পড়া মনে রাখার উপায়

Last Updated On:

পড়া মনে রাখার উপায়

পড়া মনে রাখার উপায় নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেক ভুল ধারণা আছে। আজ সেই ভুল ধারণাগুলো এবং সঠিক নিয়ম বা পড়া মনে রাখার উপায় কি আজ সে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।

আরো পড়ুন- নিরাপদে কিভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করবেন।

আমরা প্রায়ই কিছু না কিছু পড়ি। কেউ অ্যাকাডেমিক বই পড়ি আবার কেউ গল্প বা উপন্যাসের বই পড়ি। কেউ সাইন্স ফিকশন, ম্যাগাজিন, পত্রিকা, ব্লগ ইত্যাদি পড়ি। এত কিছু পড়ার পরেও খুব সামান্য কিছু মনে রাখতে পারি। আবার কিছু পড়া কিছু দিন পর একেবারেই ভুলে যাই। কিন্তু কিছু পড়া অনেক দিন মনে থাকে। এমন কেন হয়?

আমরা অনেকেই পড়া মনে রাখার উপায় হিসেবে বিভিন্নভাবে পড়তে অভ্যস্ত। যেমন কেউ উচ্চস্বরে পড়ি, কেউ মনে মনে পড়ি, কেউ লিখে লিখে পড়ি, কেউ শুয়ে শুয়ে পড়ি কিন্তু কোন পড়ার স্টাইলটা বেশি কার্যকর? প্রকৃতপক্ষে এখানে কোন পড়ার স্টাইলই খুব একটা কার্যকর নয়।

পড়া মনে রাখার উপায়

কারণ, আপনি উচ্চস্বরে পড়লে কিছুক্ষণ পড়ে ক্লান্ত হয়ে যাবেন। মনে মনে পড়লে অনেকক্ষণ পড়তে পারবেন, কিন্তু মনোযোগ বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারবেন না। কারণ মন যখন শান্ত থাকে তখন মনে অনেক ভাবনা-চিন্তা চলে আসে। এতে অন্য দিকে মনোযোগ চলে যায়। আর আপনি লিখে লিখে পড়লে অন্যগুলোর চেয়ে ভালো করবেন এবং বানান শুদ্ধ করতে পারবেন কিন্তু এটাই পড়া দীর্ঘক্ষণ মনে রাখার একমাত্র উপায় নয়। আর শুয়ে শুয়ে পড়ার উদ্দেশ্যই থাকে ঘুমানোর। আপনি যদি নাও ঘুমাতে চান, তারপরও আপনি ঘুমাতে বাধ্য। কারণ আপনি ঘুমানোর জন্য নিজেকে একধাপ এগিয়ে রাখছেন। তাহলে উপায়? উপায় অবশ্যই আছে। আজ আপনাদের সাথে সেই সকল উপায় নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করবো।

প্রবল আগ্রহ বা ইচ্ছা- পড়া মনে রাখার উপায় হিসেবে এটি অন্যতম। আপনি যখন কোন একটি বিষয় পড়বেন বা জানার চেষ্টা করবেন তখন সেই জিনিসটির প্রতি আপনার প্রবল জানার ইচ্ছা বা আগ্রহ থাকতে হবে। আপনি ক্ষুধার্ত থাকলে যেমন খাবারের আসল স্বাদ খুব ভালো ভাবে উপভোগ করতে পারবেন এটাও ঠিক তেমনি। তাই জ্ঞান পিপাসা অথবা জানার প্রবল ইচ্ছা থাকাটা বাঞ্ছনীয়। তা ছাড়া আপনার পড়ার রুমটা বিভিন্ন জ্ঞানমূলক উক্তি দিয়ে সাজাতে পারেন। এতে পড়ার প্রতি আগ্রহ আরও বাড়বে।

পড়া মনে রাখার উপায়

স্টাডি প্ল্যান- পড়া মনে রাখার উপায় জন্য এটি আরেকটি উত্তম উপায়। বলা হয়ে থাকে যে, একটি উত্তম পরিকল্পনা কাজের অর্ধেক। তাই আপনি কী পড়বেন, কখন পড়বেন, কীভাবে পড়বেন, কতক্ষণ বা কতদিন পড়বেন এ বিষয়গুলো আগে থেকই ঠিক করে নেওয়া পরিকল্পনার অংশ। এছাড়া আপনি কি জানতে অথবা কেন জানতে চান, এটা জেনে কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে চান বা কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারবেন- এ বিষয়গুলোর ওপরও একটা পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে।

অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা- পড়াশুনার জন্য চাই অনুকূল পরিবেশ। পড়া মনে রাখার উপায় হিসেবে এটি দারুন কার্যকার। মনে করুন আপনার পড়ার অনেক ইচ্ছা আছে, কিন্তু আপনার বাসাভর্তি মেহমান বা ধরুন বাসায় কোন কাজ চলছে তাহলে আপনার পড়ার অনুকূল পরিবেশ আর থাকল না। তাই আপনার প্রয়োজন নীরব-নিভৃত পরিবেশ।

মার্কিং করে পড়া- পড়ার সময় বেশি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ বা লাইন মার্কিং করতে হবে। প্রয়োজনে পেন্সিল অথবা হাইলাইটার বা এজাতীয় কোন কিছু ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে পুনরায় পড়ার সময় শুধু হাইলাইট বা মার্ক করা শব্দে বা লাইনে চোখ বুলালেই হবে। এভাবে সময়ও বাঁচবে। এক্ষেত্রে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো অজানা শব্দের অর্থ বা ব্যাখ্যা জেনে নেওয়া।

কি ওয়ার্ড নির্বাচন- যে কোনো টপিকের কয়েকটি কি ওয়ার্ড থাকে। যেগুলো দিয়ে পুরো টপিকটা মনে রাখা যায়। তাই পড়া মনে রাখার আরও একটি কৌশল হলো কি ওয়ার্ড নির্বাচন করা। পড়া মনে রাখার উপায় হিসেবে এটি দারুন কাজ করে। যেমন ধরেন আপনি কোন একটা বিষয়ে পড়ছেন এবং সেই বিষয়টি অনেক দীর্ঘ। এত দীর্ঘ তথ্য আপনি কোনভাবেই মনে রাখতে পারছেন না। এক্ষেত্রে আপনি যেটা করতে পারেন সেটা হল শুরু থেকে শেষ প্রতিটা ধাপে আপনি কিছু কিওয়ার্ড সেট করতে পারেন। এতে করে কিওয়ার্ডগুলো মনে থাকলে আপনার পুরো বিষয়গুলো মনে থাকবে।

ফ্লো-চার্ট ব্যবহার করা- একটু খেয়াল করলে দেখবেন যে, প্রত্যেকটি প্যাসেজ বা টপিকেরই একটি বিশেষ ধারাবাহিকতা থাকে। অর্থাৎ, ধারাবাহিকভাবে তথ্যগুলো বিদ্যমান থাকে। পড়া মনে রাখার উপায় হিসেবে ধারাবাহিক এ সকল ছোট ছোট তথ্য দিয়ে একটি ফ্লো-চার্ট সাজাতে পারেন। যেমন ধরুন আপনি করোনাভাইরাস নিয়ে কোনো প্যাসেজ বা টপিক পড়ছেন। এক্ষেত্রে ফ্লো-চার্টটি এমন হতে পারে : করোনাভাইরাস কী, ভাইরাসের উৎপত্তি,  সংক্রমণের মাধ্যম, প্রতিরোধের উপায় ইত্যাদি।

ভিজুয়ালাইজেশন সৃষ্টি করা- টেলিভিশনে বা অন্য কোন মাধ্যমে আমরা যখন কোনো নাটক বা সিনেমা দেখি তখন সেই নাটক বা সিনেমাটা সহজেই মনে রাখতে পারি। এমনটা কেন হয় বলুন তো? এর প্রকৃত বা মূল কারণ যেটা সেটা হলো ভিজুয়ালাইজেশন। আপনি যে টপিকটি মনোযোগ দিয়ে পড়লেন বা পড়ে মনে রাখার চেষ্টা করছেন তা যদি ভিজুয়ালাইজড করা যায় অর্থাৎ, ভিডিও, ছবি, গ্রাফ বা চার্ট আকারে উপস্থাপন করা যায়- তাহলে পড়া বা তথ্য মনে রাখাটা আরও বেশি সহজ হবে। কারণ ভিজুয়ালাইজেশনে আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো বেশি সজাগ থাকে।

গ্রুপ করে পড়া- মনে করুন আপনি কোন একটা বিষয় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন এবং সেই বিষয়টা আপনার সামনে আছেও কিন্তু আপনি সেটা পড়ে কিছুই বুঝতে পারছেন না এমতাবস্থায় আপনি কয়েকজনের সাহায্য নিতে পারেন এক্ষেত্রে আপনি একটা গ্রুপের মতো করে তাদের সাথে এই বিষয়টা নিয়ে ডিসকাস করতে পারেন। অবশ্যই এই বিষয়ে যারা অভিজ্ঞ তাদেরকে নিয়েই গ্রুপটা করবেন। তাহলে দেখবেন সেই বিষয়টা আপনার কাছে ক্লিয়ার হয়ে যাবে।

