অনলাইনে এনআইডি কার্ডের জন্য আবেদন করতে এখনও অনেকে বেশ জটিল মনে করেন। যদিও বিষয়টি মোটেই অতটা জটিল নয় যতটা অনেকেই ভেবে থাকেন।
আরো পড়ুন: এনআইডি কার্ড দিয়ে মোবাইল নাম্বার চেক।
আজ আমি আপনাদের সাথে এই পুরো বিষয়টি স্ববিস্তারে বর্ণনা করবো।
এনআইডি কার্ডের জন্য আবেদন
অনলাইনে এনআইডি কার্ডের জন্য আবেদন করার বিস্তারিত বিষয়টি আমি ধাপে ধাপে উপস্থাপন করবো। যেন আপনাদের বুঝতে কোন সমস্যা না হয়। তো চলুন শুরু করা যাক। অনলাইনে এনআইডি কার্ডের জন্য আবেদন করতে বা নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করতে হলে আপনাকে প্রথমে services.nidw.gov.bd এই সাইটে যেতে হবে। তারপর এখানে এসে নির্ধারিত স্থানে আপনার নাম, জন্ম তারিখ, ক্যাপচা এবং মোবাইল নাম্বার দিয়ে একটি একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। তারপর ব্যক্তিগত তথ্য, ঠিকানা ও অন্যান্য তথ্য সংযুক্ত করে ভোটার নিবন্ধন ফরম পূরণ করে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস আপলোড করে সাবমিট করতে হবে।
আবেদন কপি ডাউনলোড-এনআইডি কার্ডের জন্য আবেদন
অনলাইনে ভোটার আবেদন ফরম সম্পন্ন হলে আবেদন কপি ডাউনলোড করুন। এখন ডাউনলোড করা আবেদন ফরমটি এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাথে নিয়ে স্থানীয় নির্বাচন কমিশন অফিসে যোগাযোগ করুন। আবেদনের জটিলতা কমাতে ডকুমেটস গুলো সত্যায়িত করে নিতে পারেন।
আঙ্গুলের ছাপ এবং চোখের রেটিনা স্কিন
পরবর্তীতে আপনার আবেদন এবং ডকুমেন্টসসমুহ যাচাই-বাছাই করে আঙ্গুলের ছাপ এবং চোখের রেটিনা স্কিন বায়োমেট্রিক ডাটা সংগ্রহ করার জন্য আপনাকে পুনরায় ডাকা হবে। সবকিছু সঠিক থাকলে দুই সপ্তাহের মধ্যে অনলাইন থেকে জাতীয় পরিচয় পত্র ডাউনলোড করতে পারবেন। জাতীয় পরিচয়পত্র টি অনুমোদন হলে মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে আপনাকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
এনআইডি কার্ডের জন্য আবেদন থেকে শুরু করে ডাউনলোড করার প্রক্রিয়াটি সারাংশ রূপে উপস্থাপন করলাম মাত্র। এখন চলুন সম্পূর্ণ আবেদন প্রক্রিয়াটি কিভাবে সম্পন্ন করতে হবে তা ধাপে ধাপে দেখা যাক । এনআইডি কার্ডের জন্য আবেদন করার আগে নতুন ভোটার নিবন্ধন আবেদনের শর্ত এবং নতুন ভোটার হতে কি কি ডকুমেন্টস লাগে তা সম্পর্কে জানা জরুরি।
নতুন ভোটার হওয়ার শর্ত-এনআইডি কার্ডের জন্য আবেদন
নতুন জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য আবেদন করার ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু শর্ত রয়েছে। শর্তগুলো হলো:
- বয়স ষোল (১৬) বছর বা তার বেশি হতে হবে।
- অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
- কখনো NID নিবন্ধন করেনি এমন হতে হবে।
