আজ আপনাদের সাথে অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। প্রথমেই বলে রাখি ডিজিটালাইজেশনের বদৌলতে এখন যে কেউ চাইলেই অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম অনুসরণ করে জমির খাজনা দিতে পারবেন। বাংলাদেশ সরকার ভূমি সেবার মান আরো বৃদ্ধি ও আরো বেশি জনবান্ধব করার লক্ষে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান,জমির খাজনা চেক,মৌজা ম্যাপ অনুসন্ধান ডাউনলোড,ই-নামজারি,নামজারী খতিয়ান,ডিজিটাল ল্যান্ড রেকর্ড, সি.এস, এস.এ, আর এস খতিয়ান, মহানগর খতিয়ান, রেন্ট সার্টিফিকেট মামলা, অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থাপনা সহ নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
জমির খাজনা বলতে কি বোঝায়?
আপনি একজন বাংলাদেশ এর নাগরিক। আর বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে যখন আপনি এই দেশের জমির মালিকানা পাবেন এবং নির্দিষ্ট পরিমান জমি ভোগ দখল করবেন তখন আপনাকে সেই জমি ভোগ করার বিনিময়ে সরকারকে প্রতি বছর একটি নিদৃষ্ট পরিমাণ টাকা (যা খাজনা নামে পরিচিত) দিতে হবে বা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে হবে।
আরো পড়ুন- অনলাইনে জমির খাজনা চেক করার নিয়ম।
আর আপনি আপনার জমির উপর ভিত্তি করে যে পরিমান ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা প্রদান করবেন, মূলত সেই কর কে বলা হবে খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন কর। আর এই খাজনার প্রচলন কিন্তু এখন থেকে নয়। বরং যখন জমিদার এর সময়কাল ছিলো তখন থেকেই খাজনা আদায় করার প্রচলন ছিলো।
১৯৭৬ সালে ‘ভূমি উন্নয়ন কর অধ্যাদেশ’ জারির মাধ্যমে খাজনা শব্দটির পরিবর্তে ‘ভূমি উন্নয়ন কর’ আনুষ্ঠানিক পরিভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। বাংলা সনের ভিত্তিতে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করা হয়।
একটা সময় ছিল যখন ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান অনেক জটিল একটা কাজ ছিল। যা ভূমি অফিসে গিয়ে সরাসরি প্রদান করতে হতো। এখন অবশ্য সময় বদলেছে। এখন আর আপনাকে সরাসরি ভূমি অফিসে গিয়ে খাজনা দিতে হবে না। এখন আপনি চাইলে ঘরে বসেই জমির খাজনা দিতে পারবেন। তো কথা না বাড়িয়ে চলুন জেনে নেয়া যাক অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।
বাংলাদেশ ২০২২ সাল পর্যন্ত স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ/ উপজেলা ভূমি অফিসে উপস্থিত হয়ে জমির খাজনা পরিশোধ করতে হতো। কখনো কখনো ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তার মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে তথ্য হালনাগাদ করেভূমি উন্নয়ন কর আদায় করা হতো। তবে বর্তমানে বাংলাদেশ ভূমি উন্নয়ন মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেন ডিজিটাল বাংলাদেশ শুধুমাত্র অনলাইনে জমির খাজনা পরিশোধ করা যাবে।
অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম
আপনার জমি থাকলে অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কিত ভূমি মন্ত্রণালয়ের দুইটি উপায় রয়েছে। সেগুলো হলো
