অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চেয়ে অনেকেই অনলাইনে খোজাখুজি করে কিন্তু তেমন ভালো কোন তথ্য প্রকৃতপক্ষে অনলাইনে নেই। আজ আমি আপনাদের সাথে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
আরো পড়ুন- ই নামজারি
দেশের সার্বভৌমত্বের ভিতরে থাকা সকল জমির খাজনা পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক এবং এটি একটি নাগরিক দায়িত্বও বটে। তবে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম তথা অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানেনা অনেকেই। আজকের আলোচনায় জেনে নিন, জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম তথা অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত।
অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম
একজন সুনাগরিকের উচিত ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করা। বাংলাদেশে ভূমি উন্নয়ন মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেন, এখন থেকে শুধুমাত্র অনলাইনে জমির খাজনা পরিশোধ করা যাবে। সুতরাং অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানা কতটা গুরুত্বপূর্ণ আশা করি সেটা বুঝে গেছেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ/ উপজেলা ভূমি অফিসে উপস্থিত হয়ে সরাসরি জমির খাজনা দেওয়ার কোন উপায় বর্তমানে চালু নেই। তাই, আপনাদের সুবিধার্থে অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কেই আজকের বিস্তারিত আলোচনা।
ভূমি উন্নয়ন কর বা জমির খাজনা কি?
ভূমি উন্নয়ন কর বা জমির খাজনা হলো ভূমি সংক্রান্ত সরকারি রাজস্ব। যখন জমিদারী আমল ছিল তখন সেই জমিদারি আমলে জমিদারগণ জমির খাজনা আদায় করতেন যা এখন সরকারিভাবে আদায় করা হয়। দেশের প্রতিটি জমির মালিককেই জমির খাজনা পরিশোধ করতে হয়। একটি নির্দিষ্ট জমির ভোগ দখলের অধিকার, মালিকানা সুবিধা পাওয়ার জন্য দেশের সরকারকে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর পরিশোধ করতে হয়।
ভূমি উন্নয়ন কর দেশের ভূমি সংক্রান্ত গবেষণা, উন্নয়ন ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি জমির ভোগ দখলের অধিকার পাওয়ার জন্য জমির খাজনা পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক।
জমির খাজনা দিতে কি কি কাগজপত্র লাগে
পূর্বে খাজনা পরিশোধ করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে ভূমি অফিসে যেতে হতো। বর্তমানে সেই ডকুমেন্টস গুলো থাকলে ঘরে বসেই অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম অনুযায়ী ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে পারবেন। সেগুলো হলো-
- নির্দিষ্ট জমির খতিয়ান নম্বর
- জমির দাগ নম্বরের তথ্য
- সর্বশেষ পর্চা (বি আর এস)
- যার নামে পর্চা আছে তার জাতীয় পরিচয়পত্র
- অনলাইন সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট করতে ও ভেরিফিকেশনের জন্য মোবাইল নাম্বার দিন।
- দেখুনঃ অনলাইনে জমির খতিয়ান অনুসন্ধান করার নিয়ম
- জমির খাজনা কিভাবে দিব
বর্তমানে অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম অনুযায়ী দুইটি উপায়ে পেমেন্ট পরিশোধ করা যায়।
ভূমি উন্নয়ন কর ওয়েবসাইট https://ldtax.gov.bd/ -তে নাগরিক কর্নার অপশন থেকে অথবা সরাসরি জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে পেমেন্ট করুন অপশন থেকেও তাৎক্ষণিকভাবে খাজনা পরিশোধ করতে পারবেন।
ভূমি উন্নয়ন কর মোবাইল অ্যাপস এর মাধ্যমে।