অর্থাৎ নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করতে হলে অবশ্যই আপনাকে বাংলাদেশী নাগরিক হতে হবে। তার সাথে সাথে বয়স সর্বনিম্ন ১৬ বছর হতে হবে এবং পূর্ব থেকে কোন জাতীয় পরিচয়পত্র থাকা যাবেনা। ১৬ বছর শুনেই কেউ কেউ কফিউসড হতে পারেন। তবে ষোল (১৬) বছর বয়সেই NID Card এর জন্য অনলাইনে আবেদন করা যায় এবং জাতীয় পরিচয় পত্রের pdf পাবেন।
১৮ বছর হওয়ার আগে আপনি কোন সিম কার্ড নিবন্ধন করতে পারবেন না। নির্বাচনের সময় ভোট দিতে পারবেন না। অর্থাৎ ভোটার তালিকায় আপনার নাম আসবে না। যখনই আপনার ১৮ বছর পূর্ণ হবে তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। তখন উল্লিখিত সব কিছুই করতে পারবেন।
নতুন ভোটার হওয়ার নিয়ম-
যারা বাংলাদেশী নাগরিক তারা ২টি উপায়ে এনআইডি কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন।
- অনলাইনে ভোটার নিবন্ধন আবেদন
- সরাসরি নির্বাচন অফিসে গিয়ে
ভোটার হালনাগাদের সময়
কয়েক বছর আগেও নতুন ভোটার হওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাচন কমিশন অফিসে গিয়ে ভোটার নিবন্ধন ফরম পূরণ করে জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য আবেদন করতে হতো। আবার পাচঁ (৫) বছর পরপর সরকারি উদ্যোগে এলাকা ভিত্তিক নতুন ভোটার নিবন্ধন ক্যাম্পেইন চলে। আজকে আমাদের আলোচনার মূল বিষয় হচ্ছে নতুন ভোটার হওয়ার জন্য অনলাইনে আবেদন করার পদ্ধতি বা এনআইডি কার্ডের জন্য আবেদন সম্পর্কে জানা। যাতে করে কোনো রকমের ঝামেলা ছাড়াই ঘরে বসে নিজে নিজেই অনলাইনে এনআইডি কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন।
অনলাইনে নতুন ভোটার হওয়ার আবেদন
অনলাইনে ভোটার আবেদনের প্রধম ধাপে services.nidw.gov.bd সাইটে অ্যাকাউন্ট নিবন্ধন করতে হবে। অনলাইনে এনআইডি কার্ডের জন্য আবেদন করতে একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন পেজে চলে যান। আবেদন ফরমে আপনার নাম, জন্ম তারিখ ও ক্যাপচা পূরণ করে “বহাল” বাটনে ক্লিক করুন।
অ্যাকাউন্ট নিবন্ধন-এনআইডি কার্ডের জন্য আবেদন
অনলাইনে ভোটার আবেদনের প্রধম ধাপে services.nidw.gov.bd সাইটে অ্যাকাউন্ট নিবন্ধন করতে হবে। সরাসরি আবেদন পেজে চলে যেতে একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন পেজে চলে যান। আবেদন ফরমে আপনার নাম, জন্মতারিখ ও ক্যাপচা পূরণ করে “বহাল” বাটনে ক্লিক করুন। নতুন অ্যাকাউন্ট নিবন্ধন।
আপনার অ্যাকাউন্টের জন্য একটি সচল নাম্বার দিয়ে তা ভেরিফাই করতে বলা হবে। পরবর্তী সময়ে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র বা ভোটার আইডি কার্ডের বিভিন্ন আপডেট মোবাইল নাম্বারে এসএমএস এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয় হবে। পরবর্তী সময়ে আপনার NID Account লগইন করার সময় এই একই নাম্বারে ওটিপি পাঠাবে।