প্রশ্ন অনুশীলন করে পড়া- কোন একটা টপিক বা বিষয় পড়ার পর সেই টপিক রিলেটেড কিছু প্রশ্ন তৈরি করা বা তৈরিকৃত প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করা। যেমন ধরেন আপনি নিজেই নিজেই বিভিন্ন প্রশ্ন করতে পারেন। যেমন, কী, কেন, কীভাবে, কখন, কোথায় ইত্যাদি প্রশ্নের জবাবে টপিকের গভীরে যাওয়া যায়। এতে দীর্ঘক্ষণ পড়া মনে থাকে।

উদাহরণ সৃষ্টি- আপনি যে টপিকটি পড়ছেন তার সঙ্গে মিল রেখে বাস্তব কিছু ঘটনা বা উদাহরণ যদি খুঁজে বের করতে পারেন তাহলে পড়া বা তথ্য মনে রাখাটা আরও বেশি সহজ হবে। মনে করুন আপনি যুদ্ধের কুফল নিয়ে পড়ছেন। এখন কোন যুদ্ধের কুফল কি কি হতে পারে এ বিষয়ে জানতে আপনি চলমান যে কোন যুদ্ধ পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য করলে বিষয়গুলো আপনার কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে এবং আপনার মনেও থাকবে অনেক সময় পর্যন্ত।

বিরতি- পড়া মনে রাখার উপায় হিসেবে এটি দুর্দান্ত পদ্ধতি। প্রত্যেকবার পড়তে বসার সময় ছোট ছোট সময় নিয়ে (প্রতিবার ২০-৩০ মিনিট পড়ার পর পাঁচ-সাত মিনিট) বিরতি দিয়ে পড়লে বেশিক্ষণ পড়া যায়। আপনি চাইলে আজই একবার ট্রাই করে দেখতে পারেন। এত করে পড়ার প্রতি একঘেয়েমি ভাবটা দূর হয় এবং মস্তিষ্কে চাপ কম পড়ে। কারণ একটানা পড়লে মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং কিছুক্ষণ পড়ার পর মস্তিষ্ক আর লোড নিতে পারে না। ফলে পড়ার প্রতি আর আগ্রহ থাকে না। এতে মনোযোগ নষ্ট হয়ে যায়।

শুয়ে শুয়ে মনে করার চেষ্টা করা- সারাদিন যা পড়লেন তা ঘুমানোর আগে শুয়ে শুয়ে মনে করার চেষ্টা করাটাও পড়া মনে রাখার একটা ভালো কৌশল। মনে করুন কোন একটা বিষয় সম্পর্কে আপনি পড়লেন এখন সেগুলোকে যদি আপনি রেভিশন বা রিভাইস না দেন তাহলে সেগুলো মনে থাকা সম্ভাবনা খুবই কম আর এগুলো রিভিশন বা ডিভাইস দেওয়ার সর্বোত্তম সময় হলো ঘুমানোর সময় আপনি যখন ঘুমাতে যাবেন তখন চোখ বন্ধ করে টোটাল বিষয়গুলো মনে করার চেষ্টা করুন যদি কোন বিষয়ে মনে করতে না পারেন তাহলে আবারও বইটি খুলে দেখুন এবং এভাবে বারবার চেষ্টা করতে থাকুন। পড়া মনে রাখার উপায় হিসেবে এটি দারুণ কার্যকর।

রিভিশন করা- আমরা সবাই সেই ছোটবেলা থেকে এ পর্যন্ত অনেক কিছুই পড়েছি কিন্তু সবই কি আমাদের মনে আছে? উত্তর- না। এর কারণ আমরা রিভিশন দেই না। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে- আমরা যখন পড়ি, তার এক ঘণ্টা পর ৪৪ শতাংশ পড়া আমাদের মনে থাকে। একদিন পর ৩০ শতাংশ মনে থাকে। আর এক সপ্তাহ পর মাত্র ২০ শতাংশ মনে থাকে। তার মানে, এক সপ্তাহ পর ৮০ শতাংশই ভুলে যাই।