এখানে, উভয় মাধ্যমে জমির খাজনা পরিশোধ করার নিয়ম প্রায় একই হলেও প্রথমবার জমির খাজনা পরিশোধ করার ক্ষেত্রে মোবাইল এপস এর মাধ্যমে খাজনা দেওয়া অধিক সুবিধাজনক। তবে আপনি চাইলে ওয়েবসাইটে জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করেও খুব সহজেই জমির খাজনা পেমেন্ট পরিশোধ করতে পারেন।
অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম
অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার জন্য ভূমি উন্নয়ন করে ওয়েবসাইটে ভিজিট করে ‘পেমেন্ট করুন’ অপশনে প্রবেশ করে জমির ঠিকানা দিয়ে এনআইডি যাচাই করে, খতিয়ানের নির্ধারিত পরিমান খাজনা দেখতে পাবেন। তারপর ‘অনলাইন পেমেন্ট’ অপশনে ক্লিক করে যে কোন মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা মাধ্যমে কোড ভেরিফাই করে পেমেন্ট করতে পারবেন।
জমির খাজনা যদি অনলাইনে দিতে চান তাহলে নিচের ছবিসহ দেখানো ধাপগুলো অনুসরণ করুন-
ধাপ ১: ভূমি উন্নয়ন কর ওয়েবসাইটে নিবন্ধন
বাংলাদেশ ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভূমি সম্পর্কিত সরকারি ওয়েবসাইটের https://ldtax.gov.bd/- এই লিংকে ভিজিট করে ভূমি উন্নয়ন কর সাইটে প্রবেশ করুন। এবার, ওয়েবসাইট যাবতীয় সেভাবে নাগরিক কর্নার অপশন থেকে মোবাইল নাম্বার, জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্ম তারিখ দিয়ে রেজিস্টার করে নিন। এবং আপনার প্রোফাইল ১০০% নিশ্চিত করে নিন।
ধাপ ২: পেমেন্ট করুন অপশনে যান
নাগরিক কর্নারে রেজিস্টার করে ধারাবাহিকভাবে খতিয়ান ভেরিফাই করে খাজনা পরিশোধ করতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম অনুযায়ী চার দিন সময় লাগতে পারে। তাই ‘সরাসরি জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে পেমেন্ট করুন’ অপশনে ক্লিক করুন।
অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম
ধাপ ৩: জমির হোল্ডিং অনুসন্ধান
আপনার মূল্যবান জমিটি ভূমি উন্নয়ন কর ওয়েবসাইটে অনুসন্ধান করতে ধারাবাহিকভাবে জমির অবস্থান অনুযায়ী-
- বিভাগ,
- জেলা,
- উপজেলা,
- মৌজা, ও
- হোল্ডিং নম্বর দিন।
সর্বশেষ, অনুসন্ধান বাটনে ক্লিক করুন।
আপনার দেওয়া সকল তথ্য সঠিক হলে জমির মালিকের নাম ও সর্বশেষ কর পরিশোধের সাল দেখতে পাবেন। পাশে থাকা এন.আই.ডি. যাচাই অপশনে ক্লিক করে পরবর্তী পেইজে যান।
অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম
ধাপ ৪: ই-পেমেন্ট করতে এন.আই.ডি যাচাই
এন.আই.ডি. যাচাই করতে কর প্রদানকারীর তথ্যে আপনার-
- একটি সচল মোবাইল নাম্বার,
- জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার,
- জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী জন্ম তারিখ লিখুন।
এবার, ভেরিফাই করতে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন।
অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম
ধাপ ৫: জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য
অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম অনুসরণ করলে এই ধাপে, আপনার দেওয়া জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বার ও জন্ম তারিখ সঠিক হলে এই পেইজে উক্ত জাতীয় পরিচয়পত্রে কার নামে আছে, পিতার নাম কি ও মাতার নাম কি প্রভৃতি দেখতে পাবেন। এবার, অনলাইন পেমেন্টের জন্য পরবর্তী লেখাতে ক্লিক করুন।
অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম
ধাপ ৬: হোল্ডিং ও ভূমি উন্নয়ন করের তথ্য
এই পেইজে, হোল্ডিং নং অনুযায়ী আপনার-
- জমির অবস্থান,
- দাগ নাম্বারের তথ্য,
- সর্বশেষ কত সালে কর পরিশোধ করা হয়েছিল,
- জমির পরিমান,
- জমির ধরন (নালা, ভিটা, নাল, বোরো ইত্যাদি)
- ভূমিভেদে খাজনার পরিমাণ,
- মোট দাবি কত,
- বকেয়া দাবি,
- হাল দাবি,
- সর্বমোট কত টাকা আপনাকে খাজনা বাবদ পরিশোধ করতে হবে ইত্যাদি বিস্তারিত তথ্য দেখতে পাবেন।
অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম
এই পর্যায়ে এসে অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে অনলাইন পেমেন্ট অপশনে ক্লিক করে পরের পেইজে যান।
ধাপ ৭: পেমেন্ট অপশন সিলেক্ট
অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম অনুযায়ী এই ধাপে, বাংলাদেশের সহজলভ্য মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থার অপশন গুলো এবং ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড এর পেমেন্ট অপশন দেখতে পাবেন। এখানে আপনার পছন্দের পেমেন্ট অপশনটির উপরের সার্কেলে ক্লিক করে ‘ই-পেমেন্ট করুন’ বাটনে ক্লিক করে পরবর্তী পেজে যান।
অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম
ধাপ ৮: পেমেন্ট করুন
আপনি যদি বিকাশের মাধ্যমে ভূমি উন্নয়ন কর দিতে চান তাহলে পেমেন্ট অপশনে কত টাকা পেমেন্ট করতে হবে তা দেখতে পাবেন, (যেমন- ৳ 80)। এবার, আপনার বিকাশ একাউন্ট নাম্বারটি লিখে কনফার্ম (Confirm) বাটনে ক্লিক করুন।
অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম
এবার আপনার বিকাশ একাউন্ট নাম্বারটিতে অর্থাত আপনার সিম সংশ্লিষ্ট মোবাইলটিতে একটি ওটিপি কোড যাবে। কোড ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করে কনফার্ম করলেই জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম সম্পন্ন হবে।
উপরে দেখানো নিয়ম অনুসরণ করে খুব সহজেই আপনার মোবাইল ব্যবহার করে অনলাইনে জমির খাজনা পরিশোধ করতে পারবে নিজে নিজেই।
জমির খাজনা দেওয়ার রশিদ ডাউনলোড
জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম যথাযথভাবে পালন করে খাজনা পরিশোধ করার পর একটি দাখিলা প্রদান করা হয়। দাখিলা আপডেট হতে কিছুটা সময় লেগে যেতে পারে। তারপর পূর্বে রেজিস্টার করা মোবাইল নম্বার ও পাসওয়ার্ড দিয়ে নাগরিক কর্নারে লগইন করুন। এবার ড্যাশবোর্ডের মেন্যুবার থেকে দাখিলা অপশনে প্রবেশ করে আপনার জমির খাজনা রশিদ আপডেট হয়েছে কিনা দেখতে পাবেন।
অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম
খাজনা পরিশোধের দাখিলা আপডেট হলে ডাউনলোড পিডিএফ অপশন দেখতে পাবেন। সেখান থেকে খাজনা রশিদ ডাউনলোড করে পরবর্তীতে কোন প্রিন্টারের সাহায্যে প্রিন্ট করে আপনার জমির মালিকানার প্রমাণপত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন।
খাজনা রশিদের নমুনা-
জমির খাজনা
উপরে দেখানো অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম অনুসরণ করে প্রতারণার হাত থেকে বেঁচে নির্দিষ্ট পরিমাণ খাজনা পরিশোধ করতে পারবেন।
জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কিত সচরাচর জিজ্ঞেসিত প্রশ্নোত্তর (FAQ’s)
বসত বাড়ির খাজনা কত?
৫-১০ একর জমি পর্যন্ত প্রথম ৫ একর জমির জন্য ৫১ টাকা এবং পরবর্তী শতক প্রতি ৩৬ পয়সা। ১০-১৫ একর জমি পর্যন্ত ১০ একর জমির জন্য ২৩১ টাকা এবং পরবর্তী শতক প্রতি ৬০ পয়সা। ১৫-২৫ একর জমি পর্যন্ত ১৫ একরের জন্য ৫৩১ টাকা এবং পরবর্তী শতক প্রতি ৬০ পয়সা খাজনা পরিশোধ করতে হয়।
জমির খাজনা না দিলে কি হয়?
বাংলা সাল অনুযায়ী জমির খাজনা আদায় করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ ভূমি উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী অনলাইনে জমির খাজনা পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জমির খাজনা পরিশোধ না করলে, উক্ত জমির মালিকের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা হতে পারে। খাজনা এক বছর বাঁকা থাকলে বাংলা বছরের প্রথম তারিখ থেকে বকে বলে গণ্য হবে এবং ৬. ২৫ শতাংশ হারে শোধ যোগ হবে।
Leave a Comment