বিভিন্ন কারণে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করার প্রয়োজন পড়ে। তবে অনেকের কাছেই জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করাটা খুবই জটিল ও কঠিন বলে মনে হতে পারে। আমার এই আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়লে আশা করি আপনাদের সেই ধারনা পাল্টে যাবে। তো চলুন শুরু করা যাক।
আরো পড়ুন: এনআইডি একাউন্ট লক হলে করণীয়।
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করার নিয়ম ও অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনায় আপনাকে স্বাগতম। নিজে নিজে আইডি কার্ডের তথ্য পরিবর্তন (NID Card Correction) করার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে সাজানো হয়েছে।
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন
জাতীয় পরিচয়পত্রে কোন প্রকার ভুল থাকলে অর্থাত তথ্যে কোন প্রকার ভুল থাকলে তা সংশোধন করে নেয়া যায়। ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন তথা জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করার নিয়ম প্রত্যেকেরই জানা খুবই প্রয়োজন। বিভিন্ন সময় আমাদের আইডি কার্ডে বিভিন্ন তথ্যের গরমিল দেখা যায়। এটা বিভিন্ন কারণে হতে পারে যেমন আপনি যখন আইডি কার্ড করছেন তখন যদি কোন ভুল তথ্য দেন অথবা যে অপারেটর আপনার আইডি কার্ডের কাজটি করছে সে যদি ভুল টাইপিং করে সে ক্ষেত্রে আপনার আইডি কার্ডে ভুল তথ্য আসতে পারে। জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন এখন অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমেই করা যায়। জাতীয় পরিচয়পত্রের নিজের নামে ভুল হলে বা বাবা-মার নাম ভুল লিপিবদ্ধ হলে তা খুব সহজে সংশোধন করা যায়।
অনেকের মধ্যে এমন ধারণা আছে যে আইডি কার্ডে যদি জন্ম তারিখে কোন ভুল থাকে তাহলে আর জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন বা ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করা যায় না। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। আইডি কার্ডের মধ্যে জন্ম তারিখ সংক্রান্ত যেকোনো ভুল সংশোধন করা যায়।জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করার জন্য মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে ভিজিট করুন services.nidw.gov.bd এই সরকারি ওয়েবসাইটে। জাতীয় পরিচয় পত্র নাম্বার, জন্মতারিখ ব্যাবহার করে একাউন্ট রেজিস্টার করুন। মোবাইল নাম্বার যাচাই এবং ফেইস ভেরিফিকেশন করে nid website ড্যাশবোর্ড থেকে এডিট প্রোফাইলে ক্লিক করে প্রয়োজনীয় তথ্য সংশোধন করুন। সবশেষ সংশোধন ফি জমা দিয়ে অনলাইনে আবেদন জমা দিন।
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন বা ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন এর জন্য আবেদন জমা দেয়ার আগে খেয়াল রাখতে হবে যাতে সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রমানপত্র আপলোড করা হয়। আপনার ভোটার আবেদনে যে তথ্য পরিবর্তন করতে চান তা তার সত্যতা প্রমাণ করার জন্য তার বিপরীতে সত্যায়িত ডকুমেন্ট সংশ্লিষ্ট আবেদনপত্রের সাথে জমা দিতে হয়। আইডি কার্ড সংশোধন আবেদন সামঞ্জস্য এবং বৈধ হলে সাধারনত ২৫ দিন থেকে ৩০ দিন এর মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন তথা ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন আবেদন অনুমোদন পেয়ে যাবেন। তবে নির্বাচন চলাকালীন সময়ে এই অনুমোদনের সময়সীমা পরিবর্তন হতে পারে।
ভোটার আইডি কার্ড বা এনআইডি কার্ড সংশোধন করার জন্য কি কি লাগে
এনআইডি কার্ড সংশোধন বা জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করার জন্য কি কি ডকুমেন্টস বা কাগজপত্র জমা দিতে হবে তা নির্ভর করে জাতীয় পরিচয়পত্রে কি ধরনের তথ্য পরিবর্তন করতে চান তার উপর। জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে প্রধানত শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট, অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ, ড্রাইভিং লাইসেন্স (যদি থাকে) এবং ই পাসপোর্ট এই সকল ডকুমেন্টস ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনে বেশি কার্যকর ভুমিকা পালন করে।
উপরে উল্লিখিত মৌলিক ডকুমেন্ট গুলো না থাকলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এফিডেভিট (হলফনামা), নাগরিক সনদ বা ওয়ারিশ সনদ আপলোড করতে হয়। আইডি কার্ডে স্বামী কিংবা স্ত্রীর নাম সংশোধন (পরিবর্তন) করতে কাবিন নামার প্রয়োজন হয়। তেমনি ভাবে জাতীয় পরিচয়পত্রে রক্তের গ্রুপ না দেয়া থাকলে তা যুক্ত করতে অথবা (পরিবর্তন) করতে মেডিক্যাল ক্লিনিক হতে রক্তের গ্রুপিং টেস্ট রিপোর্ট আপলোড করতে হয়। ঠিকানা সংশোধন করতে বিদ্যুৎ বিলের ডকুমেন্টস / কাগজ বা ইউটিলিটি বিলের কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে প্রকৃতপক্ষে কত টাকা লাগে?
