ার্ডের উপস্থাপনা বেশ সংক্ষিপ্ত এবং দুর্বোধ্য। Google বার্ড ব্যবহারকারীর মানসিক ভাবনার সাথে সঙ্গতি রেখে তথ্য উপস্থাপন করতে পারে এই দিক থেকে আবার google বার্ড বেশ এগিয়ে

প্রদানকৃত তথ্যের সোর্স

চ্যাট-জিপিটি তার ডেটাবেজের সংরক্ষিত তথ্য থেকে ব্যবহারকারীকে উত্তর দেয় অন্যদিকে গুগল বার্ড সরাসরি ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তা ব্যবহারকারী নিকট সরবরাহ করে Google বার্ড আপনাকে আপটুডেট তথ্য অর্থাৎ সাম্প্রতিক তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারে যেটা 4 জিবিটি করতে পারে না ২০২১ সাল পর্যন্ত তথ্য দেয়া আছে সে আপনাকে যে তথ্য দিক না কেন সেটা ২০২১ সালের মধ্যে হবে গুগলের বার্ড প্রযুক্তিতে সরাসরি গুগলের সার্চ ইঞ্জিনের সাথে সংযুক্ত

তথ্যের মান বা নির্ভুলতা

গুগল বার্ড চ্যাট-জিপিটির তুলনায় এই দিক থেকে বেশ এগিয়ে।  সমীক্ষায় দেখা গেছে যে চ্যাট-জিপিটি বিস্তারিত তথ্য দিলেও সেখানে ভুলের পরিমাণ বেশি থাকে  চ্যাট-জিপিটি অনেক সময় অনুমানের উপর ভিত্তি করে তথ্য প্রদান করে অপরপক্ষে বার্ড কর্তৃক প্রধানকৃত তথ্য যথেষ্ট পরিমাণ নির্ভুল থাকে তবে শতভাগ নির্ভুল তথ্য কেউই দিতে পারেনা।

ব্যবহারের অনুমতি

চ্যাট-জিপিটি শুরুতে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ব্যবহার করা যেত যদিও এখনো ৩.৫ ভার্সন টি বিনামূল্যে ব্যবহার করা যাচ্ছে। তবে সর্বশেষ ভার্সনটি  চ্যাট-জিপিটি-৪ বিনামূল্যে ব্যবহার করা কোন সুযোগ নেই। অপরদিকে গুগল বার্ড  এখনো পর্যন্তসম্পূর্ণ ফ্রি যেহেতু এটি গুগলের প্রোডাক্ট তাই গুগুল এটিকে সম্পূর্ণ ফ্রিতে ব্যবহার করার অনুমতি দিয়ে রেখেছে।

প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য

উভয়ের মধ্যে প্রযুক্তিগত পার্থক্য তেমন একটা নেই বললেই চলে। চ্যাট-জিপিটি মূলত জিপিটি 3.5 প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে গড়ে তোলা হয়েছে অপরদিকে একই প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে ল্যাম্দা চ্যাট কোড তৈরি করেছে গুগল যার নামকরণ করা হয়েছে  google বার্ড।

কোডিং লেখার ক্ষেত্রে পারদর্শিতা

কোডিং লেখার ক্ষেত্রে চ্যাট-জিপিটি গুগল বার্ডের তুলনায় বেশ এগিয়ে আছে। চ্যাট-জিপিটি নিউরাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং এবং ন্যাচরাল ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলের সাথে সম্পৃক্ত। যা কোডিং বা প্রোগ্রামিং ভাষার সাথে সম্পর্কিত জিজ্ঞাসা করার ক্ষেত্রে অনেকটা সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেয়। এটি প্রোগ্রামিং ভাষায় লেখা কোড পরিবর্তন করার প্রতিভার উন্নতির জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। চ্যাট-জিপিটি ব্যবহার করে প্রোগ্রামাররা প্রোগ্রামিং সমস্যা সমাধান করতে, কোড লেখার সহায়তা করতে এবং প্রোগ্রামিং ভাষার সম্পর্কে প্রশ্ন করতে ব্যবহার করতে পারে।

তার বিশেষ ধর্ম হলো ব্যবহারকারীর উপরের অগ্রগতিতে ভিত্তি করে উত্তর প্রদান করা। তবে গুগল বার্ড যে এই বিষয়ে খুব দ্রুতই দক্ষ হয়ে উঠবে এতে কোন সন্দেহ নেই গুগল বার্ড এখনো প্রশিক্ষণের মধ্যেই আছে অনেক প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ধারণা করছে যে গুগল বার্ড যখন কঠিন লেখা শুরু করবে তখন সেটা হবে অভাবনীয় যা কিনা কেউ বউ বলে ছাড়িয়ে যাবে।  যদিও ইতোমধ্যেই google ওয়ার্ডও করে লেখা শুরু করেছে তবে সেটা খুবই স্বল্পপরিসরে।