মোবাইল নাম্বার ভেরিফিকেশন
এখন মোবাইল নাম্বার ভেরিফিকেশন এর ধাপে আপনাকে বাংলাদেশের একটি মোবাইল নাম্বার ইনপুট করতে বলা হবে। নাম্বারটি প্রবেশ করিয়ে ”বার্তা পাঠান” বাটনে ক্লিক করলে আপনার কাঙ্খিত মোবাইল নাম্বারে ৬ সংখ্যার OTP চলে যাবে।
প্রথমবার আপনার ফোনে OTP না আসলে ”পুনরায় পাঠান” বাটনে ক্লিক করে আরেকটি OTP কোডের জন্য রিকোয়েস্ট পাঠাতে পারেন। নেটওয়ার্ক সমস্যা কিংবা সার্ভারের ত্রুটির বা ডাউন এর কারণে মাঝেমধ্যে মেসেজ আসতে দেরি হতে পারে। সুতরাং একবার এসএমএস পাঠিয়ে কিছুক্ষন অপেক্ষা করা যেতে পারে। ছয় সংখ্যার ভেরিফিকেশন কোড চলে আসলে তা OTP ঘরে বসিয়ে বাটনে ক্লিক করুন। সঠিক ওটিপি দিয়ে সাবমিট করার পর আপনাকে নতুন একটি পেজে নিয়ে যাবে।
ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড বাছাই করুন
পরবর্তী সময়ে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করার জন্য একটি Username এবং Password সেট করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে ইউজারনেম টি যেন ইউনিক হয়। ভবিষ্যতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করে আইডি কার্ড ডাউনলোড সংশোধন করতে এই ইউজার নেম এবং পাসওয়ার্ডটিই ব্যবহার করতে হবে।
ইউজার নেম এবং পাসওয়ার্ডটি
ইউজার নেমটি অবশ্যই কমপক্ষে ৮ সংখ্যার হতে হবে। আপনার ইউজার নেমকে ইউনিক করার জন্য ইংরেজি অক্ষরের (ছোট হাতের ও বড় হাতের) পাশাপাশি সংখ্যা এবং বিভিন্ন চিহ্ন ব্যবহার করতে পারেন। যদি Username Already Exists দেখায় তাহলে ইউজারনেমটি পরিবর্তন করে ইউনিক করার চেষ্টা করুন।
Note: আপনার এই ইউজার নেম এবং পাসওয়ার্ডটি নিরাপদ কোথাও লিপিবদ্ধ করে রাখুন। কারন পরবর্তীতে এই ইউজার নেম এবং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেই আইডি কার্ড ডাউনলোড করতে হবে।
ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে প্রোফাইল সম্পন্ন করুন
নতুনভাবে ভোটার হওয়ার জন্য অ্যাকাউন্ট নিবন্ধন হয়ে গেলে আপনার User name এবং Password দিয়ে আপনার একাউন্টে লগইন করুন। আর ইতোমধ্যে আপনি লগইন করে থাকলে নিচের ছবির মতো একটি ড্যাশবোর্ড দেখতে পাবেন।
NID Server এ আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সাবমিট করতে প্রথমে এডিট বাটনে ক্লিক করতে হবে। যদিও প্রাথমিক অবস্থায় সংশ্লিষ্ট ফিল্ড গুলোতে লিখার জন্য কোন অপশন থাকবে না। যখন এডিটে ক্লিক করবেন তখন সব ফিল্ড ইনপুট নেয়ার জন্য রেডি হবে। ব্যক্তিগত তথ্য পূরণের ধাপে আপনার নাম (বাংলা), ইংরেজি নাম (স্বয়ংক্রিয় ভাবে হয়ে থাকবে), লিঙ্গ, রক্তের গ্রুপ জন্ম নিবন্ধন নম্বর, জন্মতারিখ (স্বয়ংক্রিয় ভাবে হয়ে থাকবে) এবং জন্মস্থা বাছাই করতে হবে।