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন বা জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে সর্বনিন্ম ২৩০টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩৪৫টাকা ফি প্রদান করতে হয়। আবেদনের ধরনের উপর সংশোধন ফি নির্ভর করে। ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ৩টি প্রধান শ্রেণিতে বিভক্ত-
- ব্যক্তিগত তথ্য সংশোধন
- অন্যান্য তথ্য
- ঠিকানা পরিবর্তন
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত টাকা জমা দিতে হয় তার একটি তালিকা নিজে উল্লেখ করা হলো
সংশোধনের ধরণ | সংশোধন ফি |
ব্যক্তিগত তথ্য সংশোধন | ২৩০ টাকা |
অন্যান্য তথ্য সংশোধন | ১১৫ টাকা |
উভয় তথ্য সংশোধন | ৩৭৫ টাকা |
আইডি কার্ড রিইস্যু (Urgent) | |
আইডি কার্ড রিইস্যু (Regular) | ২৩০ টাকা |
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফি তালিকা
ভোটারআইডি কার্ডের সংশোধন ফি বিকাশ , রকেট বা নগদ মোবাইল ব্যাংকিং এর সাহায্যে পরিশোধ করা যায়। বিকাশে NID নাম্বার দিয়ে ভোটার আইডি কার্ডের সংশোধন ফি জমা দেয়া যায়।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার নিয়ম
অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার জন্য আপনাকে প্রথমে এনআইডি ওয়েবসাইটে আপনার NID Number, জন্ম তারিখ এবং একটি সিকিউরিটি ক্যাপচা পূরণ করে অ্যাকাউন্ট রেজিস্টার করতে হবে। তারপর ফেস ভেরিফিকেশন করে অ্যাকাউন্ট লগইন করুন। আপনার প্রোফাইলের এডিট বাটনে ক্লিক করে প্রয়োজনীয় তথ্য পরিবর্তন করে আবেদন জমা দিন।
সবার বুঝার সুবিধার জন্য বিষয়টি কয়েকটি ছোট ছোট ধাপে বিভক্ত করা হয়েছে। চলুন আইডি কার্ড সংশোধন করার পুরো প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে দেখে নেই।
অ্যাকাউন্ট রেজিস্ট্রেশন
জাতীয় পরিচয় পত্র ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করার জন্য প্রথমে ভিজিট করতে হবে https://services.nidw.gov.bd/nid-pub/ ওয়েবসাইটে। ভোটার আইডি কার্ডের নাম্বার, জন্ম তারিখ, ঠিকানা, মোবাইল নাম্বার ভেরিফিকেশন করে অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে।
ভোটার আইডি তথ্য প্রদান
অ্যাকাউন্ট তৈরির এই পর্যায়ে যার NID Card information change করতে চাচ্ছেন তার জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার, জন্মতারিখ দিয়ে ফরম ফিলাপ করতে হবে। এনআইডি কার্ডের নাম্বার জানা না থাকলে ভোটার স্লিপের ফরম নাম্বার ব্যাবহার করতে পারবেন।
জাতীয় পরিচয় পত্রের ঠিকানা যাচাই
ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য সঠিক ভাবে পূরণ করা হলে, এখন আপনাকে জাতীয় পরিচয় পত্রের ঠিকানা যাচাই করতে বলা হবে। ভোটার আইডি কার্ডের আবেদনে বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা যেমন দেয়া ছিলো ঠিক তেমন করে ঠিকানা দিতে হবে।
মোবাইল নাম্বার ভেরিফিকেশন