- ভূমি উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে।
- ‘ভূমি উন্নয়ন কর’ মোবাইল এপসের মাধ্যমে।
অনলাইনে জমির খাজনা দিতে কি কি ডকুমেন্টস লাগে
আগে জমির খাজনা পরিশোধ করার জন্য ইউনিয়ন/উপজেলা ভূমি অফিসে অনেকগুলো কাগজপত্র নিয়ে সরাসরি উপস্থিত হতে হতো। বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধায় অল্প কিছু কাগজ/ডকুমেন্টস সাথে নিয়ে নিজের মোবাইল অথবা কম্পিউটার দিয়ে ঘরে বসেই অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়া যায়। সেগুলো হলো:
- সর্বশেষ রেকর্ড/খারিজ খতিয়ানের কপি
- পূর্ববর্তী দাখিলার কপি
- জাতীয় পরিচয়পত্র
- একটি স্মার্টফোন, মোবাইল নাম্বার ও ইন্টারনেট কানেকশন।
- জমির অবস্থান অনুযায়ী-বিভাগ,জেলা, উপজেলা ও মৌজার তথ্য।
আরো জানুন- অনলাইনে খতিয়ান অনুসন্ধ্যান।
অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম- অনলাইনে খাজনা দেওয়ার নিয়ম ফলো করে খাজনা দিতে হলে প্রথমে যে কাজটি করতে হবে তা হলো ভূমি মন্ত্রনালয়ের ভূমি উন্নয়ন কর ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে নাগরিক কর্নার অপশন থেকে রেজিস্ট্রেশন করুন। অতঃপর পেমেন্ট করুন- অপশনে প্রবেশ করে জমির ঠিকানা দিয়ে তথ্য বের করে নিন। তারপর এনআইডি যাচাই করলে জমির খাজনা কত টাকা খাজনা পরিশোধ করতে হবে তা দেখা যাবে। এবার,খতিয়ানের বিস্তারিত পেইজে‘অনলাইন পেমেন্ট’অপশনে ক্লিক করে অনলাইন পেমেন্টের মাধ্যম নির্বাচন করে পেমেন্ট করতে হবে। নিম্মে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
ধাপ ১- ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন
জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে প্রথমে আপনাকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের https://ldtax.gov.bd এই লিংকে প্রবেশ করুন। উক্ত ঠিকানায় প্রবেশের পর নিচের ইনটারফেসটি চলে আসবে।
অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম
এখান থেকে জাতীয় মোবাইল নাম্বার,পরিচয়পত্রের তথ্য,জন্মতারিখ ও পাসওয়ার্ড দিয়ে রেজিস্টেশন করুন।তারপর পুনরায় তথ্য দিয়ে লগইন করুন।
ধাপ ২- নাগরিক নিবন্ধন করুন
উপরের ইনটারফেসটির নাগরিক কর্নার অপশন বাটনে ক্লিক করলেই নিচের ফরমটি চলে আসবে।
অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম
ধাপ ৩- প্রোফাইল সেটিং করুন
জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম এর ২য় ধাপে নাগরিক নিবন্ধন এর মাধ্যমে রেজিস্টেশন করার পর পুনরায় লগইন করার পর নিচের ফরমটি আপনার সাওমনে চলে আসবে। এখানে অনলাইনে কর পরিশোধের জন্য প্রথমেই আপনার প্রোফাইল ১০০% নিশ্চিত করতে হবে।
অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম
এখানে প্রোফাইল বাটনে ক্লিক করে সম্পাদন বাটনে ক্লিক করুন। এখানে আপনার ইমেইল ও বর্তমান ঠিকানার অপশনটি অসম্পূর্ণ থাকবে। ধাপে ধাপে তথ্য দিয়ে আপনার প্রোফাইলটি ১০০% সম্পন্ন করতে হবে।
ধাপ-৪ জমির নতুন খতিয়ান যুক্ত করুন