অ্যাকাউন্ট তৈরি করার সময় নিজের নাম ইংরেজিতে ঠিক যেভাবে দেওয়া হয়েছে এবং জন্ম তারিখ হিসেবে যা দেয়া হয়েছে তা অটোমেটিক চলে আসবে। এটি আপনি চাইলেও আর কোনভাবেই পরিবর্তন করতে পারবেন না। যদি অ্যাকাউন্ট তৈরি করার সময় নিজের ইংরেজি নামে কিংবা জন্ম তারিখে কোন ধরনের ভুল থাকে তাহলে একাউন্টটি বাতিল করে নতুন মোবাইল নাম্বার সংযুক্ত করে সঠিক তথ্য দিয়ে অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে।
পিতার তথ্য-এনআইডি কার্ডের জন্য আবেদন
নিজের সকল তথ্য পুরণ করার পর পিতার তথ্য দিতে বলা হবে। এরপর পিতার নাম (বাংলায় ও ইংরেজি) এবং পিতার এনআইডি কার্ডের নাম্বার দিতে হবে। পিতার ভোটার আইডি কার্ডের নাম্বার চাইলে দিতে পারেন আবার নাও দিতে পারেন কারণ এটি সম্পূর্ণ অপশনাল।
- পিতের নাম বাংলায় (আবশ্যিক)
- পিতার নাম ইংরেজি (আবশ্যিক)
- পিতার NID Card নাম্বার (অপশনাল)
- পিতার ভোটার নাম্বার (অপশনাল)
- মৃত্যুর সন (মৃত হলে)
পিতা যদি মৃত হয় সেক্ষেত্রে পিতার তথ্যের সাথে মৃত লিখায় টিক চিহ্ন দিয়ে মৃত্যু সনও লিখে দিতে হবে। যে সব তথ্যের সাথে লাল (*) চিহ্ন দেয়া থাকবে সে সকল ঘর অবশ্যই পূরণ করতে হবে।
মাতার তথ্য-এনআইডি কার্ডের জন্য আবেদন
একইভাবে মায়ের তথ্যও পূরণ করতে হবে। পিতার মাতার তথ্য ইনপুট করার ক্ষেত্রে বাংলা ও ইংরেজি নাম দেয়া আবশ্যিক। এনআইডি নাম্বার ও ভোটার নাম্বার দেয়াটা অপশনাল। তবে NID Card এর নাম্বার দিয়া রাখা ভালো। আর মৃত হলে অবশ্যই মৃত্যুর সাল লিখতে হবে।
মায়ের তথ্য পুরনে যা যা দিতে হবে
- মাতার নাম বাংলায় (আবশ্যিক)
- মাতার নাম ইংরেজি (আবশ্যিক)
- মাতার NID Card নাম্বার (অপশনাল)
- মতার ভোটার নাম্বার (অপশনাল)
- মৃত্যুর সন (মৃত হলে)
এভাবে পিতা মাতার প্রয়োজনীয় সকল তথ্য দিয়ে ফরম পূরণ করতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র আবেদনের সময় কোন রকমের ভুল করা যাবে না। আইডি কার্ডে ভুল হলে তা সংশোধন করা ঝামেলা ও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।কারন এর জন্য আবার ভোটার আইডি সংশোধন আবেদন করতে হয়।
আভিভাবকের তথ্য
আপনার আভিভাবকের তথ্য প্রদান করুন। সাধারনত অভিভাবক হিসেবে পিতা কিংবা মাতার তথ্য দেয়া উচিৎ। আপনার আভিভাবন অন্য কেউ হলে তাও দিতে পারবেন। আপনি আপনার আভিভাবক হিসেবে যার তথ্য দিতে চান তাহার নাম ও জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার লিখে দিন।
এর পরেই চলে আসবে বড় ভাই/বোনের তথ্য দেয়ার অপশন। এটি একটি অপশনাল ফিল্ড। চাইলে তথ্য দিতে পারেন আবার না দিলেও সমস্যা নেই। এটা খালি রাখতে পারেন।
বৈবাহিক অবস্থা
আপনি যদি অবিবাহিত হেন তাহলে ড্রপ ডাউন মেনু থেকে আবিবাহিত অপশনটি সিলেক্ট করে দিন। অবিবাহিত হলে আর কোন তথ্য সংযুক্ত করতে হবে না।