আইডি কার্ডে আপনার যে মোবাইল নাম্বার দেয়া ছিলো সেই নাম্বারটির প্রথমের কিছু সংখ্যা এবং শেষের ৩টি নাম্বার দেখানো হবে। এই মোবাইল নাম্বার আপনার কাছে থাকলে কোড পাঠানোর জন্য “বার্তা পাঠান” বাটনে চাপুন। আর ফোন নাম্বারটি না থাকলে নতুন একটি নাম্বার দিন।
আপনার মোবাইলে ৬ সংখ্যার ভেরিফিকেশন কোড চলে গেলে সেটি যাচাইকরন কোডের ঘরে বসিয়ে “বহাল” চাপুন। নাম্বার ভেরিফিকেশন হয়ে গেলে আপনাকে নিয়ে যাবে ফেস ভেরিফিকেশন করার জন্য।
অ্যাকাউন্ট রেজিস্ট্রেশনের শেষ ধাপে NID Wallet App এর মাধ্যমে Face Verification করে প্রোফাইলে প্রবেশ করুন। ফেস ভেরিফিকেশন করতে ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত QR Code স্ক্যান করুন।
এনআইডি ওয়ালেট (NID wallet) অ্যাপে ফেস স্ক্যান শুরু হলে যার ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য সংশোধন করা হবে তার মুখমণ্ডল ডানে বামে নাড়িয়ে স্পষ্ট ছবি তুলে একাউন্ট রেজিস্ট্রেশনের কাজ শেষ করতে হবে। এর মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করা হয় যেন nid card এর আসল গ্রাহকই কেবল একাউন্ট এক্সেস করতে পারে। সুতরাং যখন এই কাজটি করা হবে তখন খুবই সতর্কতার সহিত করা উচিত
আরো পড়ুন: এনআইডি কার্ডের জন্য আবেদন: সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া।
Face Verification ধাপ শেষ হলে আপনার অ্যাকাউন্ট এর পাসওয়ার্ড সেট করতে বলা হবে। চাইলে পাসওয়ার্ড দিতে পারেন, আর না চাইলে এড়িয়ে যেতে পারেন। এখানে পাসওয়ার্ড দেয়ার সুবিধে হলো এই যে, পরবর্তীতে আপনার অ্যাকাউনন্টে লগ-ইন করার সময় আবার ভেরিফিকেশন গুলো করার প্রয়োজন হবে না। জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার এবং পাসওয়ার্ড দিয়েই লগইন করা যায়।
ভোটার আইডি তথ্য সংশোধন
অ্যাকাউন্ট রেজিস্ট্রেশনের ধাপটি সফলভাবে করতে পারলে এখন nid website এ লগইন অবস্থায় আছেন। হোম থেকে প্রোফাইল টেব এ চলে যান। জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ৩টি প্রধান ক্যাটাগরিতে বিভক্ত।
- ঠিকানা পরিবর্তন/সংশোধন
- অন্যান্য তথ্য সংশোধনব্যক্তিগত তথ্য সংশোধন
- ব্যক্তিগত তথ্য সংশোধন
ব্যক্তিগত তথ্য সংশোধনের তালিকায় নিজের নাম (বাংলা এবং ইংরেজি), জন্ম তারিখ, পিতার মাতার নামের ভুল সংশোধন করাতে পারবেন। ব্যক্তিগত তথ্য সংশোধনের অধিনে যে সকল তথ্য পরিবর্তন করা যায় তা হলব্যক্তির নিজের নাম (বাংলা)
- ব্যক্তির নিজের নাম (English)
- জন্ম তারিখ পরিবর্তন
- জন্ম নিবন্ধন নাম্বার
- লিঙ্গ
- জন্মস্থান
- পিতার নাম সংশোধন (বাংলা)
- পিতার ভোটার আইডি কার্ডের নাম্বার
- মায়ের নাম সংশোধন (বাংলা)
- মায়ের ভোটার আইডি কার্ডের নাম্বার
এবার তালিকায় থাকা এক বা একাধিক তথ্য সংশোধন বা পরিবর্তন করার জন্য ব্যক্তিগত তথ্য নামক ট্যাব থেকে এডিট বাটনে ক্লিক করুন এবং আপনি যে তথ্য সংশোধন করতে চান সেটা বাছাই করুন