অংক সমাধানের ক্ষেত্রে কে বেশি এগিয়ে

অংক সমাধানের ক্ষেত্রেও চ্যাট-জিপিটি গুগল বার্ডের থেকে বেশি এগিয়ে আছে। চ্যাট-জিপিটি সাধারণত প্রোগ্রামিং সম্পর্কিত প্রশ্ন এবং অংক সমাধানে সহায়ক। এটি সাধারণত অংকের প্রশ্ন সমাধানে সহায়ক হয় এবং প্রোগ্রামারদের কোডিং প্রক্রিয়ার জন্য সহায়তা করে। এটি সাধারণত গণিতের প্রশ্নের উত্তর প্রদানে সাহায্য করে এবং সমস্যা সমাধানে ব্যবহৃত হয়। চ্যাট-জিপিটি একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন, যা প্রোগ্রামিং এবং অংক সমাধানে উত্তর দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। বার্ড এখনো এ বিষয়ে তেমন কোন সফলতা দেখাতে পারেনি।

শেষ কথা

চ্যাট-জিপিটি ও গুগল বার্ড এদের কাজের ধরন প্রায় একই এবং এরা যে প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে করে উঠেছে সেটাও খুবই কাছাকাছির প্রযুক্তির। এদের মধ্যে মূল যে পার্থক্য সেটা হল তথ্য উপস্থাপনায়। চ্যাট-জিপিটি তার তথ্য উপস্থাপনের ক্ষেত্রে ২০২১ সাল দ্বারা সীমাবদ্ধ। যেখানে গুগল বার্ড এই ধরনের কোন সীমাবদ্ধতায় সীমাবদ্ধ নয়। আবার চ্যাট-জিপিটি বিস্তারিত ও সহজভাবে তথ্য দিতে সক্ষম যেখানে মনে হবে তথ্যগুলো একজন মানুষ আপনাকে সরবরাহ করছে।

আবার google বার্ড আপনাকে যে তথ্য দেবে মনে হবে তথ্যগুলো বেশ সংক্ষিপ্ত এবং দুর্বুদ্ধ ভাষায় রচিত। সর্বশেষ এটা বলা যায় যে উভয় এআই এর মধ্যেই কিছু সীমাবদ্ধতা আছে এবং উভয়ের মধ্যেই কিছু সুবিধা আছে। কোনোটিকে এটা বলা যাবে না যে ওমুকটি বেশি এগিয়ে বা অমুখটি বেশি পিছিয়ে। মূল কথা হলো এটা এখনো বলার মত সময় আসেনি। আরো কয়েকটি বছর যাওয়ার পরে হয়ত বোঝা যাবে কে কার থেকে বেশি এগিয়ে। ধন্যবাদ।

Tags

You might Also Enjoy.....

আমলকি খাওয়ার উপকারিতা

আমলকি খাওয়ার উপকারিতা

Read More

মধু খাওয়ার উপকারিতা ।

Read More
দলিল আছে রেকর্ড নাই

দলিল আছে রেকর্ড নাই ll করণীয় কি?

Read More

4 responses to “চ্যাট জিপিটি: প্রযুক্তির এক নতুন দিগন্তের ‍উন্মোচন।”

  1. […] আরো পড়ুন: চ্যাট জিপিটি কি? ও কিভাবে ব্যবহার করতে… […]

Leave a Comment

Join Us

Recommended Posts

আমলকি খাওয়ার উপকারিতা

আমলকি খাওয়ার উপকারিতা

মধু খাওয়ার উপকারিতা ।

দলিল আছে রেকর্ড নাই

দলিল আছে রেকর্ড নাই ll করণীয় কি?

ইউরোপের কোন দেশের ভিসা পাওয়া সহজ।

ইউরোপের কোন দেশের ভিসা পাওয়া সহজ

দলিলের খুটিনাটি

দলিল সম্পর্কে খুটিনাটি ll খতিয়ান কি

ইউরোপের কোন দেশে নাগরিকত্ব পাওয়া সহজ

ইউরোপের কোন দেশে নাগরিকত্ব পাওয়া সহজ

ইউরোপে যাওয়ার সহজ উপায়

ইউরোপ যাওয়ার সহজ উপায়

About this site

সাইটটি মূলত টেকনোলজি রিলেটেড। নিত্য নতুন টেকনোলজি সম্পর্কে এখানে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। পাশাপাশি এসএএস পরীক্ষার জন্যও এখানে ম্যাটেরিয়ালস আপলোড করা হয়। সকল এসএএস পরীক্ষার্থীদের জন্য ভবিষ্যতে এই সাইটটি গূরুত্ত্বপূর্ণ সোর্স হতে চলেছে। পরীক্ষা সংক্রান্ত সকল কিছুই এখানে পেয়ে যাবেন ইনশাল্লাহ।

Top Rated Posts

প্রতিবন্ধী ভাতার আবেদন

প্রতিবন্ধী ভাতার আবেদন

জমির খাজনা চেক

জমির খাজনা চেক

পড়া মনে রাখার উপায়

পড়া মনে রাখার উপায়

জমির মালিকানা বের করার উপায়

জমির মালিকানা বের করার ‍উপায়

Recommended Posts

গুরুদন্ড প্রদানের প্রক্রিয়া

গুরু দন্ড প্রদানের প্রক্রিয়া

লঘুদন্ড প্রদানের প্রক্রিয়া

লঘুদন্ড প্রদানের প্রক্রিয়া

গুগল বার্ড কি?

গুগল বার্ড কি? গুগল বার্ড এর আদ্যোপান্ত।

ডিপফেক প্রযুক্তি

ডিপফেক প্রযুক্তি: সেরা ১২ টি ডিপফেক অ্যাপস।