আর আপনি যদি বিবাহিত হয়ে থাকেন তাহলে আপনার স্ত্রী / স্বামীর নাম উল্লেখ করে দিতে হবে। আপনার একের অধিক স্ত্রী থাকলেও তাদের তথ্য দেয়ার আপশন রয়েছে। আর স্ত্রী যদি মৃত হয় হলে মৃত্যুর সন লিখে দিতে হবে।
তথ্যগুলো লিপিবদ্ধ করা হয়ে গেলে পুনরায় তথ্যগুলি যাচাই করে দেখুন কোথাও কোন ভুল হয়েছে কিনা। সব ঠিক ঠাক থাকলে ”পরবর্তী বাটন” বা নেক্সট বাটনে ক্লিক করুন।
অন্যান্য তথ্য
অন্যান্য তথ্যের ঘরে অবশ্যই পূরণ করতে হবে এমন ফিল্ড হচ্ছে শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা এবং ধর্ম। আবেদনকারি কোন প্রকার শারীরিক প্রদিবন্ধি হলে তা অসমর্থতার ঘরে বাছাই করে দিতে হবে।
- শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা, ধর্ম নির্বাচন
- শিক্ষাগত যোগ্যতা (আবশ্যিক)
- পেশা (আবশ্যিক)
- ধর্ম (আবশ্যিক)
- অসমর্থতা (প্রযোজ্য হলে)
- সনাক্তকরণ চিহ্ন (যদি থাকে)
- টিন নাম্বার (যদি থাকে)
- ড্রাইভিং লাইসেন্স (যদি থাকে)
- পাসপোর্ট (যদি থাকে)
আপনি যে পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন অর্থাত আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কিত তথ্যটি সংশ্লিষ্ট ঘবে সঠিকভাবে লিখতে হবে। আপনি যদি শারীরিক প্রতিবন্ধি হোন তা হলে তাও উল্লেখ করে দিতে হবে। আপনার যদি কোন জন্মদাগ থাকে তার বিবরনও উল্লেখ করতে হবে। এভাবে সকল প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে এই ধাপটি সম্পন্ন করতে হবে।
ঠিকানা-এনআইডি কার্ডের জন্য আবেদন
আপনাকে আপনার বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানার তথ্য অবশ্যই দিতে হবে। এই ধাপটি একটু গুরুত্ব সহকারে পূরণ করবেন। কারন এখানে বেশিরভাগ মানুষই ভুল করে বসে। আপনাকে প্রথমেই অবস্থানরত দেশ বাছাই করতে হবে। আমারা যেহেতু বাংলাদেশ থেকে আবেদন করছি সুতরাং আমাদেরকে অবশ্যেই অবস্থানরত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ই বাছাই করতে হবে।
ভোটার এর ঠিকানা বাছাই করণ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনার বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা যদি ভিন্ন হয় সেক্ষেত্রে যে ঠিকানায় ভোটার হতে চাচ্ছেন সেটি ভোটার ঠিকানা হিসেবে টিক দিহ্ন দিয়ে সিলেক্ট করে দিন। ভোটার এর ঠিকানা হিসেবে আপনি যেটিকে বাছাই করে দিবেন সেই ঠিকানায় আপনার ভোটার তালিকায় নাম আসবে। নির্বাচনের সময় আপনাকে ঐ ঠিকানায় গিয়ে ভোট দিতে পারবেন। অন্য কোথাও দিলে হবেনা।
বর্তমান ঠিকানা-এনআইডি কার্ডের জন্য আবেদন
বর্তমান ঠিকানার জায়গায় বর্তমান ঠিকানা বাছাই করুন। তবে বর্তমান ঠিকানার স্থলে আপনি চাইলে স্থায়ী ঠিকানাও দিতে পারেন। বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা একই হতে পারে। তাতে কোন সমস্যা নেই। আর যদি বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা একই না হয় তা হলে আপনার ঠিকানা অনুসারে বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন এসব সঠিকভাবে সিলেক্ট করে দিন।