এবার আপনি যে তথ্যটি সংশোধন করতে চান সেটির বাম পাশের টিক চিহ্নতে ক্লিক করুন। একইভাবে যতগুলো তথ্য আপনি সংশোধন করতে চান ততগুলো তথ্য প্রমাণ পত্রের সাথে মিল রেখে সঠিকভাবে টাইপ করুন এবং পরবর্তী বা নেক্সট বাটনে ক্লিক করুন। এখানে এসে আপনি তথ্যটির পূর্বরূপ এবং এখনকার রূপ অর্থাৎ সংশোধিত রূপ দেখতে পাবেন। যদি সব কিছুই ঠিকঠাক থাকে তাহলে পরবর্তী বা নেক্সট বাটনে ক্লিক করুন।
সংশোধনি তথ্য পুনঃযাচাই
আপনি যে সব তথ্য পরিবর্তন করতে চলেছেন তার একটি সামারি দেখাবে। এই ধাপে আওনার জাতীয় পরিচয় পত্রে আগে কি ছিলো এবং আপনার চাহিত সংশোধন তথ্যের একটি তালিকায় দেখাবে। এখন এটি চেক করে পরবর্তী বাটনে চাপুন।
জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করতে কি কি ডকুমেন্টস প্রয়োজন হয় এবং কোন ধরনের পরিবর্তনের জন্য কি কাগজ আপলোড করতে হয় তা বিস্তারিত জানতে পারেন।
ট্রানজেকশন / ফি প্রদান
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য সরকারি ফি দিতে হয়। সংশোধন ফি সংশোধনের ধরণ অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন হয়। প্রথম দিকেই ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফিসের একটি তালিকা প্রকাশ করেছি। তালিকা থেকে দেখে নিন আপনার পরিবর্তনের জন্য কত টাকা ফি দিতে হবে।
বর্তমানে সংশোধন ফি বিকাশ, রকেট ও নগদ একাউন্ট ব্যাবহার করে পরিশোধ করা যায়। আপনার কাছে যে মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট রয়েছে সেটি দিয়েই জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফি জমা দিতে পারবেন।
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফি জমা দেয়ার নিয়ম
কোন তথ্য সংশোধন করার জন্য যে ফ্রি লাগে সেটা আপনি যে কোন মোবাইল অপারেটরের ব্যাংকিং একাউন্ট অর্থাৎ বিকাশ নগদ রকেট এই জাতীয় একাউন্ট থেকে পরিশোধ করতে পারবেন বাংলাদেশে বিকাশ একাউন্ট বেশি জনপ্রিয় হওয়ায়, বিকাশে ভোটার আইডি সংশোধন ফি জমা দেয়ার নিয়ন দেখানো হলো।
বিকাশে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফি পরিশোধ
বিকাশের মাধ্যমে NID Correction Fee দেয়ার জন্য প্রথমে বিকাশ অ্যাপে প্রবেশ করুন। বিকাশের ড্যাশবোর্ড থেকে পে বিল অপশন বাছাই করুন। তারপর সরকারি ফি থেকে NID Service সিলেক্ট করুন। আবেদনের ধরন এবং আইডি কার্ডের নাম্বার দিয়ে পেমেন্ট করুন।
সংশোধনের ধরন বাছাই করলে বিকাশ অ্যাপ আপনাকে কত টাকা পেমেন্ট করতে হবে তা দেখাবে। আপনার বিকাশে পর্যাপ্ত টাকা থাকলে বিকাশের পিন দিয়ে পেমেন্ট করুন বাটনে চাপলে পেমেন্ট হয়ে যাবে। এখানে পেমেন্ট দেয়া হয়ে গেলে NID ওয়েবসাইটে আপনার একাউন্টে টাকা জমা হয়ে যাবে।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড
আপনি আইডি কার্ডের যে তথ্য পরিবর্তনের জন্য আবেদন জমা দিতে চলেছেন, তা প্রমান করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র আপলোড কতে হবে। ব্যক্তিগত তথ্য সংশোধনের জন্য সবথেকে কার্যকর প্রমান হলো শিক্ষাগত যোজ্ঞতার সনদ, পাসপোর্ট কিংবা ড্রাইভিং লাইসেন্স। তার পাশাপাশি অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ আপলোড করতে হবে।
পিতা মাতার নামের বানান পরিবর্তন করতে হলে মা-বাবার আইডি কার্ডের স্ক্যান কপি এবং ভাই বোনের আইডি কার্ডের স্ক্যান কপি আপলোড করতে হয়। ঠিকানা পরিবর্তনের জন্য আবেদন করলে বিদ্যুৎ বিলের কাগজ বা যে কোন ইউটিলিটি বিলের কপি আপলোড করতে হয়।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন আবেদন সাবমিট হয়ে গেলে আপনি চাইলে সংশোধন ফরম ডাউনলোড করে রাখতে পারেন। আবেদন অনুমোদন হয়ে গেলে স্থানীয় নির্বাচন কমিশন অফিস থেকে আপনার সংশোধিত আইডি কার্ড সংগ্রহ করতে এই আবেদন ফরমটি প্রয়োজন হতে পারে। তবে অনলাইনে জাতীয় পরিচয় পত্র ডাউনলোড করতে সংশোধন ফরম দরকার নেই।
আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন আবেদন সফল ভাবে সাবমিট হলে এবং সাথে যথাযথ ডকুমেন্ট আপলোড দিলে সর্বোচ্চ ৪৫ দিনের মধ্যে আবেদন অনুমোদন হয়ে যায়। সচারাচর ৩ সপ্তাহের মধ্যেই সংশোধন আবেদন এপ্রোভ হয়ে যায়।
আপনার আবেদন অনুমোদন পেলে ফোনে মেসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে। তারপর আপনি সেটি অনলাইন থেকে ডাউনলোড করে লেমেনেটিং করে ব্যাবহার করতে পারবেন। আপনি চাইলে আপনার সংশোধিত ভোটার আইডি কার্ড উপজিলা নির্বাচন কমিশন অফিস থেকে সংগ্রহ করতে পারেন।
ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানা পরিবর্তন
জাতীয় পরিচয় পত্রের ঠিকানা পরিবর্তন করার জন্য অনলাইনে আবেদন করা যায় না। ঠিকানা পরিবর্তন করার জন্য ভোটার এলাকা স্থানান্তর ফরম পূরণ করে নির্বাচন অফিসে জমা দিতে হয়। এই ঠিকানা পরিবর্তন ফরম কে ১৩ নং ফরম বলা হয়।
ভোটার এলাকা পরিবর্তনের যথার্থ কারণ ও প্রমাণ থাকলে সহজেই জাতীয় পরিচয় পত্রের ঠিকানা পরিবর্তন করা যায়। আগের ঠিকানায় কত সময় ধরে বসবাস করছেন, বর্তমানে যে এলাকায় ভোটার হস্থান্তর করছেন তার কারণ উল্লেখ করতে হয় আবেদন ফরমে।
ভোটার এলাকা পরিবর্তন ফরম pdf
অনলাইনে জাতীয় পরিচয় পত্রের প্রায় সকল তথ্য পরিবর্তন/সংশোধন করার অপশন থাকলেও ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার বিষয়টি এখন অফলাইন ভিত্তিক রয়ে গেছে। ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে হলে Votar Area Migration Form পূরণ করে যে এলাকায় ভোটার হতে চান সে এলাকার নির্বাচন কমিশন অফিসে জমা দিতে হবে।
Migration Form পূরণ করে সাথে ভোটার এলাকা পরিপরতনের কারণ/প্রমানাধি নিয়ে স্থানীয় নির্বাচন অফিসে যেতে হবে। বাসস্থান পরিবর্তন বা চাকরির বদলির কারণে ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে চাইলে Job Posting Latter আবেদন ফরমের সাথে জমা দিতে হবে। আর বাসথান পরিবর্তনের কারণে ঠিকানা পরিবর্তন করতে চাইলে, বর্তমান ঠিকানার বিদ্যুৎ বিলের কাগজ বা যে কোন ইউটিলিটি বিলের কপি সাথে জমা দিতে হবে।