অনলাইনে জমির খাজনা পরিশোধ করতে হলে খাজনা পরিশোধের পূর্বে আপনার জমির নতুন খতিয়ান যুক্ত করতে হবে। আর এটি করতে হলে আপনাকে আপনার একাউন্টের ড্যাশবোর্ড থেকে খতিয়ান অপশনে ক্লিক করতে হবে। এবার আপনার সামনে নিচের ফরমটি চলে আসবে।
অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম
উপরের ফরমটি যথাযথভাবে পূরণ করে সংযুক্তি আপশনে পূর্ব থেকে কম্পিউটার/মোবাইলে স্ক্যান করে রাখা খতিয়ান/দাখিলার কপি আপলোড করে সংযুক্তি করতে হবে। বাকিি অপশনলো ঠিকঠাক পূরন করে সবশেষে সংরক্ষণ বাটনে ক্লিক করে সংরক্ষণ করুন।
উপরের পেজটিতে সকল তথ্য প্রদান করার পর খতিয়ান আপলোড হতে প্রায় ২৪ ঘন্টা – ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তারপর সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস কর্তৃক প্রদানকৃত তথ্যের উপর ভিত্তি করে হোল্ডিং এন্ট্রি সম্পন্ন করবে।
ধাপ-৫ হোল্ডিং ও ভূমি উন্নয়ন করের তথ্য পূরণ করুন
খতিয়ান আপলোড সম্পন্ন হলে পুনরায় ভূমি উন্নয়ন কর ওয়েবসাইটে নাগরিক লগইন করে ড্যাশবোর্ডে চলে যান। তারপর ড্যাশবোর্ড থেকে হোল্ডিং বাটনে ক্লিক করুন। আপনার খতিয়ান টি সঠিকভাবে আপলোড হওয়ার পর হোল্ডিং নম্বর অনুযায়ী জমির পরিমাণ ও অন্যান্য তথ্য সম্বলিত নিচের ফরমটি দেখতে পাবেন।
অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম
খাজনা পরিশোধ করতে উপরের পেইজের নিচে অনলাইন পেমেন্ট অপশনে ক্লিক করুন।
ধাপ-৬ পেমেন্ট অপশন সিলেক্ট করুন
উপরের পেইজের নিচে অনলাইন পেমেন্ট অপশনে ক্লিক করার পর আপনাকে দেখানো হবে যে, আপনার মোট কত টাকা খাজনা পরিশোধ করতে হবে। অতঃপর আপনার সামনে প্রদর্শিত হবে ছয়টি অপশন(বিকাশ, উপায়,একপে,নগদ,রকেট,নেক্সাস)। এখান থেকে যেকোন একটি অপশন সিলেক্ট করে ই-পেমেন্ট অপশনে গিয়ে ক্লিক করুন।
ই-পেমেন্ট করুন
ই-পেমেন্ট অপশনে ক্লিক করার পর আপনি যে অপশনটি সিলেক্ট করেছিলেন তার টাকা সম্বলিত একটি পে-স্লিপটি আপনার সামনে ভেসে আসবে। অতঃপর উক্ত পে-স্লিপে আসা আপনার সংস্লিষ্ট হিসাব/মোবাইল নং বসিয়ে কনফর্ম বাটনে ক্লিক করে পেমেন্ট সম্পন্ন করুন।
খাজনা রশিদ ডাউনলোড করুন
জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম এর সবশেষ কাজ হলো যথযথভাবে জমির খাজনা পরিশোধ করার পর ভূমি উন্নয়ন কর ওয়েবসাইট থেকে একটি খাজনা রশিদ বা দাখিলা প্রদান করা হয়। এই রশিদটি পেতে আপনি ভূমি উন্নয়ন কর ওয়েবসাইটে আপনার অ্যাকাউন্টের ড্যাশবোর্ডে প্রবেশ করে মেন্যু বার থেকে দাখিলা অপশনে ক্লিক করুন। মেন্যু বার থেকে দাখিলা অপশনে ক্লিক করলেই নিচে খাজনা রশিদ টির পিডিএফ কপি মত দেখতে পাবেন।
অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম
মূলত উক্ত রশিদ টিই জমির টেক্স পরিশোধের কপি। অতঃপর রশিদটি ডাউনলোড করে সেভ বা প্রিন্ট করতে পারেন। এভাবে ঘরে বসেই আপনি পারবেন আপনার জমির খাজনা পরিশোধ করতে।
শেষ কথাঃ
এতো সময় আমরা আলোচনা করলাম অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম। আসা করি উপরের লেখাটি মনযোগ সহকরে পড়লে আপনি ঘরে বসেই আপনার জমির খাজনা পরিশোধ করতে পারবেন।
Leave a Comment