ঠিকানা বাছাই করা খুবই সহজ একটি কাজ। বিভাগের ঘরে ক্লিক করলে বাংলাদেশের সবগুলো বিভাগ দেখতে পাবেন। তারপর আপনি আপনার ঠিকানা অনুসারে বিভাগ সিলেক্ট করে দিবেন। এরপর জেলাতে ক্লিক করলে আপনার বিভেগের সকল জেলাসমূহ দেখতে পাবেন। তার মধ্য থেকে আপনার জেলাটি বাছাই করে দিন। এভাবে পর্যায়ক্রমে ড্রপ ডাউন মেনু থেকে আপনার ঠিকানা বাছাই করুন।
স্থায়ী ঠিকানা-এনআইডি কার্ডের জন্য আবেদন
ঠিক পূর্বের মতই স্থায়ী ঠিকানার সকল তথ্য দিয়ে এটিও পূরণ করুন। ঠিকানা বাছাই করার জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে পারেন।
- বিভাগ
- জেলা
- উপজেলা
- আর.এম.ও
- ইউনিয়ন
- মৌজা
- গ্রাম/রাস্তা
- বাসা/হোল্ডিং
- পোস্ট অফিস
- পোস্ট কোড
- ভোটার এরিয়া
আপনার স্থায়ী ঠিকানা আনুযায়ী ঐ একই তথ্য দিয়ে এই ফরমটি পুরণ করুন। সকল তথ্য পূরণ করার পর খুব সতর্কতার সহিত ভোটার তথ্য যাচাই করুন। সব সঠিক থাকলে উপরের ডান দিকের ”পরবর্তী” বাটনে চাপুন। অনলাইনে নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করার সময় কোন ডকুমেন্টস আপলোড করতে হয়না। যে সকল কাগজ জমা দিতে হবে তা নির্বাচন কমিশন আফিসে গিয়ে জমা দিতে হবে। তাই এই ধাপটিতে কোন কিছু না করেই পরবর্তী ধাপে চলে যাবো।
আবেদন সাবমিট-এনআইডি কার্ডের জন্য আবেদন
আবেদনটি সাবমিট করার জন্য “সাবমিট” বাটনে ক্লিক করতে হবে। সম্পূর্ণ আবেদনটি তথ্য দিয়ে পুরন করে এই ধাপে ফাইনাল সাবমিট করতে হবে।
আপনার যদি হঠাৎ মনে হয় যে, মনের ভূলে কোথাও কোন ভুল তথ্য দিয়ে ফেলেছেন তাহলে “পেছনে যান” নামক বাটনে ক্লিক করে পূর্ববর্তী ধাপে যেতে পারবেন। অর্থাৎ আগের অবস্থানে ফিরে যেতে পারবেন। তারপর পুনরায় সঠিক তথ্য দিয়ে আবেদনটি চূড়ান্তভাবে সাবমিট করুন।
আবেদন কপি ডাউনলোড
অনলাইনে নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আপনার আবেদন পত্রটি সাবমিট হয়ে গেলে আপনার সামনে আবেদন সামারি বা ভোটার আবেদন কপি ডাউনলোডের জন্য একটি অপশন বা বাটন দেখতে পাবেন। সেই ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে আপনার আবেদনটি ডাউনলোড করুন।
এই আবেদন কপি প্রিন্ট করে সাথে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস নিয়ে আপনার স্থানীয় নির্বাচন কমিশন আফিসে জমা দিতে হবে। উপজেলা নির্বাচন আফিসে আপনি এই ভোটার আবেদন কপি ও নতুন আইডি কার্ড করতে যে সমস্ত কাগজ প্রয়োজন বলা হয়েছে তা জমা দিন।