ভোটার আইডি কার্ড জন্ম তারিখ সংশোধন
জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্ম তারিখে ভুল থাকলে তা পরিবর্তন করার জন্য নির্বাচন ওয়েবসাইটের ভোটার আইডি পোর্টালে লগইন করুন। তারপর প্রোফাইল থেকে ব্যক্তিগত তথ্য অপশন থেকে এডিট বাটনে চেপে জন্ম তারিখের ঘরে টিক চিহ্ন দিয়ে, আপনার চাহিত জন্মতারিখ লিখুন।
সংশোধন ফি পরিশোধ করে আবেদন জমা দিন। ডকুমেন্ট আপলোড করার সময় আপনার চাহিত জন্ম তারিখ পমানিত হয় এমন প্রমাণপত্র জমা দিন। জন্ম তারিখ সংশোধন করতে বেশি কার্যকরি ডকুমেন্ট হলো SSC, HSC and JSC Board Certificate. যদি আপনার কোন শিক্ষাগত সার্টিফিকেট না থাকে, সেক্ষেত্রে পাসপোর্ট অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্স আপলোড করলেও অনুমোদন পাওয়া যায়
তবে যে ডকুমেন্টই প্রমাণ হিসেবে আপলোড করা হউক না কেন, আপনায়ে সংশোধন আবেদনের সাথে ডকুমেন্টের মিল থাকতে হবে। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে যাবে…
মনে করুন আইডি কার্ডে আপনার নাম ছিলো “আবুল মিয়া” আর এখন তা সংশোধন করে “বাবুল মিয়া” করতে চাচ্ছেন। তাহলে আপনি এর প্রমাণক হিসেবে যে সনদপত্র আপলোড করবেন সে সনদপত্রে অবশ্যই আপনার নাম আবুল মিয়া থাকতে হবে। প্রমাণ পত্রে এক রকম আছে আর আপনি অন্যরকম করতে চাইলে এই আবেদন কাজে আসবে না।
জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করতে কত দিন লাগে
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন হয়ে রিইস্যু হতে আনুমানিক ৬০ দিন সময় লাগে। তবে এটি নির্ভর করে আবেদনের ধরণ ও ক্যাটাগরির উপর। অনলাইনে উপযুক্ত প্রমাণপত্র আপলোড করে সঠিকভাবে আবেদন করার পর তা ১৪ থেকে সর্বোচ্চ ২১ দিনের মধ্যেই আবেদন অনুমোদন হয়ে যায়।
তবে নির্বাচন চলাকালীন সময়ে এই সময়সীমা বেড়ে যেতে পারে। আবেদনে কোন জটিলতা দেখা দিলে অনুমোদন পেতে বিলম্ব হতে পারে। আবেদনের প্রমাণাদি পুনরায় ভেরিফিকেশন করার জন্য কিছু ক্ষেত্রে আরো ৪-৫ দিন সময় বেশি লাগতে পারে।
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন সম্পর্কে সচারাচর জিজ্ঞেসিত হয় এমন কিছু প্রশ্ন এবং তার উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হলো। এখন পর্যন্ত আপনার মনে কোন প্রশ্ন ঘুরা ঘুরি করলে, নিচের প্রশ্ন উত্তর থেকে তার সমাধান পেয়ে যাবেন বলে আমার বিশ্বাস।
ভোটার আইডি কার্ড কতবার সংশোধন করা যায়?
আইডি কার্ড সংশোধনের কোন সীমা এখনো পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়নি। তবে একটি তথ্য কেবল একবারই পরিবর্তন করতে পারবেন। প্রথমবার তথ্য সংশোধনের জন্য ২৩০ টাকা আর দ্বিতীয় বার তথ্য সংশোধনের জন্য (একবার যা সংশোধন হয়েছে সেটি ছাড়া) ৩৪৫টাকা এর পর প্রতিবার ৪৬০টাকা করে ফি দিতে হবে।
বাবা মায়ের নামে ভুল থাকলে সংশোধন করতে কি লাগে?