তাই রিভিশনের মাধ্যমে পড়া মনে রাখাটা একটা বড় কৌশল। কারণ আমরা যখন পড়ি, তখন তা আমাদের ব্রেইনের শর্ট-টার্ম মেমোরিতে জমা হয়। যা কিছুক্ষণ বা কিছুদিন পরে ভুলে যাই। কিন্তু যদি আমরা বারবার রিভিশন দেই, তাহলে তা শর্ট-টার্ম মেমোরি থেকে লং-টার্ম মেমোরিতে স্থানান্তরিত হয়। এতে অনেক দিন পড়া বা তথ্য মনে থাকে। রিভিশন দেওয়া মানে পুরো টপিকটা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়া না, রিভিশন দেওয়া মানে পূর্বে হাইলাইট করা বা মার্ক করা শব্দে বা লাইনে চোখ বুলানো। তাই পড়া মনে রাখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো রিভিশন। পড়া মনে রাখার উপায় মনে রাখার উপায় হিসেবে এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

শেষ কথা- পড়া মনে রাখার উপায় হিসেবে আপনি নিজে হয়তো অনেক পদ্ধতি অবলম্বন করেন তার পাশাপাশি যদি আপনি লিখিত পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করতে শুরু করেন তাহলে দেখবেন আপনার পড়াটা আরো অনেকদিন মনে থাকবে আসলে পড়া মনে রাখার উপায় হিসেবে ইউনিট কোন পদ্ধতি নেই অনেকগুলো পদ্ধতির সমন্বয়ে আপনি পড়া বা যে কোন কিছু মন রাখতে পারবেন।

আরো জানতে- পড়া মনে রাখার উপায়।

Tags

top

You might Also Enjoy.....

আমলকি খাওয়ার উপকারিতা

আমলকি খাওয়ার উপকারিতা

Read More

মধু খাওয়ার উপকারিতা ।

Read More
দলিল আছে রেকর্ড নাই

দলিল আছে রেকর্ড নাই ll করণীয় কি?

Read More

One response to “পড়া মনে রাখার উপায়”

  1. […] আরো পড়ুন- পড়া মনে রাখার উপায়। […]

Leave a Comment

Join Us

Recommended Posts

আমলকি খাওয়ার উপকারিতা

আমলকি খাওয়ার উপকারিতা

মধু খাওয়ার উপকারিতা ।

দলিল আছে রেকর্ড নাই

দলিল আছে রেকর্ড নাই ll করণীয় কি?

ইউরোপের কোন দেশের ভিসা পাওয়া সহজ।

ইউরোপের কোন দেশের ভিসা পাওয়া সহজ

দলিলের খুটিনাটি

দলিল সম্পর্কে খুটিনাটি ll খতিয়ান কি

ইউরোপের কোন দেশে নাগরিকত্ব পাওয়া সহজ

ইউরোপের কোন দেশে নাগরিকত্ব পাওয়া সহজ

ইউরোপে যাওয়ার সহজ উপায়

ইউরোপ যাওয়ার সহজ উপায়

About this site

সাইটটি মূলত টেকনোলজি রিলেটেড। নিত্য নতুন টেকনোলজি সম্পর্কে এখানে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। পাশাপাশি এসএএস পরীক্ষার জন্যও এখানে ম্যাটেরিয়ালস আপলোড করা হয়। সকল এসএএস পরীক্ষার্থীদের জন্য ভবিষ্যতে এই সাইটটি গূরুত্ত্বপূর্ণ সোর্স হতে চলেছে। পরীক্ষা সংক্রান্ত সকল কিছুই এখানে পেয়ে যাবেন ইনশাল্লাহ।

Top Rated Posts

প্রতিবন্ধী ভাতার আবেদন

প্রতিবন্ধী ভাতার আবেদন

জমির খাজনা চেক

জমির খাজনা চেক

পড়া মনে রাখার উপায়

পড়া মনে রাখার উপায়

জমির মালিকানা বের করার উপায়

জমির মালিকানা বের করার ‍উপায়

Recommended Posts

গুরুদন্ড প্রদানের প্রক্রিয়া

গুরু দন্ড প্রদানের প্রক্রিয়া

লঘুদন্ড প্রদানের প্রক্রিয়া

লঘুদন্ড প্রদানের প্রক্রিয়া

গুগল বার্ড কি?

গুগল বার্ড কি? গুগল বার্ড এর আদ্যোপান্ত।

ডিপফেক প্রযুক্তি

ডিপফেক প্রযুক্তি: সেরা ১২ টি ডিপফেক অ্যাপস।