আবেদন পত্রটি জমা দেয়ার পর সেটি উপজেলা বা জেলা নির্বাচন কমিশন অফিস যাচাই বাছাই করবে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আপনাকে নির্ধারিত সময় পর বায়োমেট্রিক প্রদানের জন্য ডাকা হবে। আবেদন পত্রটি যাচাই-বাছাই শেষে আপনার ছবি ও আঙ্গুলের ছাপ (Biometric Information) নেয়ার জন্য ডাকা হবে। ছবি তোলার সর্বনিম্ন ১০ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ দিন পরে আপনার আবেদনটি অনুমোদিত হলেই আপনি অনলাইন হতে জাতীয় পরিচয়পত্রটি ডাউনলোড করতে পারবেন।
নির্বাচন অফিসে নতুন আইডি কার্ডের আবেদন
অনলাইনে নতুন জাতীয় পরিচয় পত্রের আবেদন প্রক্রিয়াটি কঠিন মনে হলে সরাসরি নির্বাচন কমিশন অফিসে নতুন ভোটার আইডি কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন।
ভোটার নিবন্ধন ফরম সংগ্রহ
আপনি যে ঠিকানায় ভোটার হতে চান সে এলাকার উপজেলে নির্বাচন কমিশন অফিসে চলে যান। দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা থেকে নতুন NID কার্ড আবেদন ফরম সংগ্রহ করুন। নতুন ভোটার নিবন্ধন ফরম কে (ফরম-২) নামে ডাকা হয়। ভোটার নিবন্দন ফরমটি দেখতে নিচের ছবির মতো হবে।
প্রতিটি ফরমে একটি উনিক ফরম নাম্বার থাকে। এই এই ফরম / স্লিপ নাম্বার ব্যাবহার করে পরবর্তীতে আইডি কার্ড বের করতে হয়। একটি ফরম ফটো কপি করে ব্যাবহার করার সুযোগ নেই। ফটো কপি করলে ফরম দুটি হবে থিকই কিন্তু ফরম নাম্বার একই থেকে যাবে। আর একটি সিরিয়াল নাম্বারে একটি মাত্র ফরম সাবমিট করা যাবে
ভোটার ফরম পূরণ করুন
উপজেলা নির্বাচন কমিশন আফিস থেকে নতুন আইডি কার্ড আবেদন ফরম সংগ্রহের পর এটি সঠিক তথ্য দিয়ে ফিলাপ করতে হবে। আমি কিছুক্ষণ আগে বলেছিলাম ভোটার নিবন্ধন ফরম ফটোকপি করে ব্যাবহার করা যাবে না। এখন বলছি নতুন ভোটার ফরম হাতে পেয়ে একটি কপি করে নিবেন। কারণ একটা ফরম শুধু একবারই ব্যাবহার করা যাবে।
তাই কোন কিছু ভুল পূরণ করে ফেললে তা সংশোধন করার সুযোগ নেই। ফরমে কাটাছেড়া করা উচিৎ নয়। যদি আপনার কাছে একই ফরমের ২টি কপি থাকে তা হলে একটি কোন কারণে ভুল লিপিবদ্ধ হয়ে গেলে সেটি বাতিল করে অন্যটি ব্যাবহার করতে পারবেন। এটি আমার বেক্তিগত আভিজ্ঞতা থেকে বলা।
আবেদন ফরম ও কাগজপত্র জমা দেয়া
ভোটার নিবন্ধন ফরম (ফরম-২) সঠিক তথ্য দিয়ে পূরণ করা হয়ে গেলে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করে আপনার উপজেলা নির্বাচন আফিসে জমা দিন। আপনি যদি না জানেন নতুন জাতীয় পরিচয় পত্র আবেদনের সাথে কি কি ডকুমেন্ট জমা দিতে হয়। তা হলে দেখে নিন নতুন আইডি কার্ড করতে কি কি লাগে
ছবি তোলা ও বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান
আপনার আবেদন পত্রটি উপজেলা অফিসে জমা দেয়া হলে তা দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা সকল কাগজপত্র যাচাই বাছাই করবে।যদি সবকিছু ঠিক থাকে তাহলে আপনার ছবি তোলার জন্য ডাকা হবে এবং বর্তমানে তোলা কোন ছবি, ফিঙ্গার প্রিন্ট ও চোখের রেটিনা প্রদানের জন্য মোবাইলে SMS করে জানিয়ে দেয়া হয়।