আপনার nid card এ পিতা মাতার নামে ভুল থাকলে তা পরিবর্তন করতে উপড়ে দেখানো নিয়মেই আবেদন করবেন। এখানে আবেদন জমা দেয়ায়ে আগে প্রমাণে ডকুমেন্ট হিসেবে আপনার বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের স্ক্যান কপি, ভাই বোনের আইডি কার্ডের স্ক্যান কপি আর আপনার কোন বোর্ড পরিক্ষার সনদ/ড্রাইভিং লাইসেন্স/ পাসপোর্ট স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত দিন লাগে?
সংশোধনের ধরন ও ক্যাটাগরির উপর নির্ভর করে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন অনুমোদন পেতে ৩০ থেকে ৪৫দিন সময় লাগে। আবেদনের সাথে আপলোড করা ডকুমেন্ট সামঞ্জস্য হোলে ১৫ থাকে ২১দিনের মধ্যেই তথ্য পরিবর্তন হয়ে যায়।
NID Card এর নাম বা যে কোন তথ্য সংশোধন করতে কি কি লাগে?
NID Card এর নাম সংশোধন করতে সবথেকে কার্যকরী ডকুমেন্ট যে কোন বোর্ড পরীক্ষার সনদ (JSC, SSC, HSC) পড়ালেখা না করলে তার ড্রাইভিং লাইসেন্স অথবা ই পাসপোর্ট। এগুলোর কিছুই না থাকলে বিয়ের কাবিন নামা দিয়ে আবেদন করতে হয়।
মোবাইল নাম্বার পরিবর্তন করবো কি করে?
আইডি কার্ডের মোবাইল নাম্বার পরিবর্তন করার জন্য NID Website এ রেজিস্ট্রেশন করার সময় ফোন নাম্বার ভেরিফিকেশন করতে OTP পাঠানো হয়। সে ধাপে মোবাইল পরিবর্তন করুন বাটনে চেপে আপনার নতুন মোবাইল নাম্বার দিলেই মোবাইল পরিবর্তন হওয়র যাবে।
স্মার্ট কার্ড সংশোধন ফি কত?
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে সর্বনিন্ম ২৩০টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩৪৫টাকা ফি প্রদান করতে হয়। আবেদনের ক্যাটাগরি ও ধরনের উপর সংশোধন ফি নির্ভর করে।
আইডি কার্ডের বয়স বাড়াবেন কি করে?
নিজের মন মতো ভোটার আইডি কার্ডের বয়স বাড়ানো বা কমানো যায় না। বয়স পরিবর্তনের স্বপক্ষে প্রমাণ থাকলেই কেবল জন্মতারিখ পরিবর্তন করা যায়।
স্মার্ট কার্ড কিভাবে সংশোধন করা যায়?
স্মার্ট কার্ড অথবা এনআইডি কার্ড সংশোধন করার জন্য প্রথমে services.nidw.gov.bd এই ওয়েবসাইটে আপনার স্মার্ট কার্ড নম্বর ও জন্ম তারিখ দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। তারপর ফেইস ভেরিফিকেশন করে লগইন করতে হবে। এবার প্রোফাইল অপশনে গিয়ে এডিট লিংকে ক্লিক করে তথ্য সংশোধন করুন। সংশোধন ফি পরিশোধ ও প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র আপলোড করে আবেদন জমা দিতে হবে। আবেদন অনুমোদন হলে তথ্য সংশোধিত হবে।
কিভাবে এন আইডি কার্ডে রক্তের গ্রুপ যুক্ত/পরিবর্তন করব?
এনআইডি কার্ডে রক্তের গ্রুপ থাকাটা বেশ জরুরি। যে কোন জরুরি মুহূর্তে এন আইডি কার্ড দেখে রক্তের গ্রুপ সম্পর্কে জানতে পারবে। আইডি কার্ডে রক্তের গ্রুপ যুক্ত / পরিবর্তন করতে স্বাস্থ্য ক্লিনিক থেকে Blood group Test Report আবেদনের সাথে জমা দিতে হয়।
Leave a Comment