ভোটার আইডি কার্ডের ছবি তোলা ও বায়োমেট্রিক তথ্য দেয়ার জন্য উপজেলা নির্বাচন অফিসে যেতে হবে। সেখানে আপনার ছবি, ১০ আঙ্গুলের ছাপ, চোখের রেটিনা স্ক্যান করবে। এসব বায়োমেট্রিক তথ্য দেয়ার পর আপনার আবেদন আনুমোদনের জন্য NID Server এ চলে যাবে।
জাতীয় পরিচয় পত্র ডাউনলোড
নতুন জাতীয় পরিচয় পত্রের আবেদন অনাইন কিংবা অফলাইন যে ভাবেই করা করা হোক, ছবি তোলতে এবং বায়োমেট্রিক ডাটা দিতে নির্বাচন আফিসে যেতে হয়। আবেদনপত্রে সব কিছু সঠিক থাকলে এবংআবেদনের সাথে জমা দেয়া ডকুমেন্টসমূহ যথাযথ ও সঠিক হলে ছবি এবং আঙ্গুলের ছাপ দেয়ার সর্বনিম্ন ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ২১ দিনের মধ্যে আবেদন পত্রটি আনুমোদন পেয়ে যাবেন।
ভোটার নিবন্ধন আবেদন আনুমোদন হয়ে গেলে আপনার মোবাইল নাম্বারে একটি মেসেজ আসবে। যেখানে আপনার আবেদন আনুমোদন হয়েছে এবং সেটি অনলাইন মাধ্যম অথবা নির্বাচন আফিস হতে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র ডাউনলোড করতে বলা হবে।
আইডি কার্ডের আবেদন আনুমোদন হতে কত দিন লাগে?
আইডি কার্ডের জন্য ছবি, হাতের ছাপ ও চোখের রেটিনা এসব তথ্য দেয়ার পর ভোটার আইডি আবেদন সম্পূর্ণ ভাবে সাবমিট করা হয়। আবেদন সাবমিট হবার পর থেকে ২ থেকে ৩ সপ্তাহ সময়ের মধ্যেই আবেদনটি আনুমোদন পেয়ে যায়। তবে নির্বাচন চলাকালীন সময়ে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে।
কোন শিক্ষাগত সনদ না থাকলে কি জমা দিবে?
আইডি কার্ডের আবেদনের জন্য যে কোন বোর্ড পরীক্ষার সনদ প্রয়োজন হয়। তবে কেউ যদি পড়াশোনা একেবারেই না করে তাহলে পাসপোর্ট / ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে আবেদন করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কিছু কাগজ চাইতে পারে যেমন অঙ্গীকারনামা বা উত্তরাধিকার সনদ।
ভোটার এলাকা কোনটি দিবো?
আপনি যে এলাকায় ভোট দিতে চান সে এলাকা ভোটার এলাকা হিসেবে সিলেক্ট করে দিবেন। আবেদনের সময় ভোটার এরিয়া যা বাছাই করবেন সে এলাকার ভোটার তালিকায় আপনার নাম আসবে। এখানেই আপনাকে ভোট দিতে হবে।
জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য আবেদন করে ছবি ও হাতের ছাপ দিয়ে এসেছেন কিন্তু ভোটার আইডি কার্ড এখনো হাতে পাননি। এখন অনলাইন থেকেই জাতীয় পরিচয় পত্র ডাউনলোড করা যায় এবং আপনি এটি সব কাজে ব্যবহার করতে পারবেন।
শেষ কথা:
অনলাইনে জাতীয় পরিচয় পত্র বা এনআইডি কার্ডের জন্য আবেদন করা এখন আর জটিল কোন বিষয় নয়। আপনি চাইলে নিজে নিজেই ঘরে বসেই এই কাজটি করে ফেলতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আমার এই আর্টিকেলটি আশা করি আপনাকে সাহায্য করতে পারবে ইনশাল্লাহ।
Leave a Comment